জল ঢুকে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অফিস। ছবি: অনির্বাণ সেন।
পুরসভার বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য গত বছরের মতো এ বারও জলে ভাসল পশ্চিমবঙ্গ সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অফিস। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীন এই অফিসটি জেলায় একমাত্র রয়েছে নলহাটিতে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করেছে এই অফিসে। জল সরানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে নলহাটি পুরসভার তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথা বলছে। জল নিকাশি ব্যবস্থা ভাল হয়নি শুক্রবার তা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মহম্মদ আলি মল্লিক। এর ফলে রাতে ভারী বৃষ্টি হলে গুদামে এবং অফিস ঘরে জল ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই আশঙ্কা থেকে এ দিন দুপুরে গুদামে মজুত তিন টন উচ্চফলনশীল ধানের বীজ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকের অভাবে আরও প্রায় ছয় হাজার চটের বস্তা অন্যত্র সরানো যায়নি বলে ওই আধিকারিক জানিয়েছেন।
কিন্তু প্রত্যেক বছর বৃষ্টিতে এমন অবস্থা হওয়ার জন্য এলাকার বাসিন্দারা পুরপরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কের ধারে নলহাটি পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের করিমপুর মৌজায় দু’একরের বেশি জায়গা নিয়ে এই অফিসটি রয়েছে। এর মাধ্যমে জেলায় একমাত্র রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় কাজ রূপায়িত করা হয় এবং প্রকল্প থেকে ধান, সর্ষে, ডাল বীজ উৎপাদন, প্রাণিসম্পদ বিকাশ উন্নয়নে পশুপালন বিভাগ, মৎস্য চাষ বিভাগ যেমন আছে, তেমনি পিছিয়ে পড়া এলাকায় রাষ্টীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় আওতাধীন স্বনির্ভর দলের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এর জন্য নলহাটির এই অফিসে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিকাশি নালা থাকা সত্ত্বেও বছর দু’য়েক থেকে অফিস চত্বরে মাঠে জল ঢুকে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কিন্তু জাতীয় সড়কের ধারে কয়েক জন অবৈধ ভাবে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য নিকাশি নালা বুজে গিয়েছে। এর ফলে অফিস চত্বরের জমা জল বেরনোর সুযোগ পাচ্ছে না। এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, হাঁটু সমান জল ডিঙিয়ে কর্মীরা অফিসে ঢুকছেন। গুদামে জল প্রায় ঢুকে পড়েছে। প্রকল্প আধিকারিক মহম্মদ আলি মল্লিক জানালেন, আগে অফিস চত্বরে মাঠের জল ঢুকত। কিন্তু নিকাশি নালা দিয়ে বেরিয়ে যেত। ২০১২ সাল থেকে নিকাশি সমস্যার জন্য বর্ষায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গত বছর অফিস চত্বরে বুক সমান জল জমে গিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রশিক্ষণকেন্দ্র, অফিস ঘর। এর জন্য অফিস এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র দোতলায় সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এবারেও যেভাবে জল ঢুকছে নিকাশি যদি ঠিক না করা হয়, তা হলে ভারী বৃষ্টিপাতে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের নীচের তলায় জল ঢুকে যাবে।”
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাসিবুল শেখ অভিযোগ করেন, “নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অশোক ঘোষ। এই সমস্যার কথা তাঁকে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনও স্থায়ী সমাধানের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” তাঁর দাবি, সকালে কয়েক জন শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে অফিস চত্বরে জমা জল বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সকাল থেকে বৃষ্টিতে মাঠের জল অফিস চত্বরে ঢুকে পড়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।” পরিস্থিতি ক্ষতিয়ে দেখতে বৃহস্পিতবার রাতেই উপপুরপ্রধান ঘুরে গিয়েছেন। তিনি জল নিকাশির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার বিকেল পর্যন্তও জমা জল সরেনি। পুরপ্রধান, তৃণমূলের রাজু সিংহ বলেন, “জল নিকাশি যাতে ভাল ভাবে হয়, সে জন্য অফিস ঘেঁষা জাতীয় সড়কের ধারে যে সমস্ত অবৈধ নির্মাণ রয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনে ভেঙে ফেলা হবে। ইতিমধ্যে জাতীয় সড়ক দেখভালের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদেরকে বলার জন্য রামপুরহাট মহকুমাশাসককে পুরসভার তরফ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy