Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Agitation in Bangladesh

অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, নিহত অন্তত ১৯! দিনভর ঢাকায় সংঘর্ষ, সংরক্ষণ মামলার শুনানি কবে? জানাল কোর্ট

সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে। বৃহস্পতিবার দিনভর ঢাকা-সহ দেশের নানা প্রান্ত উত্তপ্ত থেকেছে আন্দোলনে। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।

বাংলাদেশ জুড়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছেে।

বাংলাদেশ জুড়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছেে। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ২২:০৮
Share: Save:

বাংলাদেশে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভের ঝাঁজ আরও বেড়েছে। গোটা দেশে এই সংক্রান্ত সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’। তাঁদের মধ্যে কারও গুলির আঘাতে, কারও ধারালো অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১ জনের। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পড়ুয়া। বয়স ৩০-এর নীচে। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রেরও মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ এবং আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে ছাত্রছাত্রীদের। পুলিশের বিরুদ্ধে পরিস্থিতি সামাল দিতে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। আবার সংঘর্ষে কয়েক জন পুলিশকর্মীও জখম হয়েছেন। দিকে দিকে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের হিংসায় আহতের সংখ্যা শতাধিক। শেখ হাসিনা সরকার বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নীতিগত ভাবে সহমত। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও চেয়েছেন দেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর মাঝে বাংলাদেশের আদালতে বৃহস্পতিবার সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলাটি উঠেছিল। আগামী রবিবার সেই শুনানির দিন ধার্য করেছে বাংলাদেশের চেম্বার আদালত (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের মধ্যবর্তী আদলত)।

অশান্ত বাংলাদেশে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে গত কয়েক দিন ধরেই। বিক্ষোভের মাঝে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এমনকি, ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল। ঢাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত, জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দেশ জুড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থাতেও অশান্তির প্রভাব পড়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়ে দিয়েছেন, সমাজমাধ্যম ব্যবহার করে কিছু মানুষের গুজব এবং অপপ্রচার রুখতে এবং জাতীয় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ইন্টারনেটে রাশ টানা হয়েছে। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন অংশে তা ধীর গতিতে চলছে।

বাংলাদেশের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতরও চলছে। সরকারের নীতির বিরোধিতা করে এবং পুলিশের আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব। অন্য দিকে, শাসকদল আওয়ামী লিগের অভিযোগ, পড়ুয়াদের আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে বিএনপি-জামাত। তাই এই আন্দোলন শুধু ছাত্র আন্দোলনের পর্যায়ে আর নেই। শাসকদলের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের সড়ক পরিবহণ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ঢাকার রাস্তায় সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে।

ঢাকার রাস্তায় সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। ছবি: রয়টার্স।

বাংলাদেশে অশান্তির সূত্রপাত সংরক্ষণের নিয়ম নিয়ে। এর আগে ২০১৮ সালেও একই বিষয়ে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশটি। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সে দেশে মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল এবং ৪৪ শতাংশ আসন সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮ সালে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। তখনকার মতো আন্দোলনে ইতি টানেন ছাত্রেরা। পরে সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। তাঁরা দাবি করেন, স্থায়ী ভাবে সরকারি নিয়োগ থেকে সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। হাসিনা সরকার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। রবিবার সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯

ঢাকা, চট্টগ্রাম-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৯। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যুর খবরই এসেছে ঢাকা থেকে। শুধু ছাত্র নয়, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাংবাদিকও। হাসপাতালে হাসপাতালে বাড়ছে মৃতদের সংখ্যা।

কোথায় কত মৃত্যু

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বৃহস্পতিবার চার জনের দেহ আনা হয়। তাঁদের মধ্যে কারও ছররা গুলির আঘাতে, কারও ধারালো অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয়েছে। কারও মাথায় রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন হাসান মেহেদী, তিনি পেশায় সাংবাদিক। ছররা গুলির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, ৩০ বছরের ওয়াসিম (মাথায় আঘাত), আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সি ব্যবসায়ী নাজমুল (ধারালো অস্ত্রের কোপ) এবং ২০ বছরের মহম্মদের (ছররা গুলি) মৃত্যু হয়েছে। নরসিংদীতে ১৫ বছরের তাহমিদ তামিম, ২২ বছরের ইমন মিঞার মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে। চট্টগ্রামের হিংসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ বছর বয়সি মহম্মদ ইমাদের, তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। মৃত্যু হয়েছে ২২ বছরের আরও এক যুবকের, যাঁর পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মধ্যে ১৩ জনই ঢাকার।

রণক্ষেত্র ঢাকা

বাংলাদেশের আন্দোলনে বৃহস্পতিবার রণক্ষেত্রের আকার নিয়েছে রাজধানী ঢাকা। সেখানকার উত্তরা এলাকায় সকাল ১১টা থেকে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে একের পর এক লাশ পৌঁছেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পুলিশ এবং শাসকদলের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলেছে। সেখানেই মৃত্যু হয় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রেরও। এ ছাড়া সকাল থেকে উত্তপ্ত মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ এলাকা। রামপুরায় বিটিবি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ। বাড্ডা এলাকায় এক পথচারীকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তিনি পেশায় মিনিবাসের চালক।

কী বলছে সরকার

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আন্দোলনকারীদের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় ডেকেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও বর্তমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে নীতিগত ভাবে সহমত। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে বসব। তাঁরা (শিক্ষার্থীরা) যখনই বসতে চাইবেন, তা যদি আজ হয়, তা হলে আজই বসতে রাজি আছি আমরা।’’ এর আগে এই আন্দোলনকে ‘ছাত্রদের উত্তেজিত করার সন্ত্রাসবাদী ছক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন হাসিনা। তিনি ছাত্রমৃত্যুর তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন।

মোদী সরকারের বার্তা

অশান্তির আবহে বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং পড়ুয়াদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা (অ্যাডভাইসরি) পাঠাল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বাংলাদেশের ভারতীয়দের ‘ভ্রমণ বর্জন করা’ এমনকি, ‘বাড়ির বাইরে বেরোনো নিয়ন্ত্রণ করা’র বার্তা দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের নির্দেশিকায়। পাশাপাশি, প্রয়োজনে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট এবং খুলনার উপ-হাই কমিশনের ফোন ও হোয়াট্‌সঅ্যাপে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁদের।

কী বলছে আদালত

সংরক্ষণ বাতিল অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল হাসিনা সরকার। আগামী রবিবার সেই শুনানির দিন ধার্য করেছে চেম্বার আদালত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ কথা জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় শুনানির দিন জানতে চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম চেম্বার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে আদালত বসে বিচারপতির বাসভবনেই। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিরোধীদের আক্রমণ

বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক তথা দেশের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিরোধীদের এক হাত নিয়ে ধানমন্ডির সাংবাদিক বৈঠক থেকে বলেন, ‘‘এই আন্দোলন আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বিএনপি-জামাত আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ধৈর্য এবং সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যেরা পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছেন। দ্রুত এই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদ্‌ঘাটিত হবে। যারা এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাদের শাস্তি হবে।’’

মিরপুরে উত্তেজনা

ঢাকার মিরপুরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে কয়েকশো মানুষ জমায়েত করেন। সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে স্লোগানে ছয়লাপ হয়ে যায় গোটা এলাকা। আন্দোলনকারীদের অনেকের হাতে লাঠি ছিল বলে অভিযোগ। রাস্তার মাঝে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। যার ফলে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন। ঢাকায় সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় মেট্রো পরিষেবাও।

(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল বাংলাদেশে ‘সংরক্ষণ বিরোধী’ আন্দোলন হচ্ছে। আদতে বাংলাদেশে এই আন্দোলন হচ্ছে কোটা সংস্কারের দাবিতে। আমরা সেই ভ্রম সংশোধন করেছি। অনিচ্ছাকৃত ওই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh dhaka Agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy