এ বার ‘খেলা হবে’ মেডিক্যাল কলেজে। রাজ্য জুড়ে।
রাজ্যের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজকে নিয়ে রাজ্য স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে স্বাস্থ্যভবন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, এমন উদ্যোগ এই প্রথম। আর জি কর-কাণ্ডের পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্যের এই উদ্যোগ ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম মানছেন, “মেডিক্যাল কলেজে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে পরিকল্পনা করে দিয়েছেন। তা সামনে রেখেই আমরা এগোচ্ছি। মেডিক্যাল কলেজগুলির সঙ্গেও আলোচনা চলছে। শীঘ্রই প্রতিযোগিতার দিনক্ষণ নির্ধারণ হবে।” তিনি জানান, ফুটবল, ক্রিকেট-সহ নানা ‘ইভেন্ট’ থাকবে প্রতিযোগিতায়।
আর জি কর-কাণ্ডের পরে ডাক্তারি পড়ুয়াদের একাংশের আন্দোলন ছড়ায় রাজ্য জুড়ে। প্রতিবাদ উচ্চকিত না হলেও ক্ষোভের চোরাস্রোত রয়েছে। আন্দোলনকারীরা এখনও বলছেন, চিকিৎসক-ছাত্রীর খুন-ধর্ষণের বিচার মেলেনি। এই আবহে কিছু দিন আগে রাজ্যের সব হাসপাতালের সরকারি চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধি-সহ একাধিক ঘোষণা হয়েছে। এ বার আয়োজন হচ্ছে আন্তঃমেডিক্যাল কলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার।
ওয়াকিবহালদের অনুমান, ডাক্তারি পড়ুয়াদের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতর ও সরকারের ‘দূরত্ব’ ঘোচাতে বাছা হচ্ছে খেলার মাঠকে। স্বাস্থ্যসচিবও বলেন, “পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি সব সময় ভাল, যে ভাবেই হোক না কেন।” বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুর দাবি, “এক সময় বিভিন্ন কলেজ একক উদ্যোগে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করত। তবে তাতে সমস্যাও ছিল। সরকারি ভাবে সার্বিক উদ্যোগে প্রতিটি কলেজে ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। ডাক্তারি পড়ুয়া বা চিকিৎসকদের চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে খেলা।”
এ নিয়ে ডাক্তারি পড়ুয়াদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাঁকুড়া মেডিক্যালের এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, “আর জি করের ডাক্তার দিদির হত্যাকাণ্ডে যথাযথ বিচার না পাওয়ায় আমরা হতাশ। এখন রাজ্য সরকার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেও ব্যক্তিগত ভাবে আমরা অনেকেই অংশ নিতে ইচ্ছুক নই।” আবার জুনিয়র ডাক্তারদের কেউ কেউ বলছেন, “এখনও আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। দেখা যাক, কী হয়।”
প্রতিযোগিতার প্রস্তুতিতে ইতিমধ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলির সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলেজগুলির ক্রীড়া পরিকাঠামো উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দের কথাও বলা হয়েছে। সে জন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিকে পরিকল্পনা বানিয়ে রাজ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বহু কলেজ ইতিমধ্যে পরিকল্পনা তৈরির কাজে নেমেও পড়েছে। যেমন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে খেলার মাঠ থাকলেও, তার সংস্কার জরুরি। বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার অর্পণকুমার গোস্বামী বলেন, “খেলার মাঠটিতে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ার জন্য আমরা পরিকল্পনা করছি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)