সোশাল মিডিয়া ট্রোলিং। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
গাঢ় গেরুয়া ধুতি আর আদুর গায়ে হলুদ উত্তরীয় গলার কাছে গুটিয়ে, বাতানুকূল যানে আয়েশের ভঙ্গি।
জিন্স অথবা কটন ট্রাউজার্স আর টি-শার্টের রাহুল গান্ধীকে এই বেশে সাজিয়ে তাঁর জনসংযোগ কর্মসূচি ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-কে হাসির খোরাক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। আর তার নীচে নানা বাঁকা মন্তব্য। এই হচ্ছে রাজনীতির ‘ট্রোলিং’ বা নিজের বিরোধীকে আক্রমণের সাম্প্রতিকতম অস্ত্র। সমাজমাধ্যমের বহুল ব্যবহারের এই সময়ে এ অবশ্য শুধু রাহুল বা জাতীয় স্তরেই আটকে নেই। বরং, বিরোধীদের নিশানায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল বিজেপিও। সেই ধারা গ্রাস করেছে রাজ্য স্তরের নেতা ও নীতিকেও। সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ বা শ্লীল-অশ্লীল নির্বিচারে রীতিমতো বাহিনী তৈরি করে পরস্পরকে বিঁধছে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএম। রাজনীতিকদের অপদস্থ করার সেই ‘ট্রোলিং’-এর বিষয় অবশ্য রাজনীতি ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরে ঢুকে পড়ছে হামেশাই। শুধু তা-ই নয়, বার বার তা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অশ্লীল, কখনও কখনও সামাজিক সুস্থিতির জন্য বিপজ্জনকও।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের প্রধান মুখ শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করার সূত্রে এই আক্রমণে নেমেছে তৃণমূলও। দলের ‘ট্রোল আর্মি’ শুভেন্দুকে খাটো করতে তাঁর মন্তব্যকে ঘুরিয়ে বিরোধী দলনেতার ‘যৌন পছন্দের অভিমুখ’ নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রচার শুরু করেছিল, যা অনেকের মতে শুধু কুরুচিকর নয়, দণ্ডনীয় অশ্লীলতাও বটে। আক্রান্ত হয়েছেন শুভেন্দুর বাবা, প্রবীণ রাজনীতিক শিশির অধিকারীও। একই ভাবে এ ব্যাপারে পিছিয়ে থাকেনি বিজেপিও। রাজনৈতিক বিরোধিতার সীমা বাড়িয়ে তারা টেনে এনেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তা-ও বার বার রুচির গণ্ডি ছাড়িয়েছে বলেই অভিযোগ।
তৃণমূল ও বিজেপি— এ রাজ্যের দুই বড় রাজনৈতিক শক্তিই এ কাজে সিদ্ধহস্ত। দুই দলেরই শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন, রাজনীতিহীনতার কারণেই হতাশা থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণে এই পন্থা ব্যবহার করছে প্রতিপক্ষ। তবে, এ সম্পর্কে তাদের সরকারি অবস্থান একেবারে ভিন্ন। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এর জন্য দায়ী আমরা, যারা এই সময়ে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছি। বিধানসভা পড়ে আছে, রাজনীতিই শুধু নেই। রাজনীতির বিরাজনীতিকরণ হয়েছে বলেই রাজনৈতিক বক্তব্যের ভাষা বদলে গিয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রমণ, কুৎসা, অপশব্দের প্রয়োগ রাজনীতির ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই আজ এই অবস্থা।’’ রাজনীতির পাশাপাশি সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের অন্যতম মুখ কুণাল ঘোষেরও মত একই রকম। তবে এ ব্যাপারে বিরোধী বিজেপি ও সিপিএমই বেশি দোষী বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শাসক হিসেবে তৃণমূলই ‘ট্রোলিং’-এর প্রধান শিকার হয়ে উঠেছে। বিজেপির আমদানি করা কুৎসার এই সংস্কৃতি অনুসরণ করে সিপিএম।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবিতে ‘পাপ্পু’ লিখে টি-শার্ট তো তৈরি করেছিল তৃণমূলও? কুণালের জবাব, ‘‘হ্যাঁ, ধৈর্য হারিয়ে আমাদের তরফেও এ রকম কিছু হয়েছে। তবে প্রচারে রসিকতা থাকলে তাকে এই দোষ দেওয়া উচিত নয়।’’
এই চর্চায় পিছিয়ে নেই সিপিএমও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা, অভিষেক বা বিজেপি নেতৃত্বকে আক্রমণে সমাজমাধ্যমে নানা সময়ে নিজেদের ‘পারদর্শিতা’ দেখিয়েছে সিপিএমের ‘ট্রোল’ বাহিনীও। তারাও পাল্টা বিদ্ধ হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির হাতে। প্রয়াত জ্যোতি বসু থেকে শুরু করে ইদানীং কালে দলের তরুণ মুখ, যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে দড়ি টানাটানিও তার প্রমাণ। মীনাক্ষীর নামে তৈরি ফেসবুক প্রোফাইলের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য তো অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কাও তৈরি করেছিল। তা নিয়ে পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়েছে তৃণমূল এবং মীনাক্ষীদের দু’তরফেই।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘রাজনীতি এবং অন্য সর্বত্রই ‘ইউজ় অ্যান্ড থ্রো’ মানসিকতার প্রভাব এসে পড়ছে। জলে যেমন শাপলা ভেসে বেড়ায়, সমাজমাধ্যমে
তেমনই ট্রোল করে তাৎক্ষণিক প্রচার চলে। রাজনীতির বোধ এবং
মতাদর্শের ভিত শক্ত না-হলে এই প্রবণতা আরও বাড়ে।’’ সুজন মানছেন, বাম কর্মী-সমর্থকেরাও এই প্রবণতা থেকে মুক্ত নন। তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘দলের মধ্যে
আমরা এই জিনিসকে উৎসাহ তো দিই-ই না, বরং, সতর্ক করা হয়। আমাদের দলের পরিচিত বা প্রতিষ্ঠিত নেতারা কেউ এ সবের মধ্যে থাকেন না। বিজেপি বা তৃণমূলে মুখপাত্রেরা ট্রোলিং শুরু করান অনেক বিষয়ে! এটাই তফাত।’’
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy