পরিবারের ছবি হাতে গীতা। করাচিতে। ছবি: এএফপি।
এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!
সেই এক যুগ আগে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল বছর এগারোর মেয়েটা। জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না। শুনতেও পায় না। ফলে অজ্ঞাতপরিচয় মেয়েটার নতুন নামকরণ করা হয়েছিল গীতা। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যস্থতায় মেলে আশ্রয়ও। তার বারো বছর পরে পরে সুদূর পাকিস্তানে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটাকে পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিল একটা সিনেমা! সলমন খান অভিনীত ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ নামের ওই ছবিতে দেখানো হয়, ভারতে এসে কী ভাবে মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায় ছোট্ট একটি পাকিস্তানি মেয়ে। ঘটনাচক্রে, পর্দার সেই মেয়েটিও ঠিত গীতার মতোই কথা বলতে পারত না! দীর্ঘ লড়াইয়ের পর শেষমেশ এক ভারতীয় যুবকের হাত ধরে বাড়ি ফেরে মেয়েটি। সিনেমাটির জনপ্রিয়তা সীমান্ত পেররোতেই সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে গীতার কাহিনি। আজ ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, অবশেষে নথিপত্রের জটিলতা কাটিয়ে গীতাকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে তারা।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই মাসের প্রথমে বিহারের এক বাসিন্দা গীতাকে তাঁর হারিয়ে যাওয়া মেয়ে বলে চিহ্নিত করেছে। জনার্দন মাহাতো নামে ওই ব্যক্তির দাবি, গীতার আসল নাম হিরা। একটি মেলায় হারিয়ে গিয়েছিল সে। জনার্দনের পরিবারে রয়েছে তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী এবং সাত সন্তান। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের মধ্যস্থতায় ছবি দেখে বছর একুশের গীতাও চিনতে পেরেছেন বাবা এবং সৎমাকে। ফলে, সরকারি ভাবে এ বার শুরু হয়ে গিয়েছে গীতাকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আজ টুইট করেছেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি গীতা দেশে ফিরে আসবে। ওঁর পরিবারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পরে গীতাকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’
সূত্রের খবর, আগামী সোমবারই করাচি থেকে নয়াদিল্লি উড়ে আসবেন গীতা। তাঁর পরিবারের লোকজন ইতিমধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আসতে পারেন পাকিস্তানে গীতার মা তথা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী বিলকিস ইদহি। এত দিন যে ঘরে তিনি থাকতেন, সেই ঘরে ওই সংস্থার তরফে একটা ছোট মন্দির বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই মন্দিরে সারি সারি হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি-ছবির সামনে রোজ সকালে পুজোও করতেন। বাড়ি ফেরার গোছগাছ করতে করতে গোটা মন্দিরটাই বাক্সবন্দি করে ফেলেছেন গীতা। গুছিয়ে নিয়েছেন মূর্তিগুলোও।
ওই সংগঠনের তরফে জানা গিয়েছে, ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানে এসেছিলেন গীতা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য নিজের পরিচয়টুকুও দিতে পারেননি। সম্প্রতি ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন গীতা। সিনেমার সঙ্গে বাস্তবের এমন বেনজির মিলের কথা চটজলদি ছড়িয়ে পড়ে দু’দেশের আনাচকানাচে। গীতাকে দেশে ফেরানোর প্রশ্নে সাহায্যের হাত বাড়ান ছবির প্রধান অভিনেতা সলমনও। তৎপর হয় ভারতের বিদেশমন্ত্রক। ছবির মতোই গীতাকেও যে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হবে, মেলে সেই আশ্বাসও।
কথা রেখেছে মন্ত্রক। ঘরে ফিরছে ঘরের মেয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy