Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বেয়াড়া বাবা! জোবস-কন্যার কিস্সা

তাঁর হাত ধরেই প্রযুক্তি কড়া নেড়েছিল সাধারণ আমেরিকাবাসীর দরজায়। অ্যাপলের প্রাণপুরুষ সেই স্টিভ জোবস অবশ্য মানুষ হিসেবে যথেষ্ট গন্ডগোলের ছিলেন। সদ্যপ্রকাশিত আত্মজীবনীতে এই দাবি করেছেন স্টিভের বড় মেয়ে লিজ়া ব্রেনান-জোবস।

বাবা-মেয়ে: কিশোরী লিজ়ার সঙ্গে স্টিভ জোবস। ফাইল চিত্র

বাবা-মেয়ে: কিশোরী লিজ়ার সঙ্গে স্টিভ জোবস। ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৮
Share: Save:

তাঁর হাত ধরেই প্রযুক্তি কড়া নেড়েছিল সাধারণ আমেরিকাবাসীর দরজায়। অ্যাপলের প্রাণপুরুষ সেই স্টিভ জোবস অবশ্য মানুষ হিসেবে যথেষ্ট গন্ডগোলের ছিলেন। সদ্যপ্রকাশিত আত্মজীবনীতে এই দাবি করেছেন স্টিভের বড় মেয়ে লিজ়া ব্রেনান-জোবস।

স্টিভ তখনও ‘স্টিভ জোবস’ হয়ে ওঠেননি। হাইস্কুলের সহপাঠিনী ক্রিসান ব্রেনানের সঙ্গে তাঁর বেশ কয়েক বছরের সম্পর্ক ছিল। দু’জনেরই যখন ২৩ বছর বয়স, তখন লিজ়ার জন্ম। প্রথমে লিজ়াকে নিজের সন্তান বলে স্বীকারই করতে চাননি স্টিভ। এই নিয়ে ক্রিসানের সঙ্গে স্টিভের প্রবল ঝগড়া হয়। স্টিভের বাড়ি ছেড়ে চলেও যান ক্রিসান। ডিএনএ পরীক্ষার পরে যখন জানা যায়, তিনিই লিজ়ার বাবা, তখনও সে কথা মানতে চাননি স্টিভ। বলেছিলেন, ‘‘এই পরীক্ষার উপর কোনও ভরসাই করা যায় না। রেজ়াল্টেই তো লেখা রয়েছে— ৯৪% নির্ভুল!’’ প্রথমে মেয়ের জন্য কোনও খোরপোশ দিতেন না। পরে খোরপোশের মামলায় হেরে গিয়ে মেয়ের দেখভাল শুরু করেন।

লিজ়া যখন সদ্য কিশোরী, তখন বেশ কয়েক বছর সে বাবার সঙ্গে ছিল। এই সময়ের কথাই মূলত উঠে এসেছে তাঁর লেখা ‘স্মল ফ্রাই’ বইটিতে। লিজ়ার কথায়, ‘‘তখন আমি বাবাকে খুব ভয় পেতাম। মাঝেমধ্যেই খুব অদ্ভুত আচরণ করতেন উনি।’’ কেমন অদ্ভুত আচরণ, সেই কথা বলতে গিয়ে লিজ়া বর্ণনা করেছেন এক সন্ধের কথা। তত দিনে স্টিভের সঙ্গে লরেন পাওয়েলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। লিজ়ার কথায়, ‘‘সে দিন আমি আর লরেন ড্রয়িং রুমে বসে আছি। বাবা ঘরে ঢুকে লরেনকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভাবে চুমু খেতে শুরু করে দিল। আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু যেই উঠে যেতে যাচ্ছি, বাবা বলল, বসে থাকো। তুমি এখন আমাদের পরিবারের অংশ।’’

লিজ়ার দাবি, টাকা-পয়সার ব্যাপারেও খুব কড়া ধাতের ছিলেন স্টিভ। লিজ়ার ঘরে ‘হিটিং মেশিন’ বসাননি তিনি। শীতকালে ঠান্ডায় কাঁপত লিজ়া। স্টিভ নাকি মেয়েকে বলেছিলেন, ‘সব রকম পরিস্থিতিতে নিজেকে তৈরি রেখো।’ অনেক সময়েই শেষ দিন পর্যন্ত লিজ়ার স্কুলের টাকা জমা দিতেন না স্টিভ। ‘‘রেস্তরাঁয় আমাকে খেতে নিয়ে গিয়ে বিল না চুকিয়েই বেরিয়ে আসতেন,’’ লিখেছেন লিজ়া।

সৎমা লরেনের সঙ্গে লিজ়ার সম্পর্কের টানাপড়েনের কথাও উঠে এসেছে আত্মজীবনীতে। এক বার মনোবিদের কাছে কিশোরী লিজ়া কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছিল, বাবা ও সৎমা তাকে নিজের বলে মনে করে না। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ‘শুভরাত্রি’টুকুও বলে না। এই কথা শুনে লরেন নাকি বলেছিলেন, ‘‘আমরা মানুষগুলোই এ রকম। কাঠখোট্টা।’’ তবে বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কিছু ভাল ভাল মুহূর্তও তুলে ধরেছেন লিজ়া। বিশেষ করে স্টিভের শেষ কয়েক বছরে। লিজ়া লিখেছেন, ‘‘ক্যানসার তখন বাবাকে গ্রাস করেছে। আমার কাছে বারবার ক্ষমা চাইতেন উনি, বছরের পর বছর আমার জন্মদিন ভুলে যাওয়ার জন্য, আমার খোঁজখবর না নেওয়ার জন্য।’’

লিজ়া লিখেছেন ‘‘বাবা মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগের কথা। আমার তখন সাংবাদিক হিসেবে একটু নাম হয়েছে। বাবা শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি আমায় নিয়ে বই লিখবে ভাবছ? আমি বললাম— না। ‘যাক, ভাল কথা’ বলে ফের টিভিতে ডুবে গেলেন উনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Steve Jobs American entrepreneur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE