সিরিয়া ছেড়ে ঠাঁই হয়েছে জর্ডনের মাফরাক শহরের একটি শরণার্থী শিবিরে। কিন্তু তার পর থেকেই খোঁজ নেই মা-বাবার। শিবিরের বাইরে সাইকেলে বসে বাবার অপেক্ষায় এক খুদে। ছবি: রয়টার্স
দফায় দফায় সংঘর্ষ-বিরতি ঘোষণা। এবং দফায় দফায় চুক্তিভঙ্গ! বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন সিরীয় শহর আলেপ্পোয় গত এক সপ্তাহের ছবি এটাই!
তবে গত কালের মতোই আজ সকালেও জারি হয়েছে সংঘর্ষ-বিরতি। সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের তাণ্ডবে রক্তাক্ত আলেপ্পোয় আটকে থাকা কয়েক হাজার মানুষকে নিরাপদে উদ্ধার করতে রবিবার ফের শুরু হয়েছে উদ্যোগ।
সূত্রের খবর, আজ সকালে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে সরকার এবং বিদ্রোহীদের একাংশ। পূর্ব আলেপ্পোর ‘সেফ করিডরে’র মাধ্যমে উদ্ধারকাজ সারতে মাঠে নেমেছে রেড ক্রেসেন্ট ও রেড ক্রস। রবিবার আরও একটি নতুন পরিকল্পনার কথাও সামনে এসেছে। যেখানে বলা হচ্ছে, উদ্ধারকাজের প্রথম দফায় যুদ্ধবিধ্বস্ত এই শহর থেকে বার করে আনা হবে বন্দিদের। পাশাপাশি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা ইদলিব প্রদেশের ফোয়া থেকেও উদ্ধার করা হবে তেরোশো মানুষকে। দ্বিতীয় দফায় আলেপ্পো থেকে সরানো বন্দিদের বাকি অর্ধেককে। ইদলিবের আর এক বিরোধী অধ্যুষিত শহর কেফ্রায়াতেও চলবে উদ্ধার অভিযান।
যদিও সরকারি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ফোয়া এবং কেফ্রায়াতে উদ্ধারকাজে আসা পাঁচটি বাসে আজ হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। রেড ক্রসের এক কর্তার কথায়, ‘‘উদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে রবিবার ফের এক দফা চুক্তি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আমাদের দল সেই মতো এগিয়েছে।’’ সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরে উদ্ধারকাজের সবুজ সঙ্কেত মিলেছে বলে তাঁর দাবি।
অন্য দিকে, রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে এ দিন আলেপ্পো পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারির আর্জি জানিয়েছে ফ্রান্স। ফরাসি প্রশাসনের দাবি, আমজনতার সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে পর্যবেক্ষক পাঠাক তারা। পাশাপাশি ফ্রান্সের এ-ও আশঙ্কা, রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাবে বাধা দিতে পারে সিরীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ রাশিয়া।
প্রসঙ্গত, আলেপ্পোয় উদ্ধারকাজ ও গুড়িয়ে যাওয়া হাসপাতালগুলিতে অভিযানের প্রশ্নে আগামী সপ্তাহান্তেই একটি ভোটাভুটি হওয়ার কথা রাষ্ট্রপুঞ্জের সুরক্ষা পর্যদে। গত কালই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আলেপ্পোয় সফল ভাবে উদ্ধার-অভিযান চালাতে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাব সামনে এনেছিলেন। সেই একই প্রেক্ষিতে ফ্রান্সও আসন্ন ভোটাভুটির জন্য একটি খসড়া তৈরি করেছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে অভিযুক্ত সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের সরকার সেই প্রস্তাবের কী জবাব দেবে, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। এই নিয়ে পাঁচ দিনের মধ্যে বিবৃতি প্রকাশের কথা রাষ্ট্রপুঞ্জের বিদায়ী মহাসচিব বান কি মুনের।
গত কালই সিরিয়ার পরিস্থিতিকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। আলেপ্পোর অবস্থা নিয়ে সুর চড়িয়ে আসাদ সরকার ও তার ঘনিষ্ঠ ইরান ও রাশিয়াকে একহাত নিয়েছে আমেরিকাও। বোমা ফেলে আলেপ্পোর হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধেও। ধুলোয় মিশে যাওয়া শহরে অবিরাম গোলাগুলি, চিকিৎসা পরিষেবার অভাব এবং আলেপ্পোর বিচ্ছিন্ন দ্বীপের চেহারা নেওয়ায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। যুদ্ধে দীর্ণ আলেপ্পো থেকে অন্তত আহত, অসুস্থ ও বৃদ্ধদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেছে তারা। তবে ক্রমাগত সংঘর্ষ-বিরতি ঘোষণা ও তা ভেস্তে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
সিরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আজ দুপুরের পর থেকে বেশ কিছু মানুষকে শহরের বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে তাতে যে আশঙ্কার মেঘ কাটছে না, স্পষ্ট হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিবৃতিতে। তারা জানাচ্ছে, আলেপ্পো থেকে যে আহত ও অসুস্থ শিশুদের উদ্ধার করা হচ্ছে, তাদের অনেকের সঙ্গেই বাবা-মা নেই। ফলে প্রাণে বাঁচলেও সেই শিশুদের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy