Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ডুবল লিবিয়ার নৌকা, শতাধিক শরণার্থীর মৃত্যুর আশঙ্কা

লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে ঢুকতে গিয়ে ফের ডুবে গেল উদ্বাস্তু বোঝাই একটি নৌকা। ওই নৌকাটিতে অন্তত ৭০০ উদ্বাস্তু ছিলেন বলে আশঙ্কা। এঁদের মধ্যে ২৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি, ২৪ জনের মৃতদেহও পাওয়া গিয়েছে। দিন কয়েক আগেই অবৈধ ভাবে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৪০০ শরণার্থী। ওই ঘটনার পর এক সপ্তাহও কাটেনি। তার মধ্যেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

চলছে উদ্ধারকার্য। এএফপি-র তোলা ছবি।

চলছে উদ্ধারকার্য। এএফপি-র তোলা ছবি।

সংবাদ সংস্থা
রোম শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে ঢুকতে গিয়ে ফের ডুবে গেল উদ্বাস্তু বোঝাই একটি নৌকা। ওই নৌকাটিতে অন্তত ৭০০ উদ্বাস্তু ছিলেন বলে আশঙ্কা। এঁদের মধ্যে ২৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি, ২৪ জনের মৃতদেহও পাওয়া গিয়েছে।

দিন কয়েক আগেই অবৈধ ভাবে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৪০০ শরণার্থী। ওই ঘটনার পর এক সপ্তাহও কাটেনি। তার মধ্যেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

এ দিন ইতালীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, শনিবার রাতের অন্ধকারে জলপথে বেআইনি ভাবে ইউরোপে প্রবেশ করছিলেন প্রায় ৭০০ শরণার্থী। সেই সময় উল্টো দিক থেকে আসছিল পর্তুগালের একটি বাণিজ্যিক জলযান। সেটি দেখতে পেয়ে ওই উদ্বাস্তুরা নৌকার এক দিকে চলে যান। ফলে উদ্বাস্তু বোঝাই ওই নৌকাটি উল্টে যায়। লিবিয়া উপকূল থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ওঁরা ভেবেছিলেন উল্টো দিক থেকে আসা ওই নৌকাটি হয়তো তাঁদের উদ্ধার করতে আসছে। ফলে ওই নৌকাটির দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই নৌকাটির এক দিকে চলে এসেছিলেন তাঁরা।

উদ্ধারকাজের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ইতালীয় নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর নৌকা। এ ছাড়াও রয়েছে বাণিজ্যিক নৌকা এবং মাল্টার টহলদার নৌকাও। ইতালীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, আজ সকাল পর্যন্ত প্রায় ২৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আবার মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাস্কট দাবি করেছেন, শনিবার রাতের ওই নৌকা়ডুবির ঘটনায় প্রায় ৫০ জন বেঁচে গিয়েছেন।

রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র কার্লোত্তা সামি জানিয়েছেন, প্রায় ৭০০ যাত্রীকে নিয়ে ওই নৌকাটি রওনা হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত ওই নৌকায় ঠিক কত জন শরণার্থী ছিলেন তা জানা যায়নি। উদ্ধার হওয়া শরণার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তা জানার চেষ্টা করছে ইতালীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর অফিসাররা। এ দিকে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী ম্যাতিউ রেন্‌জি আজ এ প্রসঙ্গে আলোচনা করার জন্য দেশের অন্যান্য মন্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছেন।

লিবিয়া সহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে ওই শরণার্থীরা ইউরোপে আসছিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে ঢোকার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বহু বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হামেশাই ওই শরণার্থীরা ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে ঢোকেন। গত ১৫ এপ্রিল বেআইনি ভাবে ইউরোপে ঢুকতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৪০০ জন। এ নিয়ে এই বছরে অবৈধ ভাবে ইউরোপে ঢুকতে গিয়ে মারা গিয়েছেন অন্তত দেড় হাজার উদ্বাস্তু। দারিদ্র, হিংসা ও সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এঁরা প্রায়ই ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছেন। ২০১১ সালে লিবিয়ায় মুয়াম্মর গদ্দাফি জমানার অবসানের পর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তার পর থেকেই সেখানকার বহু মানুষ ইউরোপে চলে এসেছেন। গত বছরও এ ধরনের ঘটনায় প্রায় তিন হাজার শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। তবে এ বারের ঘটনা আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলি।

এই সপ্তাহে লিবিয়ায় কয়েক জন শরণার্থীর সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে। এমনই এক শরণার্থী বছর একুশের যুবক মহম্মদ আবদাল্লাহ। তিনি সুদান থেকে লিবিয়ায় পালিয়ে এসেছেন। এখন সেখান থেকে প্রাণে বাঁচতে ইউরোপে ঢুকতে চাইছেন আবদাল্লাহ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমার দেশে লড়াই চলছে। ফলে দেশে কোনও নিরাপত্তা নেই, এমনকী স্বাধীন ভাবে বাঁচতেও পারছিলাম না ওখানে। ফলে লিবিয়ায় এসেছিলাম। এখানেও তো আমার দেশের মতোই অবস্থা। এখন আমি এখানেও থাকতে পারছি না, আবার নিজের দেশেও ফিরতে চাইছি না। ফলে এখন ইউরোপে যাওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।’’

নৌকাডুবির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। সেই সঙ্গে তিনি আর্জি জানিয়েছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতালির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক ইউরোপ। এ দিন সেন্ট পিটারস স্কোয়ারে একটি প্রার্থনা সভায় নৌকাডুবিতে মৃতদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে পোপ বলেন, ‘‘ওঁরাও মানুষ। আমাদেরই মতো। সংঘর্ষ ওই শরণার্থীদের সব কিছুই কেড়ে নিয়েছে। ফলে ভাল জীবনযাপনের আশায় হামেশাই ওঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE