পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ আন্দোলনকারীদের। ছবি: রয়টার্স।
ছাত্র-যুবদের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ (কমপ্লিট শাটডাউন) কর্মসূচির জেরে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকা-সহ সে দেশের বিভিন্ন শহর বৃহস্পতিবার বন্ধের চেহারা নিয়েছে। হাসপাতাল, সংবাদমাধ্যম এবং জরুরি পরিষেবা ছাড়া প্রায় সমস্ত বেসরকারি দফতর, দোকান-বাজার বন্ধ।
কোটা সংস্কার চেয়ে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও আধা সেনার হামলার জেরে মৃত্যুর প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি তুলে বৃহস্পতিবার ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের বিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশের গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়কগুলিতে আটকে রয়েছে হাজার হাজার যানবাহন। রাজধানী ঢাকার রাস্তাতেও পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য যানবাহনের উপস্থিতি নামমাত্র। তবে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনকারীদের যৌথমঞ্চ, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়কারী আসিফ মাহমুদ বুধবার রাতে পুলিশি নিপীড়ন এবং শাসকদলের হামলার প্রতিবাদে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর ডাক দিয়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার প্রভাব নজরে এসেছে দেশ জুড়ে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আন্দোলন দমনে সক্রিয় হয়েছে। সোমবার রাতে সে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সদর দফতরে হানা দেয় ঢাকা পুলিশের একটি দল। নয়া পল্টন এলাকার ওই দফতর থেকে বোমা, পেট্রল, লাঠি-সহ নানা দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে ঢাকা পুলিশের সূত্র উদ্ধৃত করে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল বাংলাদেশের তিন শহর— ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রংপুরে। তার পরেই বুধবার সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ‘অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ’ ঘোষণা করে পড়ুয়াদের ক্যাম্পাস ও হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খালি করতে গিয়ে বুধবার প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ।
শেষ পর্যন্ত পুলিশ জোর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর খালি করলে শনির আখড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেই রাতে বাধে সংঘর্ষ। অদূরের একটি উড়ালপুলের টোল প্লাজ়া এবং পুলিশ কিয়স্কে আগুন ধরানো হয়। চলে নির্বিচার ভাঙচুর, এমনকি পথচলতি যানবাহনেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। সে সময়ই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগের পথে হাঁটে। কাঁদানে গ্যাস, লাঠি, সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি ছররা গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ আধিকারিক ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে স্থানীয় বিএনপি এবং জামাত-ই-ইসলামির কর্মীরা হামলায় অংশ নেন। অন্য দিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও উপাচার্যকে মুক্ত করতে গিয়েও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন পুলিশকর্মীরা। হাসিনা বুধবার ছ’জনের মৃত্যুর ঘটনায় (যাঁদের মধ্যে আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের এক কর্মীও রয়েছেন) বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তারা যে-ই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল বাংলাদেশে ‘সংরক্ষণ বিরোধী’ আন্দোলন হচ্ছে। আদতে বাংলাদেশে এই আন্দোলন হচ্ছে কোটা সংস্কারের দাবিতে। আমরা সেই ভ্রম সংশোধন করেছি। অনিচ্ছাকৃত ওই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy