সঠিক পরামর্শ ও সুযোগ পেলে দেশে মহিলা উদ্যোগপতির সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়তে পারে, দাবি বিশেষজ্ঞদের। শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আর্থিক বৃদ্ধিতে মহিলাদের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে সকলেরই বক্তব্য, প্রকৃতিগত ভাবেই তাঁদের মধ্যে শৃঙ্খলা বোধ অনেক বেশি। যে কারণে ঠিকঠাক ঋণের টাকা শোধ করায় এগিয়ে মহিলারা। অনেকের মধ্যে উদ্ভাবন ক্ষমতাও বেশি। উপযুক্ত পরামর্শদাতার সাহায্যে সঠিক পথে হাঁটলে বহু নারীই উদ্যোগপতি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞেরা এটাও মনে করেন, এখনও ভারতে বেশির ভাগ মহিলার এগোনোর পথে একাধিক বাধা আছে। সবই যে আর্থিক, তা নয়। বরং সিংহভাগ সামাজিক।
ক্ষুদ্রঋণ ও ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ, বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক হওয়ার আগে বন্ধন ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করেছে। অভিজ্ঞতা বলে, মহিলাদের মধ্যে যেমন সংসার সমালানোর দক্ষতা রয়েছে, তেমনই রয়েছে উদ্যোগপতি হওয়ার গুণ। কিন্তু আফশোসের বিষয়, তাঁদের সম্ভাবনাগুলিকে বিকশিত করে তোলার মতো সংগঠিত ব্যবস্থা নেই।’’
তাঁর সঙ্গে একমত ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার। তিনি বলেন, ‘‘সংসারের মতো ব্যবসার ক্ষেত্রেও মহিলাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে।’’ দেবব্রতের কথায়, “সিএমডি থাকার সময়ে ছত্তীসগঢ়ের প্রত্যন্ত গ্রামের এক মহিলাকে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য বিশেষ পুরস্কার দিয়েছিলাম। ওই
গ্রামে এ ধরনের গোষ্ঠী ছিল না। তাঁর নেতৃত্ব অনেকগুলি চালু হয়।’’ তিনি মনে করেন, মহিলা উদ্যোগপতি তৈরির জন্য ব্যাঙ্কের বিশেষ পরিকল্পনা চাই।
দার্জিলিঙের এক মহিলা ১০,০০০ টাকা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে রেস্তোরাঁ চালু করে ১২ বছরের মধ্যে কী ভাবে নিজে ভাল রোজগার করার পাশাপাশি ১৫ জনের কাজের ব্যবস্থা করেছেন, তার উদাহরণ দেন চন্দ্রশেখর। তবে তিনি মনে করেন, মহিলাদের উদ্যোগপতি হওয়ার পথে একাধিক সামাজিক বাধা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম বাধা বিয়ে। বিয়ের পরে অনেক সময়েই মহিলাদের সংসারের শান্তি রক্ষার খাতিরে নিজেদের ইচ্ছের সঙ্গে আপস করতে হয়। ব্যবসা দূরের কথা, স্বামী বা তাঁর বাড়ির ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে চাকরি করতে পারেননি, এমন উদাহরণ অসংখ্য। দ্বিতীয় বাধা আসে সন্তান হওয়ার পরে। এখনও সমাজে সন্তান প্রতিপালনের প্রধান ভূমিকা মায়েদেরই পালন করতে হয়। তিনি যদি কোনও ব্যবসা শুরুও করেন, সন্তান হওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রেই তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।’’
তবে তাঁরা দু’জনেই এক বাক্যে মানছেন, সময়ে ঋণের টাকা শোধের ক্ষেত্রে মহিলাদের জুড়ি মেলা ভার। তাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অনুৎপাদক সম্পদের হার ৫ শতাংশের কম। দেশে এখন মহিলা উদ্যোগপতিদের আর্থিক সহায়তার বেশ কিছু প্রকল্প চালু হয়েছে। কিন্তু তার হদিশ অনেকেই জানেন না। তাই তাঁদের মতে, ঠিক পরামর্শ ও পথ নির্দেশিকা পেলে মহিলাদের মধ্যে উদ্যোগপতি হওয়ার যে গুণ রয়েছে তা বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে সময়ে ধার শোধের রাস্তা তৈরি হওয়ায় ব্যাঙ্কিং শিল্পও উপকৃত হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)