অবসরের পর আরামদায়ক জীবন কাটাতে হলে পর্যাপ্ত অর্থ হাতে থাকা প্রয়োজন। এর জন্য খুব অল্প বয়স থেকে সঞ্চয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
৬০-এ পা দিলেই সাধারণত কর্মস্থল থেকে অবসর নিতে হয়। তার পর কী ভাবে চলবে সংসার? এই চিন্তা অনেক সময়েই কুরে কুরে খায় চাকরিজীবীদের। এর জন্য কর্মজীবনেই অবসরকালীন পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা জমাতে শুরু করেন তাঁরা।
০২১৮
সমীক্ষা বলছে, সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছরে পৌঁছনোর পর অবসরকালীন পরিকল্পনা শুরু করেন চাকরিজীবীরা। কিন্তু এতে বেশি টাকা রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। বিশেষজ্ঞদের কথায়, অবসর জীবন ভাল কাটাতে হলে অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করতে হবে। পাশাপাশি, সামঞ্জস্যপূর্ণ অবসরকালীন পরিকল্পনা থাকা চাই।
০৩১৮
অবসর জীবনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মুদ্রাস্ফীতি। যার জেরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টাকা জমানোর সময়ে এই দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আগামী দিনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। সে ক্ষেত্রে মুদ্রার মূল্য হ্রাস হতে পারে।
০৪১৮
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হল, চাকরিরত অবস্থায় একজনকে বার্ষিক আয়ের ১৫ শতাংশ বিভিন্ন খাতে লগ্নি করতে হবে। তবেই অবসরের পর আর্থিক ভাবে স্বাচ্ছন্দ্য পাবেন তিনি। এই ১৫ শতাংশ লগ্নির মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা থাকবে। যা বিনিয়োগকারীর নিয়োগকর্তা, অর্থাৎ যেখানে তিনি চাকরি করছেন, সেই সংস্থা দেবে।
০৫১৮
এ ব্যাপারে আর একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৬০-এর শুরুতে একজনের কাছে বেতনের ৭ থেকে ৮ গুণ টাকা থাকতে হবে। অবসরের ৩০ গুণ নিয়ম অনুযায়ী, ষাটোর্ধ্বদের আরামদায়ক জীবন কাটাতে হলে বর্তমানে তাঁদের বার্ষিক ব্যয়ের ৩০ গুণ সঞ্চয় থাকতে হবে। ফলে খুব কম বয়স থেকেই এর পরিকল্পনা শুরু করা ভাল।
০৬১৮
অবসরকালীন সঞ্চয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের তরফে রয়েছে কিছু ‘টিপ্স’। যার প্রথমেই বলা হয়েছে, টাকা জমানোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে পারিবারিক দায়বদ্ধতা বিচার করতে হবে। এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা রাখতে পারেন তাঁরা। যত তাড়াতাড়ি এটি শুরু করা যাবে, তত বেশি লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
০৭১৮
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাকরিজীবীদের বেতন বাড়তে থাকে। তখন সেই মতো খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লগ্নির পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। পাশাপাশি, উচ্চ সুদের হারে কোথায়, কী ভাবে লগ্নি করা যায়, সে দিকে নজর দিতে হবে। নইলে বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে না। অবসরের পর মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করতে এটি সাহায্য করবে।
০৮১৮
চাকরিজীবীদের অবশ্যই স্বাস্থ্য বিমা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অল্প বয়সে এতে বিনিয়োগ করলে প্রিমিয়াম বা কিস্তির অঙ্কও কম থাকবে। বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক অসুস্থতার সময়ে এই বিমা সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে।
০৯১৮
এ ছাড়া জীবন বিমার মতো প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। লগ্নিকারীর হঠাৎ মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার আর্থিক সাহায্য পাবে। প্রিমিয়াম রিটার্ন অপশনের জীবন বিমায় বিনিয়োগ করা সবচেয়ে ভাল। এতে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর মোটা টাকা হাতে পাবেন গ্রাহক।
১০১৮
এগুলি বাদ দিলে ভাল পেনশন প্রকল্পে লগ্নির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। এর জন্য পেনশন প্ল্যান ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতের মুদ্রাস্ফীতিকে মাথায় রেখে এটি সঠিক প্ল্যান বেছে নিতে সাহায্য করবে। জানা যাবে অবসরে পৌঁছে প্রতি মাসে কত টাকা করে পেনশন পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
১১১৮
অনেকেই ‘ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম’ বা এনপিএসে লগ্নি করে থাকেন। এতে বিনিয়োগের সময়ে পেনশন ও অ্যানুয়িটি প্ল্যান ভাল করে দেখে নিতে হবে। চাকরি জীবন শেষ হওয়ার পর এনপিএস থেকে প্রাপ্ত অর্থ আয়ের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। তবে প্রতিটা শর্ত ভাল ভাবে দেখে নিয়ে এতে লগ্নি করতে হবে।
১২১৮
চাকরি জীবনে অনেকেই ঋণ নিয়ে থাকেন। ফলে ঘাড়ে চাপে সুদের বোঝা। অবসরের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এটি কম করার চেষ্টা করতে হবে। নইলে ৬০ বছরের পরও ঋণের কিস্তি মেটাতে হতে পারে। যা গ্রাহককে সঞ্চিত অর্থ থেকেই দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের পরিমাণ কমার সম্ভাবনা থাকবে।
১৩১৮
অবসরের পর প্রতি মাসে কত টাকা প্রয়োজন, তার একটা হিসেব আগাম করা উচিত। বিশেষজ্ঞেরা এর একটি সহজ উপায় বলেছেন। তা হল একজনকে প্রথমেই যাতায়াত খরচ বাদ দিয়ে দৈনন্দিন কী কী আবশ্যিক ব্যয় রয়েছে তার একটা তালিকা করতে হবে। এ ভাবে মাসের আনুমানিক খরচ ঠিক করতে পারবেন তিনি।
১৪১৮
বিশেষজ্ঞদের কথায়, একজন ব্যক্তির বার্ষিক ‘ওয়ার্কিং’ আয়ের ৮০ শতাংশ তাঁর অবসরকালীন আয় হওয়া উচিত। তা হলেই মুদ্রাস্ফীতি সত্ত্বেও জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারবেন তিনি। আর তাই প্রাক্-অবসরের বেতনের প্রায় ১০ গুণ সঞ্চয়ের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
১৫১৮
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, একজন ব্যক্তির অবসর পূর্ববর্তী বার্ষিক আয়ের ৮০ শতাংশের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা উচিত। এটি আরামদায়ক অবসরকে নিশ্চিত করবে। এই ৮০ শতাংশের নিয়মটি ওই ব্যক্তির বার্ষিক আয় বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি করতে সহায়ক হবে।
১৬১৮
এর জেরে পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতি কোনও ব্যক্তির সঞ্চয়মূল্যকে ক্ষয় করলেও, তাঁকে ক্রয়ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। ফলে প্রতি বছর সঞ্চিত অর্থ তোলার পরিমাণ বাড়ানোর কথা ভাবতে পারবেন তিনি।
১৭১৮
তবে এই নিয়ম স্বতঃসিদ্ধ নয়। কারণ, ব্যক্তিবিশেষে আর্থিক বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। তার উপর ভিত্তি করে সঞ্চয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণত, যাঁরা ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ৮০ শতাংশের নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
১৮১৮
আবার অবসরের পর কেউ কেউ বড় ব্যয়ের পরিকল্পনা করে থাকেন। যার মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই ৮০ শতাংশের সঞ্চয় যথেষ্ট না-ও হতে পারে। কারণ, তখন অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে তাঁর।