একের পর এক বিল রাজভবনে আটকে রেখে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল পরিচালিত রাজ্য সরকারগুলিকে হেনস্থা করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। মঙ্গলবার দেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপালদের ঝুলিয়ে রাখা ‘বৈধ’ নয়। এ প্রসঙ্গে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবিকে সাংবিধানিক বিধি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সেই পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গেই মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে ‘কর্তব্য স্মরণ’ করিয়েছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ঠিক তার এক দিন পর জবাব এল রাজভবন থেকে। বুধবার রাতে দু’টি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে রাজভবন। তবে এই বিবৃতিতে স্পিকার বা রাজ্য সরকারের বিষয়ে কোনও কথা উল্লেখ করা হয়নি। বরং সংবাদমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতেই যে রাজভবন থেকে আটকে থাকা বিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা হচ্ছে, তা জানানো হয়েছে।
নাম না করে স্পিকার বিমানকে রাজভবনের জবাব, রাজ্যপাল সব সময় সংবিধান অনুযায়ী শিষ্টাচার মেনে চলেছেন, বিশেষ করে বিল পাশের বিষয়ে। ২০২৩ সালে রাজভবনকে জানানো হয়েছিল যে মোট ২২টি বিল নাকি রাজভবনে আটকে রয়েছে। এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যপাল বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই বিলগুলি মধ্যে পাঁচটিতে ইতিমধ্যে রাজ্যপাল সায় দিয়েছেন বলেই জানিয়েছেন রাজভবন। আরও যে দু’টি বিলে অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাছে বেশ কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে রাজভবন জানিয়েছে, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের রাজ্যপাল মোট ১১টি বিল রাষ্ট্রপতির কাছে বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছেন। এই বিলগুলির মধ্যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত এবং একটি অপরাজিতা বিল। যা আরজি কর কাণ্ডের পর ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কড়া শাস্তি দিতে পাশ করিয়েছিল রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, সারদা কান্ডের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার 'দি ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোটেকশন অফ ইন্টারেস্ট অফ ডিপোজিটরস ইন ফিনান্সিয়াল এস্টাব্লিশমেন্ট বিল ২০১৩ বিধানসভায় পাশ করিয়েছিল। সেই বিলটি ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেই বিলটি এখনও সেই পর্যায়ে রয়েছে বলে রাজভবন থেকে জানানো হয়েছে। ডানলপ কারখানা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিল ২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হয়েছিল। সেই বিলটিও রাষ্ট্রপতি বিবেচনাধীন। জেসপ কারখানা নিয়েও পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে বিলটি ২০১৬ সালে পাশ করিয়েছিল তা-ও রাষ্ট্রপতি ভবনের বিচারাধীন বিষয় হিসাবেই রয়েছে বলে রাজভবন জানিয়েছে। হাওড়া পুরসভা ও গণপিটুনি-সহ একঝাঁক বিলে সম্মতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের কাছে বেশ কিছু তথ্য তলব করেছে রাজভবন।এই ধরনের বিলের উপযুক্ত জবাব বা তথ্য রাজভবন পায়নি, তাও নবান্নকে উদ্দেশ্য করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছেও তথ্য তলব করেছে কলকাতার রাজভবন। আবার কোনও কোনও বিলের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী, সচিবদের রাজভবনের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দায় যে রাজ্য সরকারের, তা এই মন্তব্যের মাধ্যমে বুঝিয়েছে আনন্দ বোসের নেতৃত্বাধীন রাজভবন।