অমিত শাহ-শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল ছবি।
রাজ্যে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে বিজেপির। আরও আগে উদ্যোগী হওয়ার কথা থাকলেও ভাইফোঁটা মেটার পর সোমবার থেকে পুরোপুরি ময়দানে নেমেছে প্রধান বিরোধী দল। তবে রাজ্যের ২৯৪ বিধানসভা আসনেই সমান গুরুত্ব দিয়ে সদস্য সংগ্রহের পরিকল্পনা নেই পদ্মশিবিরের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে, এমন বিধানসভাগুলিতে কম জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। বিজেপির জমি ‘খুবই দুর্বল’, এমন ৬৬টি বিধানসভা এলাকা আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই বিধানসভা কেন্দ্রগুলির ‘হিন্দুপ্রধান’ এলাকায় সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গুরুত্ব দেওয়া হবে। বাকি এলাকাগুলিতে নয়।
গত ২ সেপ্টেম্বর গোটা দেশে বিজেপির ‘সদস্যতা অভিযান’ কর্মসূচি শুরু হয়। বাংলায় আরজি কর-কাণ্ডের জেরে আন্দোলন এবং শারোদৎসব থাকায় সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে সে ভাবে কর্মসূচি শুরু হয়নি। গত ২৭ অক্টোবর কলকাতায় এসে অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সূচনা সভায় শাহের ভাষণের আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, হিন্দুপ্রধান এলাকায় বেশি করে ওই অভিযান চালানো হবে। শাহ তাঁর বক্তব্যে ওই বিষয়ে কিছু না বললেও বিপরীত কিছুও বলেননি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেশ শাসনের স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ বন্ধ করে দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। কেন্দ্রীয় নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের উপস্থিতিতে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘আমিও বলেছি রাষ্ট্রবাদী মুসলিম। আপনারাও বলেছেন সব কা সাথ, সব কা বিকাশ। আর বলব না।’’ এর পর দু’হাত জড়ো করে অল্প থেমে বলেন, ‘‘বলব যো হমারে সাথ, হম উনকা সাথ। সব কা সাথ, সব কা বিকাশ বন্ধ করো।’’ যদিও শুভেন্দুর সেই মন্তব্যের দায় নেয়নি দল। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তার পাল্টা বক্তব্যও পেশ করেছিলেন।
শাহের সভায় অবশ্য শুভেন্দু অতটা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে ‘সংখ্যালঘু প্রধান’ এলাকায় সংগঠন বাড়ানোর উদ্যোগের প্রয়োজন নেই বলেই মতপ্রকাশ করেন। গত লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সনাতনী আর জনজাতিদের পূর্ণ সমর্থন আমরা পেয়েছি। আমি নন্দীগ্রামে ৭২শতাংশ হিন্দুকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। আপনারা শুধু হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করুন।’’
সেই বার্তা মেনেই কি বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান হচ্ছে? রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যা পরিকল্পনা, তাতে দলের সাংগঠনিক ৩০০-র কিছু বেশি মণ্ডলে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে বিশেষ ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হচ্ছে না। বাকি এলাকায় দলকে ঝাঁপাতে বলা হয়েছে। তবে এ নিয়ে দলের বাইরে মন্তব্য করছেন না বিজেপি নেতারা। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘‘দল সর্বশক্তি দিয়ে রাজ্যের সর্বত্রই অভিযান শুরু করেছে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দেওয়া এক কোটি সদস্যের লক্ষ্য ছুঁয়েও ফেলব।’’ রাজ্যে অনেক সংখ্যালঘু মানুষ স্বেচ্ছায় দলের সদস্য হতে চাইছেন বলেও দাবি সুকান্তের। একই সুর ওই অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের।
বিজেপির যে সাংগঠনিক ভাগ, তাতে এক একটি বিধানসভা এলাকা চার বা পাঁচটি মণ্ডল থাকে। বাংলায় মোট মণ্ডল ১,৩৪৩টি। দলের লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিটি মণ্ডলে ১০০ জন সক্রিয় সদস্য করা হবে। বিজেপির নিয়ম অনুযায়ী, এক জন সক্রিয় সদস্যকে কমপক্ষে ১০০ জন প্রাথমিক সদস্য করতে হয়। সেই হিসাবেই প্রতি মণ্ডলে ১০ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য। কিন্তু আপাতত এক হাজারের কিছু বেশি মণ্ডলে লক্ষ্যপূরণের লক্ষ্য বিজেপির। গত লোকসভা নির্বাচনের ফল বলছে, ৩০০টির মতো মণ্ডলে বিজেপি একেবারেই দুর্বল।
রাজ্যে ৪০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোটারের বাস এমন বিধানসভার সংখ্যা ৭৪। দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে এর মধ্যে মাত্র আটটিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, বড়ঞা এবং তেহট্ট বিধানসভা। বাকি চারটি উত্তরবঙ্গের করণদিঘি, হেমতাবাদ, মানিকচক এবং বৈষ্ণবনগর। বাকি ৬৬টি বিধানসভা এলাকাতেই রয়েছে ৩০০-র মতো মণ্ডল, যেখানে পদ্মের জমি একেবারেই উর্বর নয়। সেই সব জায়গায় সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করবে না বিজেপি। কী কারণে? রাজ্য বিজেপির এক নেতার জবাব, ‘‘এমনিতেই আমাদের সাংগঠনিক শক্তি এখন খানিকটা কম। সেই শক্তির অপচয় করে কী লাভ? যেখানে আমরা ভোটই পাই না, সেখানে সদস্য পাওয়া আদৌ সম্ভব?’’ ওই নেতার দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এই নীতিতে সায় দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy