ইসলামাবাদে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি ও পাক-প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা সরতাজ আজিজ। ছবি: এপি।
সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিল আমেরিকা। লস্কর-ই-তইবা, হক্কানি নেটওয়ার্ক, তালিবান-সহ সব জঙ্গি গোষ্ঠীকেই নিশানা করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের আগে কেরির এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে ওবামার জন্য জমি তৈরি করেছেন কেরি। তার পরেই পাকিস্তান গিয়েছেন তিনি। সেখানে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ-সহ পাক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন বিদেশসচিব। ভারত থেকে ফেরার পথে কেরি পাকিস্তানে কী বার্তা দেন তার উপরে স্বভাবতই কড়া নজর রেখেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
সরতাজ আজিজের সঙ্গেই ইসলামাবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কেরি। তিনি স্পষ্ট বলেন, “জঙ্গিরা যাতে পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশেই ঘাঁটি গাড়তে না পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। সে কাজ এখনও শেষ হয়নি।” তাঁর কথায়, “পাকিস্তানি ও আফগান তালিবান, লস্কর-ই-তইবা ও অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি এখনও পাকিস্তান, তার প্রতিবেশী দেশ ও আমেরিকার বিপদ ঘটাতে সক্ষম।”
সন্ত্রাসের বিপদ হিসেবে পেশোয়ারের স্কুলের ঘটনার পাশাপাশি মুম্বই হামলার কথাও উল্লেখ করেছেন কেরি। সম্প্রতি মুম্বই হামলায় অভিযুক্ত লস্কর নেতা জাকিউর রহমান লকভি জামিন পাওয়ায় সন্ত্রাস-দমনে পাক সরকারের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছিল। পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালাতে বেশ কিছু গোষ্ঠীকে মদত দেয় বলেও দীর্ঘদিন ধরে দাবি নয়াদিল্লির। পেশোয়ার, প্যারিসের ঘটনার পরে আপাতত যে ওয়াশিংটন কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীকেই রেয়াত করতে রাজি নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বিদেশসচিব।
কড়া বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক রীতি মেনে পাকিস্তানের কিছুটা প্রশংসাও করেছেন কেরি। তাঁর মতে, উত্তর ওয়াজিরিস্তান এলাকায় শুরু হওয়া পাক সেনার জঙ্গি-দমন অভিযানে যথেষ্ট ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানকে যে আমেরিকা পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন বিদেশ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর কথায়, “ঠিক কী ব্যবস্থা নেওয়া হল তা আমরা আগে দেখতে চাই।”
আমেরিকার কড়া বার্তার মুখে আজ কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে পরিস্থিতি কিছুটা সামলানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। পাক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ জানিয়েছেন, দিল্লি কাশ্মীর নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় না। কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে পাক হাইকমিশনারের বৈঠকের পরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা থামিয়েই তারা তাদের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান কাশ্মীর বাদ দিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় রাজি নয়।
বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, ওবামা ভারত সফরের আসার আগে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেওয়া ছাড়া কেরির কোনও উপায় ছিল না। তা ছাড়া প্যারিস, পেশোয়ারের ঘটনা প্রমাণ করেছে জঙ্গিরা এখনও পুরোদমে সক্রিয়। তাই পাকিস্তানে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর থাকাটা এখন কোনও ভাবেই আমেরিকার পক্ষে মানা সম্ভব নয়।
ওবামা ভারতে এসে কী সুরে কথা বলেন তা দেখতেই এখন আগ্রহী নয়াদিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy