বাজির পাহাড়। —ফাইল চিত্র।
ছটের উদ্যাপন এখনও শেষ হয়নি। তার আগেই শহরের বিভিন্ন থানায় তৈরি হয়েছে বারুদের স্তূপ। কলকাতা পুলিশ সূত্রে এমনটাই খবর। কিন্তু বাজির পাহাড় জমতে থাকলেও সে সব নিষ্ক্রিয় করা হবে কবে, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাচ্ছে না বলেই লালবাজার সূত্রের দাবি। কারণ, পুলিশ সময় স্থির করলেও সহমত হতে পারছে না দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। আবার পর্ষদ চাইলেও নতুন ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী বাজি বাজেয়াপ্ত করার নিয়ম মানতে গিয়ে যে ভাবে খুশি বাজি নিষ্ক্রিয় করে ফেলাও সম্ভব হচ্ছে না। এই টালবাহানাতেই আপাতত বিপদ মাথায় নিয়ে চলছে সব থানা। যা নিয়ে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘মজুত বাজি থেকে কী বিপদ ঘটতে পারে, অতীতে তা দেখা গিয়েছে। ঝুঁকি না নিয়ে তাই ছটপুজো মিটলেই আগে উদ্ধার হওয়া বাজি নিষ্ক্রিয় করা হবে।’’ কিন্তু এর পরেও প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশি জিম্মায় থাকা বাজি নিয়েই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে বিক্রি না হওয়া, ব্যবসায়ীদের জিম্মায় থাকা বাজির কী হবে? সে সব কি তবে জনবসতি এলাকার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে রেখে দেওয়া হবে?
মহেশতলা, বজবজ, নোদাখালির ‘বাজি মহল্লা’র পাশাপাশি মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের মতো একাধিক জায়গায় বাজি বিস্ফোরণে মৃত্যুর একাধিক ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক অতীতে। মজুত বাজি থেকে কী বিপদ হতে পারে, তা-ও দেখা গিয়েছে নৈহাটি, চুঁচুড়ায়। ছাদ ধসে পড়ে, চাল উড়ে গিয়ে এবং জানলার কাচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেখানকার প্রায় ৫০০টি বাড়ি। জানা গিয়েছিল, উদ্ধার হওয়া বাজি এবং বাজি তৈরির মশলা এক জায়গায় রেখে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছিল পুলিশ। অসাবধানতায় ঘটে যায় বিপত্তি। তবে শুধু ওই এলাকাতেই নয়, একাধিক থানাতেও উদ্ধার হওয়া বাজি থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। উত্তর কলকাতার একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার বললেন, ‘‘থানার মালখানায় বাজি রাখা বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। উৎসবের মরসুমের শুরুতে সরকারি সেফ হাউসে বাজি উদ্ধার করে রাখা যাবে বলে কথা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ন্যায় সংহিতা মানতে গিয়ে সেই পথেও সমস্যা হচ্ছে। নতুন আইনে সমস্ত কিছুর ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখার কথা বলা আছে। তা মানতে হলে উদ্ধার হওয়া জিনিস যে ভাবে খুশি রাখা যায় না।’’ দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আবার বললেন, ‘‘নতুন আইন মেনে কবে এ সব নিষ্ক্রিয় করা হবে, বোঝাই যাচ্ছে না।’’
কিন্তু দ্রুত এই বাজি নিষ্ক্রিয় করা যাচ্ছে না কেন?
লালবাজার সূত্রের দাবি, চলতি বছরে শুধুমাত্র কালীপুজোর দিনেই শহর থেকে প্রায় ১২০০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হয়েছে। কালীপুজোর পরের দু’দিনে উদ্ধার হয়েছে আরও প্রায় ৩০০ কিলোগ্রাম বাজি। পুজোর সপ্তাহ দুয়েক আগে
থেকে ধরপাকড় চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় সাত হাজার কেজি বাজি। সব মিলিয়ে ১০ হাজার কেজি বাজি ছটপুজো শেষ হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বাজি হলদিয়ার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’-এর ভাগাড়ে নিয়ে যেতে হয়। সেখানে জমিতে প্লাস্টিকের ফাঁকা জলাধারের মধ্যে লোহার পাটাতন পাতা হয়। পাটাতনের উপরে ইট, সুরকি, বালির মিশ্রণ ঢেলে তার উপরে রাখা হয় বাজি। এর উপরে আর এক দফায় ওই মিশ্রণ ঢেলে জলাধারের মুখ আটকে বসিয়ে দেওয়া হয় মাটির গভীরে। কয়েক বছর পরে বোল্ডারের আকার ধারণ করে এগুলি। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের দাবি, এই বিপুল পরিমাণ বাজি নিয়ে যাওয়ার জন্য যে সময় প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত দিন ধার্য করা হবে।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা বাজির কী হবে? পর্ষদের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ জন্য ‘ম্যাগাজ়িন’ ভাড়া পাওয়া যায়। বিষয়টি হল, ফাঁকা জমিতে কয়েকশো মিটার দূরে দূরে ঘর বানানো হয়। যার মধ্যে তাপ নিরোধক পদ্ধতিতে বাজি রাখা থাকে। সেখানে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালানো নিষিদ্ধ, যখন-তখন প্রবেশ করাও যায় না। এখানে বাজি রাখতে বছরে কার্টন-পিছু ভাড়া গুনতে হয় ৭০০-৮০০ টাকা! কিন্তু যেখানে বেআইনি বাজির কারবারই বন্ধ করানো যায় না, সেখানে কি এমন বাজির ব্যবসায়ীদের টাকা খরচ করিয়ে ম্যাগাজ়িনে বাজি রাখানো যাবে? স্পষ্ট উত্তর মেলে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy