Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পড়ার বোঝা কমবে কি, আবার বিতর্ক

বহু দিনের সেই বিতর্ককেই এ বার নতুন করে উস্কে দিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০২:১০
Share: Save:

বিতর্কটা বহু দিনের। সমস্যাটা শুধু এ শহরের নয়। এ দেশের বহু রাজ্যেই এ নিয়ে মাঝেমধ্যে চলতে থাকে তর্ক-বিতর্ক। বিজ্ঞাপনী ছবি থেকে ব্যান্ডের গান— কত কী যে হয়েছে এ নিয়ে! তবু স্কুলপড়ুয়াদের চাপ কমবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি বড়রা।

বহু দিনের সেই বিতর্ককেই এ বার নতুন করে উস্কে দিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সেখানকার বিচারপ্রতি এন কিরুবকরণ মন্তব্য করেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুল থেকে ‘হোমওয়ার্ক’ দেওয়া উচিত নয়। কোর্টের নির্দেশ যে সব স্কুল মানবে না, তাদের অনুমোদন বাতিল করার কথাও বলেন বিচারপতি। তাঁর মতে, সব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলকে এই নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেছেন, ওই দুই ক্লাসে ভাষা ও গণিত ছাড়া অন্য বিষয় পড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের উপরে চাপ দেওয়া উচিত নয়। কেন্দ্রীয় স্কুল শিক্ষা সচিব অনিল স্বরূপ মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতির এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এখনও কিছু বলতে চাননি। তবে এই নির্দেশের কথা জানাজানি হতে রাজ্যের পড়ুয়াদের পরিস্থিতি নিয়ে ফের নানা প্রশ্ন উঠছে।

এ রাজ্যে বিশেষ করে কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বহু দিনের। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে বহু স্কুলই প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে পড়াশোনার চাপ বাড়িয়ে দেয় বলে দাবি অনেকের। পিঠে বইয়ের ব্যাগের বোঝা বইতে গিয়ে পড়ুয়াদের ঝুঁকে পড়ার চিত্র দেখা যায় এ শহরের সব প্রান্তেই।

তবে রাজ্যের তরফে বিচারপতির ওই মন্তব্যের পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়েছে। রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের দাবি, পড়ুয়াদের চাপ কমাতে ২০১২ থেকেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের পাঠ্য বই স্কুলে রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে বাড়ির কাজ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ওই দুই ক্লাসে সহজপাঠ ছাড়া আর একটিই বই আছে। শুধু সহজপাঠ বাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘‘মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতির মতের সঙ্গে আমাদের ভাবনা পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। তাই ছ’বছর আগেই আমরা সেই পথে এগোতে শুরু করেছি।’’

তবে এ রাজ্যের বিভিন্ন সিবিএসই ও আইসিএসই স্কুলের শিক্ষকেরা বিচারপতির এই মতকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারছেন না। বহু স্কুলের কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যে পাঠ্যক্রম তৈরি হয়েছে, তা মেনেই পড়ানো হয়। বাড়িতে করার জন্য যে কাজ দিয়ে দেওয়া হয়, তা-ও হয় পড়ুয়াদের স্বার্থেই।

সিবিএসই অনুমোদিত একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল রেখা বৈশ্যের বক্তব্য, পড়ুয়াদের বাড়িতে কাজ না দিলে অভিভাবকেরা নিজেদের মতো করে চাপ সৃষ্টি করতে পারেন তাদের উপরে। তা যাতে না হয়, তাই স্কুল থেকে নিয়ম করে ‘হোমওয়ার্ক’ দেওয়া হয়। তা ছাড়া, বাড়িতে কিছুটা পড়াশোনার অভ্যাস তৈরিও প্রয়োজন বলে মত তাঁর। রেখাদেবীর বক্তব্য, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঁচটি করে বই পড়ানো হয়। তাঁর মতে, ‘‘এর ফলে পড়ুয়াদের উন্নতিই হয়।’’

আইসিএসই-র স্কুল সংগঠনের সম্পাদক নবারুণ দে-র বক্তব্য, ‘‘স্কুলে যা পড়ানো হয়, সেগুলি বাড়িতে গিয়ে এক বার দেখে নেওয়া প্রয়োজন। রোজের পড়াটা বাড়ি গিয়ে এক বার দেখে নিতে বাড়তি কোনও চাপ পড়ে না। কাউন্সিলের নির্দেশ মতোই পড়ানো হয় এই স্কুলগুলিতে।’’ শহরের একটি স্কুলের তরফে কৃষ্ণ দামানিরও বক্তব্য, ‘‘পড়ুয়াদের যেটা বাড়িতে করতে দিই, সেটা ‘হোমওয়ার্ক’ নয়। ক্লাসে যা শিখল, সেটুকু দেখে নিতে বলা হয়।’’

এ রাজ্যের শিক্ষা মহল অবশ্য মনে করছে, ধীরে ধীরে অনলাইন পঠনপাঠনের প্রতি পড়ুয়াদের ঝোঁক বাড়ানো প্রয়োজন। তা হলে অন্তত ব্যাগের বোঝা কমবে। তবে পাঠ্যক্রমের বহর না কমলে চাপমুক্ত হতে পারবে না পড়ুয়ারা। যদিও বিভিন্ন বোর্ডের দাবি, পড়ুয়াদের মনের অবস্থা ও চাপ নেওয়ার ক্ষমতা বিচার করেই পাঠ্যক্রম তৈরি হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Madras High Court Homework Heavy book
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE