সার্জেন্ট রিচার্ড মারফি জুনিয়র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘর ছেড়েছিলেন। ফিরতে সময় লেগে গেল ৭৪ বছর। তবে সশরীরে আর ফেরা হল না সার্জেন্ট রিচার্ড মারফি জুনিয়রের। বাক্সবন্দি হয়ে ফিরল তাঁর শরীরের অবশিষ্ট অংশ। শনিবার সেটাকেই সমাধিস্থ করা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর জন্মস্থান মেরিল্যান্ডে। তবে এতদিন পর দেহাংশটুকু যে ফিরে পাওয়া গেল তাতেই খুশি, তাঁর পরিবারের লোকজন।
কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল তাঁর সঙ্গে? জানতে ফিরে যেতে হয় প্রায় এক শতক আগে। কলম্বিয়া ডিস্ট্রিক্টে মলি ও রিচার্ড মারফির ঘরে তাঁর জন্ম। চার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন তিনি। একটা চোখে দেখতে পেতেন না। তবে অসম্ভব ভাল পিয়ানো বাজাতেন। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে খবরের কাগেজ চাকরি পান। সেই সূত্রেই ১৯৪৩ সালে যুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ আসে।
সে সময় প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন সদস্যের যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। সেইসময় ২৫-২৬ বছর বয়স ছিল রিচার্ড মারফি জুনিয়রের। কিন্তু অত কম বয়সেও প্রাণের ঝুঁকি নিতে রাজি হয়ে যান তিনি। পরিবারের অন্য সদস্যদের বদলে নিজেই যাবেন বলে স্থির করেন। নদার্ন মারিয়ানাস আইল্যান্ডের কাছে মার্কিন রণতরীতে ডিউটি পড়ে তাঁর। সাইপ্যানের দিকে ধাবমান জাপানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করাই ছিল তাঁদের কাজ। কিন্তু জাপানি বাহিনী এলোপাথারি গোলা বারুদ ছুঁড়তে শুরু করলে, প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবাল প্রাচীরে আটকে যায় তাঁদের জাহাজ। বেগতিক দেখে নৌবাহিনীর সেনাকর্মীরা একে একে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু গুরুতর জখম এক সহযোদ্ধাকে ছেড়ে নড়েননি রিচার্ড মারফি জুনিয়র। মুহূর্তের মধ্যে একটি গোলা এসে তাঁদের জাহাজটিকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। যার পর দু’জনের মধ্যে কারও হদিশ মেলেনি।
আরও পড়ুন: সেনা পাঠাতে চাইছে দিল্লি, ‘উপহার’ ফিরিয়ে দিক মলদ্বীপ: হুঁশিয়ারি
যুদ্ধক্ষেত্রে কর্মরত সার্জেন্ট রিচার্ড মারফি জুনিয়র।
দেহও উদ্ধার হয়নি যে মৃত বলে ঘোষণা করে দেওয়া যায়। অগত্যা তাঁদের নিখোঁজ বলে ঘোষণা করে দেয় মার্কিন প্রশাসন। সেইমতো টেলিগ্রাম করে দেওয়া হয় তাঁর পরিবারকেও। তার এক বছর পর বাড়ি এসে পৌঁছয় ২২টি বই, চারটি খাতা এবং দু’টি তামাকের প্যাকেট-সহ রিচার্ডের একটি ট্রাঙ্ক। তখন তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ছোট ছেলে নেই বলে মানতে পারেননি তাঁর মা-বাবা। বাড়িতে যে অনুষ্ঠানই হোক না কেন, একটি চেয়ার সবসময় ফাঁকা রাখা থাকত তাঁর জন্য। এত দিন পর্যন্ত সেই প্রথা চলে আসছিল। তবে কুয়েনতাই-ইউএসএ- নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে সম্প্রতি ফোন আসে রিচার্ডের পরিবারের কাছে। ফোনে বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিখোঁজ মার্কিন নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ৭২ হাজার। ধ্বংসাবশেষ ঘেঁটে নিখোঁজ ব্যক্তিদের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তাতে ১৯৯১ সালে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে এক ব্যক্তির দেহাংশ উদ্ধার করেন মার্কিন নৌসেনায় কর্মরত টেড ডার্সি নামের এক ব্যক্তি। নানা কারণে হাত বদল হয়ে ফিলিপিন্সের একটি মার্কিন সমাধিস্থলে এতদিন রাখা ছিল সেটি। ডিএনএ পরীক্ষায় দেহটি রিচার্ড মারফি জুনিয়রের বলে নিশ্চিত করা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: কোথায় গেল রাশিয়ান মডেলের পা? পোস্ট ঘিরে রহস্য!
নিজের চোখে কখনও কাকাকে দেখেননি। কিন্তু তাঁর কথা শুনেই বড় হয়েছেন রিডার্ড মারফি জুনিয়রের ভাইপো জেরি মারফি। এখন যাঁর বয়স ৬৮ বছর। ফোনে প্রথমে নিজের কানে খবরটা বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। ধাতস্থ হতে বেশ খানিকটা সময় লাগে তাঁর। তবে এতদিন পরে হলেও পূর্ণ মর্যাদায় কাকাকে সমাধিস্থ করেন তিনি। মার্কিন পতাকায় মুড়ে, বিউগল বাজিয়ে সমাধিস্থ করা হয় দেহটি। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মেরিল্যান্ডের রকভিল গির্জায় ছুটে এসেছিলেন প্রায় ১০০ আত্মীয়স্বজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy