Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Bangladesh Protest

বাংলাদেশে সংরক্ষণ নিয়ে ছাত্রবিক্ষোভ কেন? কারা চাকরিতে কত সুবিধা পান? সরকারের অবস্থান কী?

১৯৭২ সাল থেকেই চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে বাংলাদেশে। মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য চাকরিতে আলাদা আসন সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষণের সুবিধা পান নারীরাও।

সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে।

সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৪ ১৩:০০
Share: Save:

সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। চাকরিতে সব ধরনের সংরক্ষণ বাতিল করার দাবি নিয়ে পথে নেমেছে ছাত্রসমাজ। পুলিশ এবং দেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৯। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ২৭। পিটিআইয়ের হিসাবে, মৃতের সংখ্যা ২৫। আবার সংবাদ সংস্থা এএফপি ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংরক্ষণ নিয়ে মামলা আগামী রবিবার শুনবে বাংলাদেশের আদালত।

কিন্তু বাংলাদেশে সংরক্ষণ নিয়ে কেন এত ক্ষোভ? সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পান কারা? কেনই বা সেই পদ্ধতিতে বদল আনতে আন্দোলন চলছে?

১৯৭২ সাল থেকেই চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে বাংলাদেশে। মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য চাকরিতে আলাদা আসন সংরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া, সংরক্ষণের সুবিধা পান নারী, সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীরা।‌ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের জন্যও কিছু সংরক্ষণ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এ ভাবে মোট ৫৬ শতাংশ আসনই চলে গিয়েছে সংরক্ষণের খাতায়। বাকি ৪৪ শতাংশ আসন রয়েছে সাধারণের জন্য। যেখানে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে‌।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু ছিল, তাতে মেধার ভিত্তিতে মাত্র ২০ শতাংশ নিয়োগের সুযোগ ছিল। বাকি ৮০ শতাংশ ছিল জেলার সংরক্ষিত আসন। তার মধ্যেই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল।

১৯৭৬ সালে প্রথম বার সংরক্ষণ ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। বৃদ্ধি করা হয় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ। বলা হয়, মোট নিয়োগের ৪০ শতাংশ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারী এবং ১০ শতাংশ নিয়োগ জেলার বাসিন্দাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়।

১৯৮৫ সালে সংরক্ষণ ব্যবস্থায় আবার পরিবর্তন আসে। সংরক্ষণের আওতায় আনা হয় পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী তথা জনজাতিদের। সে‌ বার বলা হয়েছিল সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে ৪৫ শতাংশ। বাকি ৫৫ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী এবং পাঁচ শতাংশ জনজাতিদের জন্য বরাদ্দ করা হয়।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁদের সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০০২ সালে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ আসনে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধার ভিত্তিতে তাতে নিয়োগ হবে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এই নির্দেশ বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ আসন পূর্ণ করা না গেলে তা খালি রাখা হবে। ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের পাশাপাশি তাঁদের নাতি-নাতনিদেরও সংরক্ষণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১২ সালে তার সঙ্গেই যুক্ত হয় এক শতাংশ প্রতিবন্ধী সংরক্ষণ।

সংরক্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রথম থেকেই চাপা অসন্তোষ ছিল। আন্দোলন প্রথম বড় আকার নেয় ২০১৮ সালে। আন্দোলনের চাপে পড়ে সংসদে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সংরক্ষণ বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ।

কিন্তু সংরক্ষণ বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে যায় কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আদালত তাঁদের পক্ষে রায় দেয়। আবার আগের মতো সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়ে যায় বাংলাদেশে।

হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে হাসিনা সরকার। তার মাঝেই চলতি মাসে দেশ জুড়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। ক্রমে যার ঝাঁজ বেড়েছে।

(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল বাংলাদেশে ‘সংরক্ষণ বিরোধী’ আন্দোলন হচ্ছে। আদতে বাংলাদেশে এই আন্দোলন হচ্ছে কোটা সংস্কারের দাবিতে। আমরা সেই ভ্রম সংশোধন করেছি। অনিচ্ছাকৃত ওই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE