Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

নাও এ হৃদয়, এই হাটে বিকোয় প্রাক্তনের স্মৃতি

সূর্যোদয়-রঙা ফেল্ট পেনে যত্নে আঁকা ‘হার্ট’ দিয়ে ঠাসা কার্ড— তাতে ‘আই লাভ ইউ’-এর শপথ। ফুল-ফুল কাজ করা সুগন্ধী রুমাল, একটা বই, প্রথম পাতায় লেখা ক’টা লাইন। সবই বিকোবে এই ‘হাটে’। ফেলে আসা প্রেমের দপদপে শিখার সঙ্গে মিলিয়েই এক দিন যার নাম রাখা হয়েছিল, ‘ওল্ড ফ্লেমস মার্কেট।’

সংবাদ সংস্থা
হ্যানয় শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৮
Share: Save:

এক টুকরো হৃদয় বেচে দিচ্ছি। কেউ কিনতে চাও? কোনও কষ্ট হচ্ছে না আমার। এই দেখো— বৈঠকখানা জুড়ে ছড়ানো আরও কত ছন্দ-হারা ধুকপুক। নিয়ে যাও, যার যা খুশি। আমার তারাভরা রাতের স্বপ্ন, বালিশ ভেজানো চোখের জল প্রাণে ধরে বেচে দেব আজ।

হ্যানয়, ভিয়েতনাম। ছিমছাম এক কটেজ। মাসে এক বার সেখানে ভরা ঝুলি নিয়ে আসে ক’টা মানুষ। ঝুলি উজাড় করে সেখানেই বেচে দেয় নিজেদের ভেঙে যাওয়া প্রেমের যাবতীয় স্মৃতি। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই ব্যাপারটা চলছে। আর দিব্যি চলছে।

সূর্যোদয়-রঙা ফেল্ট পেনে যত্নে আঁকা ‘হার্ট’ দিয়ে ঠাসা কার্ড— তাতে ‘আই লাভ ইউ’-এর শপথ। ফুল-ফুল কাজ করা সুগন্ধী রুমাল, একটা বই, প্রথম পাতায় লেখা ক’টা লাইন। সবই বিকোবে এই ‘হাটে’। ফেলে আসা প্রেমের দপদপে শিখার সঙ্গে মিলিয়েই এক দিন যার নাম রাখা হয়েছিল, ‘ওল্ড ফ্লেমস মার্কেট।’

ছেলেটির নাম ডিং থাং। পরপর অনেকগুলো প্রেম, অনেকগুলো বিচ্ছেদ। তার পর এক দিন জমে থাকা কার্ড-চিঠি-উপহারগুলোর দিকে চেয়ে মনে হল— প্রেমটাই যখন নেই, তখন এগুলো জমিয়ে রেখে লাভ কী? রোজ চোখ পড়বে। কষ্ট বাড়বে। আরও হয়তো কত ছেলেমেয়ে আছে আমার মতো। তারাও হয়তো এমন বোঝা বইছে বুকে।

প্রায় এর পরে পরেই ‘মার্কেট’ বসিয়ে ফেলেন থাং। সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটা ছড়িয়েও যায়। ভাঙা-প্রেমের বাজার গরম হয় দ্রুতই। মার্কেটে বসে থাং বলছিলেন, ‘‘এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক খোলা মনের। তারা ভাবে, মনের কষ্টটা পাঁচ জনকে জানালে হয়তো সেটা একটু কমবে।’’ আর এই সব ‘স্মৃতিচিহ্ন’ বিক্রিও তো হচ্ছে দিব্যি। উপহার পাওয়া পোশাক, মোমবাতি, বইপত্রের পাশাপাশি প্রেমপত্রও কিনে নিচ্ছে লোকে!

মার্কেটের মেঝেয় বসে গিটারে মনখারাপ করা সুর তুলছিলেন এক যুবক। তাঁর অদূরেই ২৯ বছরের যুবতী ফুক থুয়ে। তিনি বসেছেন কয়েকটা মানিব্যাগ, জামাকাপড় আর টুথপেস্টের একটা টিউব
নিয়ে! প্রেমের প্রাপ্তি ওই ‘দন্তমঞ্জন’ও। সবই বেচে ফেলবেন। ফুক বলছিলেন, ‘‘প্রেমটা ভাঙার পরে খেতে-ঘুমোতে পারছিলাম না। তার পর এক সময়ে কাটিয়েও উঠলাম। অতীত মানে তো অতীতই।’’ এমন অনেকেই আসেন এখানে।

থাং ভাবছেন, আগামী বছরে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হো চি মিন সিটিতে প্রেম-ভাঙা বাজারের একটা শাখাই খুলে ফেলবেন। আসলে একটা বদলও দেখছেন তিনি। সেই বদল মানসিকতায়। কমিউনিস্ট ভিয়েতনামে এক প্রজন্ম আগেও সম্বন্ধ করে বিয়ের চল ছিল বেশি। প্রেম-টেমও হতো, ভাঙতও। কিন্তু তা নিয়ে একটা রাখঢাক ছিল। আজ ৯ কোটি ৪০ লক্ষ জনসংখ্যার এই দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষেরই বয়স তিরিশের কম। তারা ‘ডেট’-এ যায়। অনলাইনেই কত সম্পর্ক ভাঙে-গড়ে। বিয়ে হয়, ডিভোর্সও হয় প্রচুর। জীবন এগিয়ে চলে।

একটা মাঝারি সাইজের বোর্ড আছে মার্কেটে। ছোট ছোট চিরকুট গাঁথা। কোনওটায় লেখা, ‘আমি ভাল আছি!!!’ আর একটায়— ‘সব প্রাক্তনদের বলছি, আজ মনে হয় আমরা সত্যিই কেউ কাউকে চিনতাম না। আজ তাই মনখারাপ।’ মন ভাঙার আঘাত যারা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তাদের জন্যই ওই বোর্ড। যদি কখনও ইচ্ছে হয় নিরুদ্দেশের ঠিকানায় চিঠি দিতে— ‘আমি ভাল আছি। তুমিও ভাল থেকো, কেমন?’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE