বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে আক্রান্ত মহিলা। শনিবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বাড়িতে ঢুকে পাঁচ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার গভীর রাতে বীরভূমের ইলামবাজার পঞ্চায়েতের সায়েরপাড়া গ্রামের ঘটনা। শনিবার দুপুরেই আক্রান্ত পরিবার ইলামবাজার থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। ওই আদিবাসী পরিবারের দাবি, বিজেপি করার ‘অপরাধে’ই এই হামলা। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এ দিকে, জখম মহিলা বর্তমানে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একই ঘটনায় মহিলার পরিবারের আরও অনেক সদস্যও জখম হয়েছেন। তাঁরা ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে, এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। পরে এসএমএস-এ তিনি জানান, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’জন অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। তবে, পুলিশ সুপার তাদের নাম জানাননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার গভীর রাতে হামলা হয় গ্রামের বিজেপি সমর্থক চুরকু কিস্কুর বাড়িতে। জনা কয়েক দুষ্কৃতী আচমকা তাঁর বাড়িতে ঢুকে লাঠি, রড, শাবল নিয়ে পরিবারের সদস্যদের উপড়ে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। চুরকু কিস্কুর দাবি, ‘‘শুক্রবার রাতে আমি দেরি করে বাড়ি ফিরছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আমার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দুষ্কৃতীরা মারধর করেছে। পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ছাড়েনি।’’ রাতেই সবাইকে ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্ত্রীকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চুরকু কিস্কুর অভিযোগ, ‘‘এলাকায় বিজেপি করি। সেই আক্রোশ থেকেই ইলামবাজার পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সুকুমার সরেন এবং তাঁর সঙ্গী রবি মাড্ডির নির্দেশে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা এই হামলা করেছে।’’
এ দিন বিজেপি-র জেলা কমিটির সদস্য তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহ বলেন, ‘‘চুরকু-সহ ওই এলাকায় আমাদের দলের বহু কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। সেটা তৃণমূলের নেতারা মেনে নিতে পারছে না। তাই রাতের অন্ধকার পরিবারের উপরে হামলা চালিয়েছে। আক্রোশ এতটাই বেড়েছে যে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে পর্যন্ত ছাড়েনি।’’ প্রসঙ্গত, শাসকদলের বিরুদ্ধে জেলার বিজেপি কর্মী-সমর্থক পরিবারগুলির উপরে অত্যাচার চালানোর এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। কয়েক মাস আগেই ইলামবাজার ব্লকেরই অন্তর্গত পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রামের এক বিজেপি সমর্থক পরিবারের বধূর উপরে নির্মম অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীর পাশাপাশি জেলা পুলিশের নামও জড়িয়েছিল। পরিবারের দাবি, অভিযুক্তকে খুঁজতে এসে না পেয়ে ওই বধূকে তাঁর বাপের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর গাছে বেঁধে অত্যাচার চালানো হয়।
এ দিনের ঘটনার পরে পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। তারা অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছে। বিজেপি জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা বলেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছে। তাই কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল— এই বিবেচনার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে।’’ শুক্রবারের ওই ঘটনাকে যদিও পারিবারিক বিবাদ বলে দাবি করেছে তৃণমূল। দলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জাফারুল ইসলাম বলছেন, “গ্রামের দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদের জেরে এই ঘটনা। সম্পূর্ণ পারিবারিক বিবাদ। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’ দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের আবার দাবি, ‘‘বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে। তাই পারিবারিক কলহেও এখন তৃণমূল-জুজু দেখছে!” পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনার কথা উঠে আসবে বলে অনুব্রতর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy