হুয়ান পেদ্রো ফ্রাঙ্কো
এখন স্বপ্ন শুধুই নিজের পায়ে হাঁটার। তা ছাড়া আর কিছুই চান না ৩৩ বছরের হুয়ান পেদ্রো ফ্রাঙ্কো।
বিশ্বের সব চেয়ে স্থূলকায় ব্যক্তি হিসেবে ২০১৬ সালে গিনেস বুকে নাম তুলেছিলেন উত্তর মেক্সিকোর বাসিন্দা হুয়ান। তখন তাঁর ওজন ৫৯৫ কিলোগ্রাম। সে সময় সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী ছিলেন হুয়ান। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিস ছাড়াও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওজন না কমালে বাঁচানো মুশকিল হবে হুয়ানকে। তখনই ডবল গ্যাসট্রিক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।
সেই লড়াইয়ের শুরু। মায়ের সঙ্গে হুয়ান চলে আসেন গোয়াদালাহারার আগুয়াকালিয়ানতেস শহরে। সেখানেই বেরিয়াট্রিক সার্জন জোস আন্তনিও কাসতেনেডার ক্লিনিকে হুয়ানের চিকিৎসা শুরু হয়। হাইপোথাইরয়েডের রোগী হুয়ানকে ছ’মাস ডায়েটে রাখা হয়। পাশাপাশি, শরীরচর্চাও করতেন হুয়ান। ২০১৭ সালের মে মাসে তাঁর প্রথম অস্ত্রোপচারটি হয়। আর তাতে প্রায় ৮০ শতাংশ ওজন কমে তাঁর। ছ’মাস পরে ফের আরও একটি অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর। যার মাধ্যমে তাঁর পাকস্থলীর আকার ছোট করে দেন চিকিৎসকেরা। ভাগ করে দেওয়া হয় অন্ত্রটিও। ফলও মিলেছে হাতে হাতে। এখন ৩৩ বছরের হুয়ানের ওজন ৩৪৫ কিলোগ্রাম।
তবে এখনও হুয়ানের চব্বিশটা ঘণ্টাই কাটে বিছানায়, নাকে অক্সিজেনের টিউব গুঁজে। সূর্যের আলোর অভাবে তাঁর ত্বকের রং ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। তবে বিছানায় শুয়েও কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেন হুয়ান। কখনও রুমাল বুনে তো কখনও মিষ্টি বানিয়ে, সংসারে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। তবে এখন বেশির ভাগ সময়টাই শরীরচর্চা করেন হুয়ান। কখনও ওজন তুলছেন, তো কখনও হাত সাইকেল নিয়ে প্যাডেল করছেন।
এখনও পর্যন্ত কোনও মতে ওয়াকারে উঠে প্রথম পা ফেলতে সক্ষম হয়েছেন হুয়ান। তবে এখনও তাঁর জীবনের সব চেয়ে বড় স্বপ্ন, ফের নিজের পায়ে হেঁটে চলে বেড়াবেন। আর তার জন্য সমস্ত কষ্ট সহ্য করতে রাজি তিনি।
আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে হুয়ানের আরও কিছুটা ওজন কমবে বলেই আশাবাদী চিকিৎসক কাসতেনেডার। বললেন, ‘‘আমি খুশি যে সমস্তটাই পরিকল্পনামাফিক এগোচ্ছে। প্রতিদিন আরও বেশি করে চেষ্টা করছেন হুয়ান, নিজের জীবনটাকে সঠিক জায়গায় ফেরাতে।’’
পারিবারিক সূত্রের খবর, বরাবরই স্বাস্থ্যবান ছিলেন হুয়ান। তবে ১৭ বছর বয়সে একটি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। আর তার পর থেকেই তরতরিয়ে বাড়তে থাকে তাঁর ওজন। হুয়ানের চিকিৎসক দল জানালেন, এখনও পায়ে লিম্ফোদেমার সমস্যা রয়েছে তাঁর। এখনও পর্যন্ত তাঁদের কাছে হুয়ানের শারীরিক পরিস্থিতি বেশ জটিল। তাঁদের দাবি, যত দিন না হুয়ানের বিপদ পুরোপুরি কাটছে, তত দিন পর্যন্ত হুয়ানের উপরে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) অনুযায়ী, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানের অন্তত ৫৮ শতাংশ মানুষই অতিরিক্ত মেদের সমস্যায় ভোগেন। মেক্সিকো অন্যতম দেশ, যেখানে এই সমস্যা প্রবল। বাহামাস ও চিলেও সেই তালিকায় উপরের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy