পাশাপাশি দু’টি গাড়ি গেলে থাকে না চলাচলের জায়গা। সোনাঝুরির খোয়াই বনের হাটে যাওয়ার রাস্তা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
বেপরোয়া মাটি বোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় বুধবার প্রাণ হারান বোলপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী স্নেহা চৌধুরী। অল্পের জন্য রক্ষা পান তাঁর বান্ধবী সেঁজুতি দে। তার পরে ওই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের দাবি ওঠে। কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও হুঁশ ফেরেনি পুলিশ ও প্রশাসনের। এখনও সোনাঝুড়ি রাস্তায় লরি, ট্রাক্টরের ‘দাপট’ অব্যাহত। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকেরা। যদিও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
শান্তিনিকেতনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান সোনাঝুরির খোয়াইয়ের হাট। সারা বছরই এ হাটে ভিড় জমান দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা। বুধবার নিজের স্কুটারে বান্ধবীকে চাপিয়ে সে হাটেই বেড়াতে যাচ্ছিলেন বোলপুরের বাসিন্দা স্নেহা। সে সময়ে ওই রাস্তা ধরে উল্টো দিক থেকে আসা মাটি বোঝাই ‘বেপরোয়া’ ট্রাক্টর তাঁর স্কুটারকে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনার পরে অন্য কোনও গাড়ি না মেলায়, ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া নানুরের বিধায়ক বিধান মাঝি গাড়ি করে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনিও ওই রাস্তার উপরে বালি ও মাটি নিয়ে লরি, ট্রাক্টর চলাচল অবিলম্বে বন্ধের দাবি করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলও ওই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশ উদ্যোগী হয়নি। বন্ধ হয়নি লরি, ট্রাক্টর চলাচলও।
জেলা পুলিশের উদ্যোগে সেপ্টেম্বরে পর্যটকদের সুবিধার জন্য শান্তিনিকেতনের ডাকঘর মোড় ও সোনাঝুড়ি হাটের কাছে ট্যুরিস্ট পুলিশ গার্ড খোলা হয়েছিল। তাতে ১৮ জন পুলিশকর্মীকেও নিযুক্ত করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ওই পুলিশকর্মীরা ২৪ ঘণ্টা মোতায়েন থাকবেন। তাঁদের কাজ হবে পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দেওয়া। শান্তিনিকেতন ও বোলপুর থানা সরাসরি এই গার্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং যে কোনও প্রয়োজন হলে তৎক্ষণাৎ সমস্ত ধরনের সাহায্য করা হবে বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছিল। দুর্ঘটনায় স্নেহার মৃত্যুতে আদৌ গার্ডগুলি কাজ করছে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরে ট্যুরিস্ট পুলিশ গার্ডের কোনও কর্মীকে দেখা যায়নি। করা হয়নি যান নিয়ন্ত্রণও। বৃহস্পতিবারও সোনাঝুরিতে হাট বসেছে। পর্যটকেরা ভিড় জমিয়েছেন। এ দিনও ওই রাস্তায় সকাল থেকেই একের পর এক মাটি, বালি বোঝাই এবং ফাঁকা ট্রাক্টর যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। অভিযোগ, এই যানগুলিকে বেপরোয়া গতিতেই চলাচল করতে দেখা যায়। সেই সময়ে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশেরও দেখা মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাম সরেন, লক্ষ্মী সরেন, মিনতি হেমব্রম, শম্পা টুডুরা জানান, এর আগেও এই রাস্তার উপর একাধিক পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তার পরেও ট্রাক্টর ও গাড়ির দাপট কমেনি। পুলিশ প্রশাসনকে কোনও ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি। আমরা চাই অবিলম্বে জঙ্গলের পরিবেশ রক্ষা করার জন্য এই রাস্তায় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হোক। কলকাতা থেকে আসা পর্যটক সঞ্চিতা চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবণী ঘোষালেরা জানান, আজ হাটে এসে শুনলাম বুধবার বেপরোয়া ট্রাক্টরের ধাক্কায় এই রাস্তার উপরে এক কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এর পরেও এ দিন এই রাস্তায় যে গতিতে গাড়ি চলাচল করেছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। আমরাও চাই স্থানীয় বাসিন্দা ও আমাদের মতো পর্যটকদের স্বার্থে এই রাস্তার উপর যান নিয়ন্ত্রণ করা হোক।
যদিও পুলিশের এক কর্তা বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি ওই রাস্তার উপরে যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হবে এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে আরও বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ নিয়ে হাট কমিটির সম্পাদক তন্ময় মিত্র বলেন, “পর্যটকদের কথা ভেবে এই রাস্তার উপরে যাতে যান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে বিষয়ে আমরাও খুব তাড়াতাড়ি প্রশাসনকে একটি স্মারকলিপি দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy