Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
US Presidential Election 2024

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে কি ভারতের লাভ হবে? কমলা বিজয়ী হলে অসুবিধার শঙ্কা আছে কি?

২০১৯-এর ‘হাউডি মোদী’ এবং ২০২০-র ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর পর প্রকাশ্যে এসেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমেরিকার তৎকালীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মসৃণ সমন্বয়ের অঙ্ক।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৩৬
Share: Save:

হাতে হাত ধরে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা দু’জনে। বক্তৃতায় ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন পরস্পরকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মৈত্রীর এমনই ‘নির্দশন’ দেখা গিয়েছিল আমেরিকার ২০২০ সালের ভোটের প্রচারে।

২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে টেক্সাসের হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ সভা। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী ভারতীয়ের সামনে কূটনীতির বেড়া টপকে ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিয়েছিলেন মোদী। বলেছিলেন, ‘‘ট্রাম্পের নেতৃত্বগুণ, আমেরিকাকে নিয়ে ওঁর আবেগ, দেশের নাগরিকদের জন্য ওঁর উদ্বেগ এবং আমেরিকাকে ফের মহান করে তোলার জন্য ওঁর মনের তাগিদ আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’’ ২০২০-স অগস্টে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচন চেয়ে ট্রাম্পের ‘আরও চার বছর’ (ফোর ইয়ার মোর) প্রচারের সূচনায় ‘ভিডিয়ো ক্যাম্পেনিং’-এ তুলে ধরা হয়েছিল ট্রাম্প-মোদীর সেই যৌথ জনসভার নানা ক্লিপিংস।

তার আগেই ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে দু’দিনের ভারত সফরে এসে গুজরাতের মোতেরায় মোদীর নামাঙ্কিত পুনর্নির্মিত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন ট্রাম্প এবং তৎকালীন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতে মোদী দাবি করেছিলেন, তিনি এবং ট্রাম্প মিলে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন। কিন্তু সে ‘স্বপ্ন’ পূরণ হয়নি। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ের পরে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন কূটনৈতিক সম্পর্কে ব্যক্তিগত উষ্ণতার ছোঁয়াও দেখা যায়নি। এ বারের ভোটে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা এখনও ‘পরীক্ষিত’ নন। তাই ভারত-আমেরিকা সমীকরণ নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা।

গত চার বছরে ইউক্রেন যুদ্ধের আবহের পশ্চিমি দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি, শেখ হাসিনার জমানায় বাংলাদেশের ভোটে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ভারতের নিশ্চুপ থাকা এমনকি, আমেরিকার মাটিতে খলিস্তানপন্থী জঙ্গিনেতা গুরুপতবন্ত সিংহ পন্নুনকে খুনের চেষ্টায় অভিযোগে মোদী সরকারকে নিশানা করেছে বাইডেন প্রশাসন। পন্নুন-কাণ্ডে সমন গিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের কাছে। এমনকি, চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করার অভিযোগে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কবলে ১৯ ভারতীয় সংস্থা ও ব্যক্তি।

ট্রাম্পের জমানায় প্রকাশ্যে একাধিক বার রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবি সমর্থন করেছে ওয়াশিংটন। কিন্তু গত চার বছরে সেই ‘তৎপরতা’ চোখে পড়েনি বলে সাউথ ব্লকের একাংশ মনে করছে। আমেরিকায় প্রায় সওয়া ১ কোটি প্রবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বড় অংশই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক। তাঁদের মধ্যে ভোটার প্রায় ৫২ লক্ষ। এ বারের ভোটে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ফলে ফলে সেই সমর্থন আরও একচেটিয়া হবে বলে ডেমোক্র্যাট শিবিরের । কিন্তু প্রবাসী ভারতীয় সমাজে মোদীর জনপ্রিয়তা এখনও প্রবল। এ বারের ভোটের প্রচারপর্বে তাই মোদী একটিও কথা না বললেন, ট্রাম্প একাধিক বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর ‘বন্ধু’ বলেছেন। নয়াদিল্লির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা বাড়ানোর সওয়াল করেছেন।

অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে ট্রাম্প আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসে প্রবেশের ছাড়পত্র পেলে সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও ভারতের গুরুত্ব বাড়বে। ট্রাম্প ঘোষিত ‘চিনবিরোধী’ হওয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে কূটনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে ভারত। তা ছাড়া বাইডেনের তুলনায় ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক অনেক ভাল। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে মস্কোর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য বাইডেন সরকার এবং ইউরোপীয় দেশগুলির বারে বারে চাপ দিয়েছে ভারতকে। ট্রাম্প জিতলে তা হওয়ার সম্ভাবনা কম।

তবে এর পাশাপাশি রয়েছে অন্য ‘অঙ্ক’ও। আমেরিকার ভোটে ভারতীয়দের অন্যতম একটি চিন্তার বিষয় অভিবাসন নীতি নিয়ে সে দেশের পরবর্তী প্রশাসনের অবস্থান। বিশেষ করে এইচ-১বি ভিসা নিয়ে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কোন পথে হাঁটবেন তা ভাবাচ্ছে ভারতীয়দের। কোনও আমেরিকান সংস্থায় আমেরিকার বাইরের কোনও কর্মীর এই ভিসা প্রয়োজন হয়। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের জিতলে ‘আমেরিকার নাগরিকদের স্বার্থরক্ষা’র যুক্তি দিয়ে অভিবাসন বিধিতে আরও কড়াকড়ি আনতে পারে। তাতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের কর্মীরা ছাড় পেলেও সমস্যায় পড়তে পারেন অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত স্বল্পপ্রশিক্ষিত বা অপ্রশিক্ষিত কর্মীরা। এ বিষয়ে তুলনায় উদার ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসন। ট্রাম্পের দলের জমানায় গড়ে ৯০.৭ শতাংশ এইচ১-বি ভিসায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাইডেনের দলের আমলে সেই গড় ৯৪.৬ শতাংশ। সেই অঙ্কও কি রয়েছে মোদী সরকারের মাথায়?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE