লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের ক্ষোভ উগরে দিতে রাহুল গাঁধী ও অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ সমস্ত বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের এক মঞ্চে আনতে চাইছে কৃষক সংগঠনগুলি।
রামমন্দিরের বদলে কৃষকদের সমস্যাকেই লোকসভা ভোটের প্রধান বিষয় করে তুলতে কৃষক সংগঠনের নেতারা তিরিশ বছর আগে মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের আন্দোলনের মতো ফের দিল্লির বোট ক্লাবের দখল নিতে চান। ২৯ ও ৩০ নভেম্বর দিল্লিতে ২১০টি কৃষক সংগঠনের মঞ্চ ‘সর্বভারতীয় কৃষক সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি’-র সমাবেশ। সেই সমাবেশের রাজনৈতিক অধিবেশনে রাহুল গাঁধী, অরবিন্দ কেজরীবাল, অখিলেশ যাদব-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ডাকা হচ্ছে। সমিতিতে বাম কৃষক সংগঠন থাকলেও, বাদ যাচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেসও। বিজেপিকে বাদ দিলেও শিবসেনা, অকালি দলের মতো এনডিএ-র শরিক দলের নেতাদেরও ডাকা হচ্ছে। লক্ষ্য, তাদের লোকসভা ভোটের ইস্তাহারে কৃষকদের দাবিপূরণের প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেওয়া।
আর একটি কৌশলও নিচ্ছেন কৃষক নেতারা। প্রচারের আলো যাতে কৃষক আন্দোলনের উপরে থাকে, তা নিশ্চিত করতে ২৯ নভেম্বর রাতে রামলীলা ময়দানে কমল হাসনের মতো রাজনীতির জগতে পা বাড়ানো তারকাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
বিজেপি তথা আরএসএস ক্রমশ রামমন্দিরকেই লোকসভা ভোটের প্রধান বিষয় করে তুলতে চাইছে। কৃষকদের ক্ষোভ, চাকরির অভাবের মতো মোদী সরকারের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতেই বিজেপি-আরএসএস ফের রামমন্দির ঘিরে আবেগকে উস্কে দিচ্ছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। কিন্তু কৃষকদের সমস্যাই যাতে লোকসভা ভোটের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করতে ফের মাঠে নামছে কৃষক সংগঠনগুলি।
‘সর্বভারতীয় কৃষক সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি’-র মূল দাবি ছিল, কৃষকদের ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি ও ফসলের ন্যায্য দাম। সে জন্য আইন করতে দু’টি বিলের খসড়াও তৈরি হয়েছে। বেসরকারি বিল হিসেবে তা সংসদে পেশও করেছেন সিপিএম সাংসদেরা। এ বার ওই দু’টি বিল পাশে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবিতেই দিল্লিতে জড়ো হচ্ছে সব সংগঠন।
সমিতির নেতা ও সিপিএমের কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘২৯ নভেম্বর গুরুগ্রাম, সোনীপত, গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদ থেকে কৃষকেরা মিছিল করে দিল্লির রামলীলা ময়দানে জড়ো হবেন। সেদিনই রাতে কৃষকদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমল হাসন-সহ সিনেমা ও গানের জগতের শিল্পীরা আসবেন। পরদিন সকালে হবে সংসদ অভিযান।’’
এই সংসদ অভিযানের সময়েই দিল্লির ক্ষমতার মসনদ নর্থ ব্লক-সাউথ ব্লকের সামনের বিজয় চক থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত বোট ক্লাব এলাকার দখল নিতে চাইছেন কৃষক নেতারা। ঠিক যেমন ১৯৮৮ সালে কৃষক নেতা মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েত বোট ক্লাব দখল করে রাজধানীতে অচলাবস্থা তৈরি করেছিলেন।
এত দিন বোট ক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, বোট ক্লাবে সমাবেশে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা যাবে না। দিল্লি পুলিশ আবেদন খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র দেবে। হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা বোট ক্লাবে সমাবেশের আবেদন করেছি। অনুমতি এখনও মেলেনি। বোট ক্লাবের ছাড়পত্র না মিললে সংসদ মার্গেই সমাবেশ হবে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘দু’বছর আগেও কৃষকদের সঙ্কট নিয়ে জাতীয় স্তরে কোনও আলোচনা ছিল না। মহারাষ্ট্রে কৃষকদের লং মার্চের মতো একের পর এক আন্দোলন ছবিটা পাল্টেছে। এ বার লোকসভা ভোটেও যাতে কৃষকদের সমস্যাই প্রধান বিষয় হয়ে থাকে, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy