অভিনেত্রী-বিধায়ক দেবশ্রী রায়
অপমান সহ্য করতে করতে ধৈর্যের সীমা পার হয়ে গিয়েছে বলেই শোভন চট্টোপাধ্যায়-বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন অভিনেত্রী-বিধায়ক দেবশ্রী রায়। শনিবার রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী আলিপুর আদালত চত্বরে এমনই মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে দেবশ্রীর অভিযোগ, তাঁকে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই ওঁরা আমাকে অপমান করছেন! একজন শিল্পী হিসেবে গোটা দেশ আমাকে চেনে। আমি এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু রায়দিঘিতে গিয়ে ওঁরা যা বলেছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।’’ সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হল তাতে, নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে একাধিক আইনি যুদ্ধে আরও একটি যুক্ত হল।
গত ২১ জানুয়ারি রায়দিঘিতে এক জনসভায় গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। সেখান জনসভা থেকে স্থানীয় বিধায়ক দেবশ্রীর সমালোচনায় মুখর হন দু’জনেই। অভিযোগ, শোভন সেখানে দেবশ্রীকে ‘অযোগ্য বিধায়ক’ বলে দাবি করেন এবং ২০১৬ সালের ভোটে তাঁকে জেতানোর জন্য এলাকার মানুষের কাছে ক্ষমা চান। সঙ্গে নাম না করে টোটো কেলেঙ্কারি নিয়ে দেবশ্রীকে আক্রমণ করেন। একই সুরে দেবশ্রীর সমালোচনা করেন বৈশাখীও। বলেন, ‘‘উনি তো সিনেমাতেও নেই। রাজনীতিতেও নেই!’’
শনিবার দেবশ্রী শোভনের নাম নিলেও বৈশাখীর নাম মুখে আনেননি। শোভনের বান্ধবীকে তিনি ‘ওই মহিলা’ বলে উল্লেখ করেন। দেবশ্রী বলেন, ‘‘ওই মহিলার নাম নিতে চাই না। যেটা প্রাণে আসছে, সেটাই বলছেন, তাও আমি কিছু বলিনি। একতরফা বলছেন, আর আমি নিতে পারছি না।’’ এটুকুই নয় এদিন দেবশ্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ওই মহিলা আমার সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি রাজনীতিতেও নেই, সিনেমাতেও নেই’। উনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। বলেছেন, আমি আমপানের পর আমি নাকি দেশপ্রিয় পার্কে বসে গান গাইছিলাম! আমি নাচি বা গাই, তার কৈফিয়ত ওঁকে দেব কেন! আমি আমার যা পছন্দ সেটা করতেই পারি। সেটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ। সিনেমা না করাটাও আমার পছন্দ। উনি বলেছেন, আমি বাতিল নায়িকা।বহু বছর ধরে আমি সারা দেশের মনোরঞ্জন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি।’’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা টোটো কেলেঙ্কারি নিয়েও মুখ খোলেন দেবশ্রী। তাঁর দাবি, তিনি চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। যে টাকাটা জালিয়াতি করেছে, সে গা ঢাকা দিয়েছে। তিনি তা আগে বুঝতে পারেননি, ভেবেছিলেন, গরিব মানুষের ভাল হবে।
দেবশ্রীর আইনজীবী বলেন, ‘‘উনি একজন অভিনেত্রী এবং পশুপ্রেমী। ওঁরা টিভি-তে দেবশ্রী রায়ের সম্পর্কে ন্যক্কারজনক মন্তব্য করেছেন। ওঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। আদালত মামলা গ্রহণ করেছেন। এই মামলা এখন চলবে।’’ শনিবার আদালত চত্বরে শোভনকেও নিশানা করেন দেবশ্রী। তিনি বলেন, ‘‘শোভন বলেছেন, উনি প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছেন। আমি অপদার্থ হলে শোভন জেতাতে নিয়ে এলেন কেন? শোভন চট্টোপাধ্যায় মতো মানুষেরা সামাজিক অস্বস্তি। পরিবার, সন্তানের কাছে, স্ত্রীর কাছে যে আপন নয়, সে কত বড় নেতা? সে কি জনপ্রিয় নেতা হতে পারে? মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারে?’’ তিনি এমন দাবিও করেন যে, তাঁকে ভয় পাচ্ছেন শোভন-বৈশাখী। রায়দিঘিতে গিয়ে স্থানীয় মানুষের কাছে জানার চেষ্টা হোক, তিনি কেমন বিধায়ক। কারও কাছ থেকে তিনি কোনও দিন একটা পয়সাও নেননি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় রায়দিঘির মানুষ হাসছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
রায়দিঘিতে বিজেপি-র সভায় শোভন-বৈশাখী যা যা বলেছেন তার ভিডিয়ো ফুটেজ ও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের লিংক নিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন দেবশ্রী। তাঁর দাবি, দলীয় নেতৃত্বের থেকে অনুমতি নিয়েই আইনি পথে হেঁটেছেন তিনি। দল পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছে। সকালে দেবশ্রী মামলা করতে চলেছেন জানার পরে বৈশাখী অবশ্য আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছিলেন, ‘‘উনি যখন আদালতে গিয়েছেন তখন জবাবও দেওয়া হবে আদালতেই।’’ অর্থাৎ, শোভন-বৈশাখী তাঁদের বক্তব্য থেকে সরে আসার কারণ দেখছেন না।
প্রসঙ্গত, ২০১১ এবং ২০১৬ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি আসন থেকে জিতে বিধায়ক হন দেবশ্রী। তৃণমূলের একাংশের মতে, দেবশ্রীকে জেতাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন তখন দলের জেলা সভাপতি শোভন। দেবশ্রীকে দ্বিতায়বার প্রার্থী করার পিছনেও শোভনের পছন্দকেই দল গুরুত্ব দিয়েছিল। কিন্তু বিবাদ শুরু হয় শোভন বিজেপি-তে যোগদানের দিন থেকে। ২০১৯ সালের ১৪ অগস্ট গেরুয়া শিবিরে শোভন-বৈশাখীর যোগদানের দিনেই আচমকা নয়াদিল্লির বিজেপি সদর দফতরে হাজির হন দেবশ্রী। কিন্তু দেবশ্রীকে দলে নেওয়া হলে শোভন-বৈশাখীর যোগদান যে আটকে যাবে, তা বুঝতে পেরেছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। ফলে দেবশ্রীকে যোগদান না করিয়েই ফেরত পাঠানো হয়। শোভন-বৈশাখীকে দলে স্বাগত জানানো হয়। দলের পতাকা আনুষ্ঠানিক ভাবে হাতে তুলে নেওয়ার পরে শোভনরা জানিয়ে দেন, দেবশ্রীকে দলে যে দিন নেওয়া হবে, সে দিনই তাঁরা দল থেকে ইস্তফা দেবেন।
এর পরেও দেবশ্রী গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাড়িতে। অবশ্য দীর্ঘ অপেক্ষা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে দিলীপের দেখা হয়নি। সেদিন দেখা না হলেও পরে দিলীপ-দেবশ্রী কথা হয়েছিল। তখন আবার দিলীপ দাবি করেছিলেন, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের অনুরোধেই নাকি তিনি দেবশ্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তবে তার পর আর দেবশ্রীর বিজেপি-তে যোগ দেওয়া নিয়ে কোনও আলোচনা সামনে আসেনি। দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে যাওয়া বা দিলীপের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে প্রকাশ্যে দেবশ্রীকে কোনও প্রশ্ন করেনি তৃণমূলও। শোভন-বৈশাখী দেবশ্রীকে নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পরে ফের তা সামনে এল। গড়িয়ে গেল আদালতের আঙিনাতেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy