ইমরান খান। —ফাইল চিত্র।
সন্ত্রাস দমন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ পাকিস্তান। তাই আপাতত সন্ত্রাসী কাজকর্মে অর্থনৈতিক জোগানের উপর নজরদারি চালানো সংগঠন ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর ধূসর তালিকাতেই থাকছে পাকিস্তান। সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান কতটা সক্রিয়, তা যাচাই করতে গত ৩ দিন ধরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক চলছিল সংগঠনের আধিকারিকদের। বৃহস্পতিবার সেখানেই এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জানানো হয়, সন্ত্রাসে আর্থিক মদত বন্ধ করতে যে যে পদক্ষেপ করা উচিত, তাতে পাকিস্তানের তরফে খামতি রয়ে গিয়েছে। তাই তাদের গতিবিধির উপর আগামী দিনেও বাড়তি নজরদারি চলবে। অর্থাৎ ধূসর তালিকা থেকে এখনই অব্যাহতি পাচ্ছে না পাকিস্তান।
২০১৮ সালের জুন মাসে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করে এফএটিএফ। সেই সময় ইসলামাবাদকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে, ২০১৯ শেষ হওয়ার আগে দেশের মাটিতে মাথাচাড়া দেওয়া সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির আর্থিক জোগান বন্ধ করতে পদক্ষেপ করতে হবে তাদের। কিন্তু ২০১৯ শেষ হতে হতে কোভিডের প্রকোপে উদ্ভুত অতিমারি থাবা বসায় গোটা বিশ্বে। তার জেরে পাকিস্তানকে দেওয়া সময়সীমার মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়। সম্প্রতি ভার্চুয়াল মাধ্যমে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও, সন্ত্রাসদমনে পাকিস্তানের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি সংস্থার কেউই। যে কারণে এফএটিএফ-এর প্রেসিডেন্ট মার্কাস প্লেয়ার বলেন, ‘‘সন্ত্রাসী কাজকর্মে আর্থিক জোগান বন্ধ করায় পাকিস্তানের তরফে খামতি রয়ে গিয়েছে। তাই আগামী দিনেও বাড়তি নজরদারি থাকবে তাদের উপর।’’
সন্ত্রাস দমেন পাকিস্তানকে ২৭টি পয়েন্ট বেঁধে দিয়েছিল এফএটিএফ। তার মধ্যে বেশ কিছু পূরণ করতে পারলেও, ৩টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্তপূরণ অধরাই ধেকে গিয়েছে বলেও জানান মার্কাস। তিনি জানান, রাষ্ট্রপুঞ্জ দ্বারা ঘোষিত সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে এখনও তেমন কড়া পদক্ষেপ করে উঠতে পারেনি পাকিস্তান। তাদের দেওয়া সময়সীমার মেয়াদও পেরিয়েছে। কেন এই ঢিলেমি, কোথায়, কী সমস্যা হচ্ছে, তা যত শীঘ্র সম্ভব জানাতে হবে পাকিস্তানকে। সন্ত্রাসবাদীদের কড়া সাজা দিতে হবে সে দেশের আদালতকে। তবেই সন্ত্রাসদমনে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকবে না।
শুধু তাই নয়, বেআইনি লেনদেন, সীমান্তে আর্থিক চোরাচালান রুখতেও পাকিস্তান তেমন কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি বলে জানায় এফএটিএফ। ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করে রাখার পক্ষে সবচেয়ে বেশি সওয়াল করতে দেখা যায় ফ্রান্সকে। ফরাসি পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’য় প্রকাশিত মহম্মদের একটি কার্টুন পড়ুয়াদের দেখানোয়, গত বছর প্যারিসে এক শিক্ষককে শিরচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ‘ইসলাম ধর্মকে এক ভয়াবহ সঙ্কট’ বলে উল্লেখ করে বিতর্কে জড়ান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাঁকড়। সেই সময় মাঁকড়ের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে ইসলামাবাদ। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অভিযোগ করেন, ইসলাম নিয়ে অযথা মানুষের মনে ভয় সঞ্চার করছেন মাঁকড়। সেই থেকেই দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।
তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এফএটিএফ-এর এমন কড়া অবস্থানের পিছনে আরও একটি কারণ থাকতে পারে। আর তা হল আমেরিকার সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ওমর সইদ শেখ-কে সম্প্রতি বেকসুর খালাস করেছে পাক সুপ্রিম কোর্ট। তা নিয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাদের। এ ছাড়াও, জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার, লস্কর-ই-তৈবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদ, সংগঠনের অপারেশনাল কমান্ডার জাকিউর রহমান লকভির মতো কুখ্যাত জঙ্গিরাও অবাধে ঘুরছে সেখানে। ২৬/১১, ২০১৯-এর পুলওয়ামা-সহ ভারতের মাটিতে একাধিক নাশকতামূলক হামলার পিছনে তাদের হাত রয়েছে। পাক সরকার তাদের আড়াল করে আসছে বলে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ তুলে আসছে ভারত। সামান্য পরিমাণে হলেও এক দিন আগেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খানিকটা মেরামত করতে উদ্যোগী হয়েছে পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অস্ত্রবিরতি বজায় রাখতে ভারতের শর্তে সম্মত হয়েছে তারা।
কূটনৈতিকদের একটা বড় অংশের মতে, এফএটিএফ-এর সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মহলে বড় ধাক্কা খেল ইমরান খানের সরকার। কারণ ধূসর তালিকাভুক্ত থাকাকালীন আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ), বিশ্বব্যাঙ্ক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে কোনও রকম অর্থনৈতিক সাহায্য পাবে না তারা। ঋণের ভারে এই মুহূর্তে জর্জরিত পাকিস্তান। তাই অর্থনৈতিক সাহায্য না পেলে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়বে দেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy