Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
এ বার তৃণমূলে দ্বন্দ্ব খাতড়ায়

সংঘর্ষ, বোমাবাজি, ভাঙল পার্টি অফিস

বাঁকুড়া জেলায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কিছুতেই লাগাম পরাতে পারছে না তৃণমূল। এ বার শাসকদলের দ্বন্দ্ব খাতড়ায়। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল খাতড়ার সুপুর এলাকা। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় দু’পক্ষের মারপিট হল। বোমা পড়ল। ভাঙচুর করা হল দুই গোষ্ঠীর পার্টি অফিস। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় কমব্যাট ফোর্স। সংঘর্ষের জেরে সুপুর মোড়, খাতড়া বাসস্ট্যান্ড ও বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

খাতড়ার সুপুর বাজারে ভাঙচুর হওয়া তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর কার্যালয়ের সামনে চলছে পুলিশি টহল। সোমবার ছবিটি তুলেছেন উমাকান্ত ধর।

খাতড়ার সুপুর বাজারে ভাঙচুর হওয়া তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর কার্যালয়ের সামনে চলছে পুলিশি টহল। সোমবার ছবিটি তুলেছেন উমাকান্ত ধর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খাতড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০১:০৮
Share: Save:

বাঁকুড়া জেলায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কিছুতেই লাগাম পরাতে পারছে না তৃণমূল।
এ বার শাসকদলের দ্বন্দ্ব খাতড়ায়। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল খাতড়ার সুপুর এলাকা। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় দু’পক্ষের মারপিট হল। বোমা পড়ল। ভাঙচুর করা হল দুই গোষ্ঠীর পার্টি অফিস। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় কমব্যাট ফোর্স। সংঘর্ষের জেরে সুপুর মোড়, খাতড়া বাসস্ট্যান্ড ও বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সুনসান হয়ে যায় রাস্তাঘাট। সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে দুলাল দাস ও জবাকুসুম মণ্ডল নামে দু’জনকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। পুলিশ কিন্তু কাউকে ধরেনি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, খাতড়া মহকুমার দাপুটে নেতা তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল ওরফে বেনু সরকারের সঙ্গে আর এক নেতা তথা খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জয়ন্ত মিত্রের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। গত লোকসভা ভোটের পর খাতড়ায় কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন জয়ন্তবাবু। সেই ছবিটা এখন অনেকটাই বদলেছে। শ্যামলবাবুর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ অনুগামী ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনন্দ মাহাতো, যুব নেতা রানা বন্দ্যোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা মণ্ডল-সহ বেশ কয়েক জন সম্প্রতি জয়ন্ত মিত্রের শিবিরে গিয়েছেন। রাজনৈতিক শক্তির বিচারে এই মুহূর্তে দুই গোষ্ঠীই তাই সমান শক্তিশালী। আর তারই অনিবার্য পরিণাম হিসাবে হচ্ছে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ।
শনিবার রানিবাঁধের বারোগ্রামে যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় দুই গোষ্ঠীর লোকজনকেই সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। কিন্তু, সভার পরেই শুরু হয়েছে এলাকায় শক্তি প্রদর্শন। তারই জেরে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই সুপুর এলাকায় অশান্তি শুরু হয়। সুপুরের তৃণমূল নেতা মহাদেব গিরি শ্যামলবাবুর অনুগামী। অন্য দিকে, জয়ন্তবাবুর শিবিরের নেতা হলেন শশধর দাস। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অভিষেকের সভা থেকে ফেরার পর শশধর-সহ কয়েক জনকে কটূক্তি করা নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় সুপুর মোড়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রথমে তর্কাতর্কি হয়। শেষে হাতাহাতি। এর পর খাতড়া থেকে শ্যামল-গোষ্ঠীর লোকেরা সুপুরে গিয়ে জয়ন্ত-গোষ্ঠীর কয়েক জনকে মারধর করে বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে তখনকার মতো পরিস্থিত সামাল দেয়।

রবিবার রাতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়। অভিযোগ, খাতড়া ও সুপুরে শ্যামল-গোষ্ঠীর কিছু লোক গিয়ে সুপুর দুর্গামন্দিরের কাছে জয়ন্তবাবুর গোষ্ঠীর পার্টি অফিসে ঢুকে চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাট আউট, ফ্লেক্স, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দেয়। কয়েক জনকে মারধরও করা হয়। পাল্টা হামলা হয়, শ্যামলবাবুর গোষ্ঠীর পার্টি অফিসেও। সেখানেও ভাঙচুর চালানো হয়। খবর পেয়ে খাতড়া থানা থেকে বড় পুলিশ বাহিনী যায়। আতঙ্কে সুপুর এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। যে যেদিকে পারেন পালিয়ে যান। এলাকার ব্যবসায়ীমহলের ক্ষোভ, শাসকদলের দ্বন্দ্বের জেরে এ ভাবে প্রকাশ্যে মারপিট হলে তাঁরা দোকানপাট চালাবেন কী করে? সকলের রোজগারে টান পড়ছে।

খাতড়া ব্লক যুব তৃণমূল নেতা রানা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কিছু ধান্দাবাজ লোক সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী-সমর্থকদের মারধর করেছে। পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে। পঞ্চায়েতে লুটেপুটে খাওয়ার জন্যই এ সব শুরু করেছে ওরা।’’ শ্যামলবাবুবাবু ও জয়ন্তবাবু অবশ্য ঘটনাটিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে মানতে নারাজ। শ্যামলবাবুর বক্তব্য, “আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তবে যাঁরা দলনেত্রীর পোস্টার, ফেস্টুন, পতাকা ছিঁড়েছে, তারা দুষ্কৃতী। যতদূর জানি সিপিএমের লোকেরাই তৃণমূলের পতাকা নিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’

আর জয়ন্তবাবুর দাবি, “আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের যারা মেরেছে, পার্টি অফিস ভেঙেছে, তারা আর যাই হোক তৃণমূলের কেউ নয়। সিপিএমের আশ্রিত কিছু লোক আমাদের দলনেত্রীর পোস্টার, ব্যানার, কাট আউট ভেঙেছে। এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোন ব্যাপার নেই। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে সুপুরের বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুশীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার একটা বাচ্চা ছেলেও জানে তৃণমূলের লোকেরাই তৃণমূলের লোকদের মারধর করেছে। নিজেরাই একে অন্যের পার্টি অফিস ভেঙেছে। খাতড়ার ঝগড়া এখন সুপুরে টেনে এনেছেন ওরা। জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাই। এখন অস্বস্তিতে পড়ে আমাদের দলের নাম জড়ানো হচ্ছে।’’

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দু’পক্ষের তরফে অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত হচ্ছে। সোমবার নতুন করে আর গণ্ডগোল হয়নি। তবে উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিশের টহলদারি ছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE