বয়স কুড়ি পেরাতে না পেরোতেই ধরা পড়ছে হার্টের রোগ। ত্রিশের আগেই ডায়াবিটিস। এমনকি হরমোনের তারতম্যে রজোনিবৃত্তির সময়ও এগিয়ে আসছে মহিলাদের। সেই সঙ্গেই স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন বেশির ভাগ ভারতীয় মহিলাই। ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’-এর তথ্য বলছে, দেশের নানা রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ১১ শতাংশের বেশি মহিলা এমন শারীরিক সমস্যার শিকার। ক্রনিক কিডনির অসুখ, বাত জনিত নানা রোগ, থাইরয়েড, শরীরের নিম্নাঙ্গে মেদ জমা বা লিপেডেমার সমস্যা বেশির ভাগেরই। তার উপরে সংসার ও পেশা সামলাতে গিয়ে মানসিক চাপ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই সব থেকে বাঁচতেই জীবনযাত্রার ধরনে বদল আনার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় প্রতি তিন জন কর্মরত মহিলার মধ্যে এক জনের সমস্যা এরকমই। এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, বেশির ভাগ মহিলাই নিজের খেয়াল সঠিক ভাবে রাখেন না। অনেকেই সময় মতো খাবার খান না, পর্যাপ্ত ঘুমেরও ঘাটতি থেকে যায়, তার উপরে যাঁদের মদ্যপান বা ধূমপানের নেশা আছে, তাঁদের আরও নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তার উপরে শরীরচর্চা করার অভ্যাস বেশির ভাগেরই নেই। সে কারণেই নানা অসুখবিসুখ বেড়ে চলেছে। এর থেকে রেহাই পেতে রোজের যাপনে অন্তত ৫টি নিয়ম মেনে চলতেই হবে।
সকালের কোন কোন অভ্যাস সুস্থ রাখবে?
সকালে খালি পেটে ডিটক্স পানীয়
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে অনেক অসুখবিসুখ দূরে থাকবে। চিকিৎসকের কথায়, সারা রাত মেথি দানা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে সেই জল ছেঁকে পান করলে শরীরে মেদ জমবে না, পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফাইবারে সমৃদ্ধ মেথি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমাবে।
আরও পড়ুন:
১০ মিনিট শরীরচর্চা
সকালে মিনিট দশেকের জন্য হলেও বাইরে বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি বা জগিং করা ভাল। গায়ে রোদ লাগাতেই হবে। যদি সে সুযোগ না থাকে, তা হলে বাড়িতেই যোগাসন, প্রাণায়াম করলে ভাল। স্পট জগিং করা যেতে পারে। বয়স এবং শারীরিক প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরন নির্বাচন করা উচিত। ৪০ পেরিয়েও স্ট্রেন্থ ট্রেনিং, যোগা বা পিলাটিজের মতো শরীরচর্চা করা যেতে পারে। তবে প্রশিক্ষকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
অয়েল পুলিং
মুখভর্তি তেল নিয়ে ঠোঁট দু’টি শক্ত করে চেপে রাখতে হয়। তার পরে তেল মুখের ভিতর থেকে বাইরের দিকে ঠেলতে হয়। আবার বাইরের দিক থেকে ভিতর দিকে টানতে হয়। এ ক্ষেত্রে দাঁতের ফাঁক দিয়ে তেল যাওয়া-আসা করে। এর ফলেই দাঁত এবং মাড়ির উপকার হয়। আয়ুর্বেদ মতে, তিলের তেল বা নারকেল তেলই এই কুলকুচিতে ব্যবহার করার কথা। তবে নারকেল তেল সবচেয়ে বেশি কাজ দেয়।
প্রোটিন-সমৃদ্ধ প্রাতরাশ
নানা রকমের শাক, লেটুস, ব্রকোলির মতো সবুজ শাকসব্জি মরসুম অনুযায়ী রোজকার খাবারের সঙ্গে খান। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। চটজলদি স্বাস্থ্যকর জলখাবারের জন্য ওট্সের মতো ভাল জিনিস হয় না। ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ওট্স। গ্লুটেন যদি সহ্য না হয়, তা হলে ওট্স আপনার ভাল বন্ধু হয়ে উঠবে। ওট্স গুঁড়ো করে তা দিয়ে রুটি, কেক, প্যানকেক— সব রকমই বানাতে পারেন। সঙ্গে ডিম থাকলে ভাল। ডিমে শুধু প্রোটিনই নয়, কিছু পরিমাণে ভিটামিন ডি পাবেন। সেই সঙ্গে প্রোবায়োটিকের জন্য দই রাখা যেতে পারে।
১৫ মিনিটের ‘ডিপ ব্রিদিং’
ঘুম থেকে ওঠার আধ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসের কিছু ব্যায়াম করলে শরীর ভাল থাকবে। চিকিৎসকেরা বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থেকে ফুসফুসে রোগ ও হৃদ্রোগ হতে পারে। তা ছাড়া পরিবেশে দূষণ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। এই সময়ে তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে রাখা উচিত। শ্বাসের কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম আছে যা অভ্যাস করলে শ্বাস নেওয়া শ্বাস ছাড়া সঠিক ভাবে আয়ত্তে আসে। একে বলে ‘ব্রিদ ওয়ার্ক’। কী ভাবে করবেন?
পিঠ সোজা করে পদ্মাসনে বা সুখাসনে বসতে হবে। চোখ বন্ধ রেখে মনোনিবেশ করতে হবে শরীরে শ্বাসবায়ুর প্রবেশ এবং বেরিয়ে যাওয়ার উপরে। নাক দিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস নিন। সাধ্যমতো কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন। তার পর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। পুরো পদ্ধতিটি সাত-আট বার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শ্বাস নেওয়ার সময়ে নাভি যেন বাইরের দিকে ঠেলে ওঠে এবং শ্বাস ছাড়ার সময়ে যেন নাভি ভিতরের দিকে ঢুকে যায়।