Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
‘টার্গেট’ না মিললে কুর্সি কাড়ার হুমকি

এক ব্লক থেকেই লিড চাই ৩০ হাজারের

জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল রামপুরহাট ১ ব্লক সহ রামপুরহাট শহর তৃণমূলের বুথস্তরের কর্মীদের নিয়ে সম্মেলন করেন বুধবার।

নজরদারি: অনুব্রত মণ্ডলের কর্মিসভায়। (ইনসেট) পুরপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নালিশ। রামপুরহাটে। নিজস্ব চিত্র

নজরদারি: অনুব্রত মণ্ডলের কর্মিসভায়। (ইনসেট) পুরপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নালিশ। রামপুরহাটে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট ও মুরারই শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

প্রথমে ‘লিড’ কত থাকবে তা শুনে নেওয়া। সেই উত্তর মনের মতো না হলে যে স্তরের নেতাই হন না কেন, ভোটের পরে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকির রীতি জারি থাকল রামপুরহাট, পাইকরেও।

জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল রামপুরহাট ১ ব্লক সহ রামপুরহাট শহর তৃণমূলের বুথস্তরের কর্মীদের নিয়ে সম্মেলন করেন বুধবার। সেখানে রামপুরহাট ১ ব্লকের সভাপতি আনারুল হোসেনের উদ্দেশে অনুব্রত বলেন, ‘‘ব্লক থেকে আমার ৩০ হাজার লিড চাই। তাতে কারও বাড়ির ছাদে চাপবি না পাঁচিলে চাপবি আমার জানা নেই। কোনও কাহিনি শুনব না। ওই লিড চাই।’’ কথা মতো কাজ না হলে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন অনুব্রত।

একই ভাবে রামপুরহাট ১ ব্লকের বড়শাল অঞ্চলের সভাপতি বসন্ত মুখোপাধ্যায়কেও অঞ্চল থেকে ২০০০ এর বেশি লিড না হলে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন অনুব্রত। জেলা তৃণমূলের সভাপতি জানতে চান, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে বড়শাল অঞ্চলের ১৭টি বুথের মধ্যে চারটিতে হার হল কেন? লিড ৪৪৫ কেন?’’ দলের শহর সভাপতি অমিত চক্রবর্তী এবং পুরসভার প্রধান অশ্বিনী তিওয়ারির কাছে অনুব্রতর প্রশ্ন, ‘‘পুরসভার কি আমরা উন্নয়ন করিনি? এত কিছু করেও আমাদের কেন কম লিড?’’ এর পরেই পুরপ্রধান এবং দলের শহর সভাপতির উদ্দেশে শহরে ১৫ হাজার লিড বেঁধে দেন। বোলপুর শহরে ২৫ হাজার লিড দেওয়ার কথা বলেন।

বুধবার বিকেলে মুরারই ২ ব্লকের পাইকরেও তৃণমূলের কর্মিসভা হয়। সভার শুরুতে নন্দীগ্রাম অঞ্চল সভাপতিকে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল প্রশ্ন করেন, ‘‘এলাকায় আমরা কত ভোটে জিতব?’’ চৈতন্য ভাস্কর বলেন, ‘‘দু’হাজার লিড থাকবে।’’ অনুব্রতের ঘোষণা, ‘‘যে অঞ্চলে সব থেকে বেশি ব্যবধানে তৃণমূল জিতবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।’’

প্রতিযোগিতার আবহ তৈরি করে ভোটে নামতে চলাকে বিরোধী শিবিরের নেতারা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। তাঁদের মতে, ‘‘এতে লোকসভা ভোট হলে হিংসা বাড়তে পারে। পঞ্চায়েত ভোটের মতো এ বারও না গা-জোয়ারি করে ভোট হয়।’’ রামপুরহাট পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর তথা দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস চৌধুরীর মতে, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছেন। দলের খারাপ অবস্থা থেকে বাঁচবার জন্য এই রকম হুমকি দিয়ে দলের কর্মীদের সতর্ক করছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি।’’ রামপুরহাট পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিকের কথায়, ‘‘রামপুরহাট শহরে তৃণমূলের ১৫ হাজার লিড অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়।’’

কর্মিসভা চলাকালীন দর্শকাসন থেকে অনুব্রত মণ্ডলের কাছে রামপুরহাট পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক মহিলা অভিযোগ করেন, ‘‘কাউন্সিলর এবং কাউন্সিলরের দাদা বাড়ির ছাদ ঢালাই করতে দিচ্ছেন না।’’ ওই সময় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু মহিলা তার প্রতিবাদও করেন। মঞ্চ থেকে দলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিত সিংহ বলেন, ‘‘বুথ কর্মী সভা চলছে। এখানে অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। এই নিয়ে পরে কথা বলবেন।’’ ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর আব্বাস হোসেন বলেন, ‘‘মিথ্যে অভিযোগ। উনি সরকারি খাস জায়গা দখল করে বাড়ি করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 TMC Anubrata Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE