অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। —ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণের জবাব দিতে এ বার তাঁর ‘গড়’কেই বেছে নিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে শুভেন্দুর রাজনৈতিক প্রচারের অস্ত্রকেও সরাসরি নিশানা করে মেদিনীপুরের ‘পবিত্র মাটির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগ তুললেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শনিবার কাঁথির জনসভার বক্তৃতায় একাধিক বার সরাসরি শুভেন্দুর নাম নিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ।
শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার প্রায় দেড় মাস পর কাঁথিতে সভা করতে এসে অভিষেকের অভিযোগ, ‘‘মেদিনীপুরের মাটিকে কলুষিত করে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন উনি।’’ মেদিনীপুর জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, মাতঙ্গিনী হাজরা, সতীশ সামন্ত, সুশীল ধাড়াদের নামও এসেছে অভিষেকের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায়। এসেছে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ। এর পরেই শুভেন্দুর উদ্দেশে অভিষেকের কটাক্ষ, ‘‘সে দিন যে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল, এখন তার পায়ে হাত দিয়েই প্রণাম কর।’’
শুভেন্দুর ‘তোলাবাজ ভাইপো’ প্রচারের জবাবে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠির প্রসঙ্গ তুলেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘কাদের জন্য তিনি (সুদীপ্ত) সর্বস্বান্ত হলেন, তা নিজেই লিখেছেন।’’ রাজনীতির জন্য বিয়ে না করার কথা একাধিক বার বিভিন্ন সভায় বলেছেন শুভেন্দু। এ প্রসঙ্গে অভিষেকের খোঁচা, ‘‘উনি নিজেকে অকৃতদার বলেন। আসলে উনি অকৃতজ্ঞ। মেদিনীপুরের আবেগ এবং বিশ্বাসকে দিল্লির কাছে বিক্রি করেছেন।’’ অভিষেকের দাবি, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে বলা হয়ে মেদিনীপুর না কি অধিকারী পরিবারের গড়। মেদিনীপুর কোনও পরিবারের গড় নয়।’’
কাঁথিতে অধিকারী পরিবারের বাসভবন ‘শান্তিকুঞ্জ’র নাম এসেছে অভিষেকের বক্তৃতায়। জনতার উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘জোরে আওয়াজ তুলুন। পাঁচ কিলোমিটার দূরেই তো শান্তুকুঞ্জ। সেটা যেন থরথর করে কাঁপে।’’ শুভেন্দু এবং তাঁর পরিবারের নাম না করে ‘মিরজাফর অ্যান্ড কোম্পানি’কে ‘মেদিনীপুর থেকে বিতাড়িত’ করারও আহ্বান জানান।
গত ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে করে এর আগে শুভেন্দুকে ‘উপসর্গহীন করোনা’ বলেছিলেন অভিষেক। শনিবার বলেন, ‘‘নিজেই স্বীকার করেছে, ২০১৪ সাল থেকে বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আমরা তো জানতাম। তাই ওকে বিশ্বাস করিনি।’’
আগামী বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হবেন জানিয়ে শুভেন্দুর উদ্দেশে অভিষেক বলেন, ‘‘আপনি তো নিজেকে জননেতা বলেন, দায়িত্ব নিয়ে বলছেন না কেন, নন্দীগ্রাম থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির টিকিটে শুভেন্দু অধিকারীকে প্রার্থী করুন, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। প্রকাশ্যে ইচ্ছাটুকু তো প্রকাশ করুন।’’
প্রায় ৬ বছর পরে ফের পূর্ব মেদিনীপুরে কোনও কর্মসূচিতে যোগ দিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে নন্দকুমার-দিঘা জাতীয় সড়কের ধারে মঠ চণ্ডীপুরে সভা করতে এসে মঞ্চের উপর আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিষেক। সেই সময় ওই ঘটনায় জেলা তৃণমূলের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতার ‘ভূমিকা’ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তার পর পূর্ব মেদিনীপুরে কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে যোগ দেননি অভিষেক।
পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনেই শনিবার দুপুর ২টোয় কাঁথির দইসাইয়ে তৃণমূলের সভা শুরু হয়। তবে অভিষেক হাজির হন সভা শুরুর কিছু ক্ষণ পরে। শনিবার কলকাতা থেকে সড়ক পথে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটে পৌঁছন অভিষেক। সেখান থেকে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে নন্দকুমার। এর পর ১১৬-বি জাতীয় সড়ক ধরে কাঁথির বাইপাস মোড়ের কিছুটা আগে সভাস্থলে।
অভিষেকের কনভয়ের যাত্রাপথে বিভিন্ন এলাকায় তাঁর ছবি দেওয়া পোস্টার-ব্যানার-ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছিল। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে হাজির ছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সভার আয়োজন হয়েছিল কাঁথি পুর এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে দিঘাগামী সড়কের ধারে দইসাইয়ে।
দিনকয়েক আগে অভিষেকের উপর হামলাকারী সেই যুবকের একটি ভিডিয়ো নতুন করে উত্তেজনার রসদ জোগায়। শুভেন্দুর সঙ্গেই বিজেপি-তে যোগ দেওয়া তৃণমূল নেতা কনিষ্ক পণ্ডা হামলাকারী ওই যুবককে পাশে বসিয়ে ভিডিয়োতে কটাক্ষ করেন অভিষেককে। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানান কাঁথির তৃণমূল নেতারা। শনিবার ২০১৫ সালের সেই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেন, ‘‘এই সভার আগে নেট মাধ্য়মে ভিডিয়ো ছড়িয়ে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy