দীর্ঘ দিন পর গত শনিবার তিনি সামনে থেকে পরিচালনা করেছিলেন দলীয় নেতৃত্বের বৈঠক। আর আগামী রবিবার তাঁর নাম সামনে রেখে দলীয় সমর্থকদের একাংশ ‘রণকৌশল বৈঠক’ করতে চলেছেন দক্ষিণ কলকাতায়। কলকাতার দক্ষিণাংশ ছেয়ে গিয়েছে ‘অধিনায়ক অভিষেক’ লেখা হলুদ পতাকায়। পতাকা টাঙিয়েছে ‘ফ্যাম ফর টিএমসি’ নামের তৃণমূল সমর্থকদের একটি গোষ্ঠী। শুধু পতাকা নয়, বিভিন্ন এলাকায় হোর্ডিং টাঙিয়ে জানানো হয়েছে, আগামী রবিবার গাঙ্গুলিবাগানের কলতান কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠিত হবে তাদের ‘রণকৌশল’ বৈঠক। কেন সেই বৈঠক? কিসের রণকৌশল? সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈঠক হবে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে সমাজমাধ্যমে প্রচারের রূপরেখা ঠিক করতে। সেই হোর্ডিংয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ছবি দেওয়া হয়েছে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
সমাজমাধ্যমে তৃণমূল সমর্থকদের বিভিন্ন ‘গ্রুপ’ রয়েছে। তাদের অন্যতম ‘ফ্যাম’। প্রতি বছর অভিষেকের জন্মদিনে তাঁর কালীঘাটের বাড়ির সামনে যে জনতা ভিড় করে, সেখানেও অনেকের হাতে থাকে ‘ফ্যাম’-এর হলুদ পতাকা। তৃণমূলের দলীয় কাঠামোয় সমাজমাধ্যমের প্রচারের জন্য ‘আইটি সেল’ রয়েছে। যার মাথায় রয়েছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। পৃথক ভাবে সমর্থকদের এ হেন রণকৌশল-বৈঠক তা হলে কেন? দেবাংশুর জবাব, ‘‘এই ধরনের অনেক গ্রুপ বা কমিউনিটি রয়েছে। তারা নিজেদের মতো করে প্রচার করে। আমাদের কাজ এই সব কমিউনিটির মধ্যে দিয়ে দলের ভাষ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।’’ দেবাংশু জানিয়েছেন, রবিবার তাঁরও আমন্ত্রণ রয়েছে। তবে তাঁর পৃথক কর্মসূচি থাকতে পারে। তাই তাঁর যাওয়া নিশ্চিত নয়।
আরও পড়ুন:
গত শনিবার ভোটার তালিকা নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন অভিষেক। যে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাপতি থেকে দলের সর্ব স্তরের প্রায় সাড়ে চার হাজার নেতা-নেত্রী। সেই বৈঠকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, মমতা অভিষেককে জায়গা ছেড়েছেন। যার ফলে অভিষেকও নতুন করে সক্রিয় হয়েছেন। এর পর, গত বৃহস্পতিবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মমতা এ-ও জানিয়েছেন, তাঁর লন্ডন সফরের সময় দলের কাজ দেখবেন সুব্রত বক্সী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক সেই জায়গা পাওয়ার পরেই রাস্তায় নেমে নতুন করে উদ্যম প্রদর্শন করল তাঁকে ‘অধিনায়ক’ অভিহিত করা সমর্থকগোষ্ঠী। তিনি অবশ্য ওই বৈঠকে থাকছেন না। শুক্রবার বিকেলে কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়েছেন অভিষেক।
তৃণমূলের অনেকে অবশ্য রবিবারের বৈঠককে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তাঁদের মতে, সমাজমাধ্যমের কাজ সংক্রান্ত রণকৌশল-বৈঠক উত্তর কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূলের প্রতিযোগিতা ফল। তাঁদের কথায়, সম্প্রতি তৃণমূলের পৃথক একটি সমর্থক গোষ্ঠী উত্তর কলকাতায় একটি আলোচনাসভা করেছিল। তার পরেই দক্ষিণ কলকাতায় হতে চলেছে রণকৌশল বৈঠক। এর নেপথ্যে দক্ষিণ কলকাতার এক কাউন্সিলরের ভূমিকা রয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এক নেতার কথায়, ‘‘ওই কাউন্সিলর নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতশকাচের নীচে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ক্যামাক স্ট্রিটের সখ্য নেই। এ সবের নেপথ্যে থেকে তিনি ঘনিষ্ঠতা তৈরির চেষ্টা করছেন।’’