বন্ধ ব্যাঙ্কের সামনে পেনসনের অপেক্ষা। ছবি: এএফপি।
সঙ্কটের শেষ কিনারায় গ্রিস। বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার গ্রিস সরকার ঘোষণা করল আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি তাদের পক্ষে শোধ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে ঋণদাতাদের কাছে দু’বছরের জন্য আর্থিক ত্রাণের প্যাকেজ ও জমে ওঠা ঋণের পুণর্গঠনেরও দাবি করল গ্রিস সরকার। এ দিন ওয়াশিংটনের সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আইএমএফ-কে ১৬০ কোটি ইউরো গ্রিসকে দিতে হতো। এ দিনই আবার নতুন ঋণ নিয়ে শর্ত মানার শেষ দিন ছিল গ্রিসের। যদিও ‘সুকৌশলে’ গণভোটের ঘোষণা করে সেই শর্ত মানার সময়ও খানিকটা পিছিয়ে দিয়েছে গ্রিস সরকার। যাতে বেশ অসন্তুষ্ট ঋণদাতারা।
সোমবার গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপ্রাস ভোটারদের এই গণভোটে ‘না’-ভোট দিতে অনুরোধ করেছেন। গণভোটের ফল নেতিবাচক হলে শর্ত নিয়ে আরও আলোচনা করতে গ্রিসের সুবিধা হবে বলে সিপ্রাস জানিয়েছেন। তবে গণভোটের ফল ‘হ্যাঁ’ হলে তিনি পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু আরও আলোচনা চালাতে ঋণদাতারা আগ্রহী হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ‘না’-ভোট জিতলে গ্রিসকে ইউরো ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছে ঋণদাতারা।
‘না’-ভোটের পক্ষে সোমবার গ্রিসের পার্লামেন্টের সামনে বড় জমায়েত হয়। এ দিন সেখানে ‘হ্যাঁ’-ভোটের পক্ষে জমায়েত হওয়ার কথা। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এ মুহূর্তে প্রায় ৬৭ শতাংশ গ্রিসবাসী ইউরোপীয় ইউনিয়নে মধ্যেই থাকার পক্ষে। ব্যক্তিপিছু প্রতিদিন ৬০ ইউরো তোলা যাবে বলে ঠিক করে দিয়েছে গ্রিস সরকার। ৬ জুলাই পর্যন্ত গ্রিসের ব্যাঙ্ক, শেয়ারবাজার বন্ধ থাকায় সোমবার থেকেই এটিএম-এর সামনে লম্বা লাইন পড়তে দেখা যায়। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত লাইন কমেনি। যাঁদের কাছে এটিএম কার্ড নেই, বিশেষ করে প্রবীণদের ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (ইসিবি) ইতিমধ্যেই গ্রিসের ব্যাঙ্কগুলিকে সাহায্য করতে তাদের তহবিল থেকে ৮ কোটি ৯০ লক্ষ ইউরো ব্যয় করেছে। ফলে ইসিবি থেকে গ্রিসের ব্যাঙ্কগুলি আর কোনও অর্থসাহায্য পাবে না। গ্রিসকে আর সাহায্য না-করার জন্য জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মর্কেল-এর উপরে চাপ বাড়িয়েছে সে দেশের পার্লামেন্ট। একই চাপ আছে অন্য দেশের নেতাদের উপরেও।
গ্রিসের ‘না’ ভোটের পক্ষেই মত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজৎ এবং পল ক্রুগম্যান-এর মতো অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞেরও। তাঁদের আশঙ্কা, আবার ব্যয় কাটছাঁটের শর্তগুলি মানলে গ্রিসের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ, বিগত পাঁচ বছরে ব্যয় হ্রাসের পর গ্রিসের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। তার থেকে ইউরো ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মুদ্রায় ফিরে গেলে গ্রিসের সুবিধা হবে বলেই এঁদের মত। সে ক্ষেত্রে মুদ্রার অবমূল্যায়ণ হলে গ্রিসের রফতানি ক্ষেত্রে বিকাশের সম্ভবনা থাকবে। তাই প্রাথমিক ভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উপরে চাপ পড়লেও গ্রিসের দীর্ঘমেয়াদী লাভ হবে। ইউরো ব্যবস্থা আদৌ বজায় রাখা সম্ভব কি না তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ঋণদাতাদের এখনও আশা শেষ পর্যন্ত গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy