ঘরের ভিতরে হাঁটলেও ওজন কমবে। —ফাইল চিত্র।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে জিমে যেতেই যেন আলস্য লাগে। দিনভর কাজের শেষে সন্ধ্যায় জিমমুখো হতে কি আর মন চায়? কার্ডিয়োর নাম শুনলেই ঘুম পায়। গরম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে প্রাতর্ভ্রমণের নাম শুনলেই গায়ে জ্বর আসে। এ দিকে, ডায়েট করব করব করেও দিন গড়িয়ে যায়। বাড়ির কাজ, বাইরের কাজ সামলে তাই ডায়েট হোক বা শরীরচর্চা, দু’টিতেই ইতি টেনে দিয়েছেন অনেকে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। ওজন বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর কোলেস্টেরল তো সেই কবে থেকেই ঘাঁটি গেড়ে রেখেছে। যে পরিমাণ ভাজাভুজি আর মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া হচ্ছে সারা দিনে, তাতে মন থেকে অস্বস্তি যাচ্ছে না। ডায়াবিটিসটাও বুঝি এ বার ঝপ করে এসেই পড়ল। অগত্যা উপায়?
ফিটনেস প্রশিক্ষকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন, গরমে চড়া রোদে বাইরে যাওয়ার দরকারই নেই। বরং বাড়ির ভিতরেই হাঁটুন। অফিস গেলে সেখানেও হাঁটুন। যদি কেনাকাটা করতে যান, সেখানেও ধপ করে বসে না পড়ে বরং হাঁটাহাঁটি করুন না, ক্ষতি কী! এই ভাবে দিনে যদি ১০ হাজার পা হেঁটে ফেলতে পারেন, তা হলেই কাজ হবে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করেছেন, সারা দিনে যদি গুনে গুনে ১০ হাজার পা হাঁটা যায়, তা হলে ওজন তো কমবেই, হার্টও ভাল থাকবে। আচমকা হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে। তবে হাঁটারও কিছু নিয়ম, পদ্ধতি আছে। হাঁটুন, সে তো ভাল কথা, কিন্তু কী ভাবে হাঁটবেন? মানে, কী নিয়ম মেনে হাঁটলে জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করার সমান উপকার পাবেন, সেটা জেনে রাখা দরকার।
মা হওয়ার পরে ওজন অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল পৌলোমীর। পেশায় আইটি কর্মী। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছিলেন এই সময়টিতে জিমে না গিয়ে বরং হাঁটাহাঁটি করতে। সন্তানের দেখভাল করে, সংসার সামলে আর বাইরে গিয়ে হাঁটা হত না পৌলোমীর। ফলে ওজনও কমছিল না। শেষে ঘরের ভিতরেই হাঁটা শুরু করেন। কিন্তু দিনে কতটা হাঁটবেন, তা বুঝে উঠতে পারেননি। শেষে ফিটনেস প্রশিক্ষকের দ্বারস্থ হন। পৌলমী জানাচ্ছেন, তাঁকে বাড়ির ভিতরেই হাঁটাহাঁটি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রশিক্ষক। কত ক্ষণ ও কী ভাবে হাঁটতে হবে, সে পদ্ধতিও বলে দেন।
ফিটনেস প্রশিক্ষক ও পুষ্টিবিদ সোনিয়া বক্সী বলছেন, সহজ ৬টি পদ্ধতি রয়েছে, যা মেনে চললে সারা দিনে দশ হাজার পা হাঁটাও হবে, আবার ক্যালোরিও পুড়বে।
১) জ়ুম্বা ব্যায়াম
শরীরচর্চা মানেই যে জিমে গিয়ে ভারী ওজন তুলতে হবে এমনটা নয়, জিমে না গিয়েও শরীরচর্চা করা যায়। ইদানীং অনেকেই শরীরচর্চার বিকল্প হিসাবে জ়ুম্বাকে বেছে নিচ্ছেন। জ়ুম্বা লাতিন আমেরিকার এক নৃত্যশৈলী তথা ব্যায়াম। সালসা ও অ্যারোবিক্সের যুগলবন্দি বলা যায় একে। জ়ুম্বা করলে ভুঁড়ি তো কমবেই, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের পেশির সঞ্চালন হবে। হার্ট ভাল থাকবে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে, ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
২) বাড়ির ভিতরেই যত খুশি হাঁটুন
বাড়ির ছাদে, লনে হাঁটুন। এ ঘর থেকে ও ঘর একটু জোরে হাঁটাহাঁটি করলেই দেখবেন ঘাম ঝরছে। প্রাতরাশ খাওয়া মিনিট দশেক পরে হাঁটুন। দুপুরের বা রাতের খাবার খেয়ে বসে থাকবেন না বা শুয়ে পড়বেন না। বাড়ির ভিতরে বড় উঠোন বা বাগান থাকলে খুব ভাল। না থাকলে ছাদে গিয়ে হাঁটতে পারেন।
৩) অফিসে দিনভর বসে থাকবেন না
অনেকেই বলেন, হাঁটার সময় কোথায়? রোজ তো অফিস থাকে। তাতেও সমস্যা নেই। অফিসে গিয়ে দিনভর গ্যাঁট হয়ে বসে না থেকে বরং হাঁটাহাঁটি করুন। কাজের ফাঁকে বিরতিতে করিডরে গিয়ে হেঁটে আসুন। দুপুরের খাওয়ার পরেও হাঁটুন। বাইরে যেতে মন না চাইলে অফিসের ভিতরেই হাঁটুন।
৪) সিঁড়ি ভাঙুন
বাড়িতে হোক বা অফিসে, এখন সকলেই আরাম করে লিফ্টেই যায়। চেষ্টা করতে হবে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার। অফিস যদি দশ তলায় হয়, তা হলে লিফ্ট ছাড়া গতি নেই। সে ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন তলা অন্তত সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। বাড়িতে থাকার সময়টুকু বার বার সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলেও খুব ভাল ব্যায়াম হয়। তবে হার্টের রোগ, আর্থ্রাইটিস বা অন্য অসুখ থাকলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করবেন কি না, সেটা চিকিৎসকের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।
৫) ঘরের কাজ করুন
ঘর-গেরস্থালির কাজেও কিন্তু বিস্তর হাঁটাহাঁটি, ওঠাবসা হয়। তাতে স্ট্রেচিংয়ের সমান ব্যায়াম হয়। প্রশিক্ষকদের পরামর্শ, নিজের ঘর ঝাঁট দিয়ে, পেট চেপে বসে ঘর মুছুন। ওয়াশিং মেশিনে নয়, নীচু হয়ে বালতিতে ভিজিয়ে জামাকাপড় কাচুন, নিজেই মেলুন। ঘরের দরজা-জানলা নিজেই পরিষ্কার করুন। সম্ভব হলে রান্না করুন। এ সব কাজেও বিস্তর ক্যালোরি পোড়ে, মেদও ঝরে।
৬) টিভি দেখতে দেখতে হাঁটুন
সোফায় আয়েস করে সর্বক্ষণ বসে না থেকে, বরং ঘরের ভিতরেই পায়চারি করুন। টিভি দেখতে দেখতে পায়চারি করার অভ্যাস করুন। ঘরের ভিতরেই এ দিক থেকে ও দিকে হাঁটুন। এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে দেখা সম্ভব আপনি ঘরেই কত পা হাঁটলেন। ফোন করতে করতে, গান শুনতে শুনতে, হাঁটুন না যত খুশি। এতে শরীরই ভাল থাকবে।
একরাশ উদ্বেগ বা চিন্তা নিয়ে হাঁটলে চলবে না। প্রথমেই দশ হাজার পা হেঁটে ফেলবেন মনে করলে তা কখনওই হবে না। তাই চিন্তাভাবনা ছেড়ে মন হালকা রেখে হাঁটুন। অল্প অল্প করেই হাঁটার গতি ও সময় বাড়বে। পায়ে বা হাঁটুতে চোট থাকলে বা কোমরের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই হাঁটার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy