দীর্ঘ ক্ষণ হিল জুতো পরে থাকলে পায়ে, কোমরে ব্যথা হয়। তাই মাঝেমধ্যে জুতো খুলে চেয়ারের উপর পা তুলে বসেন। তাতে যে একেবারে আরাম হয় না, তা নয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। সারা রাত পা-কোমরের যন্ত্রণায় ছটফট করেন। কিছু ক্ষণ ঈষদুষ্ণ জলে পা ডুবিয়ে বসলেও আরাম হয়। কিন্তু হিল পরা ছাড়তে পারেন না। দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালের অস্থিরোগের চিকিৎসক আশিস আচার্য বলেন, “বয়সকালে মহিলাদের পা, কোমর এবং মেরুদণ্ডের নানা ধরনের সমস্যা, ব্যথা-বেদনার নেপথ্যে রয়েছে হিল জুতো পরার দীর্ঘকালীন অভ্যাস।”
শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিজস্ব মাপজোখ রয়েছে। প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই শরীরের কাঠামো তৈরি হয়। কেউ যেন একেবারে অঙ্ক কষেই তা নির্ধারণ করেছে। সেখান থেকে একচুল এ দিক-ও দিক করার উপায় নেই। জোর করে কিছু করতে গেলেই তখন শুরু হয় সমস্যা। ক্রমাগত উঁচু হিল পরার অভ্যাসে কাঠামোগত পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে যে সমন্বয়, তা-ও নষ্ট করে। পায়ের পাতা থেকে সমস্যা শুরু হলেও, তার রেশ মেরুদণ্ড হয়ে ঘাড়, মাথা পর্যন্ত পৌঁছোতে সময় লাগে না।
আরও পড়ুন:
জুতোর হিল কী ভাবে মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে?
স্বাভাবিক অবস্থায় মানবদেহের মেরুদণ্ড দেখতে ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো। দেহের ওজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে যেন কোনও রকম অসুবিধা না হয়, মেরুদণ্ড সেই ভাবেই তৈরি হয়েছে। দেহের নিজস্ব ভরকেন্দ্র অনুযায়ী মেরুদণ্ডকে একেবারে শরীরের মাঝ বরাবর রাখা হয়েছে। কিন্তু হিল পরলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই ভরকেন্দ্র বদলে যায়। ফলে ভারমাস্য নষ্ট হয়। কোমরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। মেরুদণ্ডের একেবারে নীচের দিক, অর্থাৎ ‘লাম্বার স্পাইন’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকের আবার কোমর, পিঠ এবং ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে যায়। ভুল ভঙ্গির কারণে কাঠামোগত পরিবর্তনও আসে।
জুতোর হিল কী ভাবে অস্থিসন্ধি, পায়ের পেশির ক্ষতি করে?
হিল জুতো পরলে শুধু মেরুদণ্ডের ক্ষতি হয় না, গোড়ালি, হাঁটু, কোমর এবং নিতম্বের অস্থিসন্ধি ক্ষয়ে যায়। এমনকি, অল্প বয়সে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। পায়ের কাফ মাস্লের নমনীয়তা নষ্ট হয় হিল জুতো পরলে। এমনকি, সায়াটিকা স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই কারণে।
আরও পড়ুন:
তা হলে হিল পরা কি একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে?
চিকিৎসকেরা বলছেন, তা করতে পারলেই ভাল। তবে একান্ত না পারলে পরবেন, কিন্তু রোজ নয়। দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ির বাইরে গেলে হিল জুতো এড়িয়ে চলাই ভাল। কেনার সময়ে দেখে নিতে হবে ওই ধরনের জুতো পায়ে গলিয়ে চলাফেরা করতে বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে কি না। হিলের বিভিন্ন ধরন আছে। অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে দেহের ওজন এবং ভারসাম্য রাখতে পারে, এমন জুতো কেনাই ভাল। হিল জুতো পরে চলতে গিয়ে অনেকের পা মচকে যাওয়ার সমস্যা খুবই সাধারণ। তেমনটা হলে বুঝতে হবে ব্যালান্স ধরে রাখতে সমস্যা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কম হিল-যুক্ত জুতো বেছে নেওয়াই শ্রেয়।