শুনানির পরে অভিযুক্তদের আদালত থেকে পুলিশ পাহারায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে মামলা চলার পরে নয় ভাই খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেন ১৩ জন। ১৯৮১ সালের ৮ অগস্ট, তৎকালীন ময়ূরেশ্বর থানার (বর্তমানে মল্লারপুর থানার অন্তর্গত) কোটগ্রামে খুন হন ৯ যুবক। মাড়গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবকদের খুনের ঘটনায় কোটগ্রামের ৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ৮ জন সাক্ষীর বক্তব্য শোনার পর শুক্রবার অভিযুক্তদের মধ্যে ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালত (প্রথম)। বাকি ২৩ জন জীবিত অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেয় আদালত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কোটগ্রাম থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে মাড়গ্রাম থেকে একই পরিবারের ৬ সহোদর ভাই এবং কোটগ্রামের বাসিন্দা তাঁদের আরও তিন মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে কোটগ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের বিবাদ বাধে। বিবাদ ক্রমশ বাড়তে থাকে, চলে হাতাহাতিও। অভিযোগ, এরপরই কোটগ্রামের বহু মানুষ মিলে ঘিরে ধরেন ওই ন’জন যুবককে। তাঁরা একটি বাড়ির ভিতর লুকিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলে সেই বাড়িতে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
নিহতদের পরিবার সূত্রে খবর, আক্রান্তরা দমবন্ধ অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পরেই কুপিয়ে খুন করা হয় নুর হোসেন, শাহজামাল শেখ, আলি হোসেন-সহ নয় যুবককে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মৃত যুবকদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে কোটগ্রামের ৭২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। তখন কোনও অভিযুক্ত সদ্য ১৮ বছর পার করেছেন, কেউ ছিলেন তিরিশের দোরগোড়ায়। দুই অভিযুক্ত ছিল নাবালক। তার পর কেটে গিয়েছে ৪৪ বছর। তাঁরা প্রায় সকলেই এখন সত্তরের কোঠায় ঢুকে পড়েছেন৷ আশি বছরেরও এক অভিযুক্ত রয়েছেন। অভিযুক্ত ৭২ জনের মধ্যে ৩৬ জনের মৃত্যুও হয়েছে মামলা চলতে চলতে।
সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশই মারা গিয়েছেন। তাঁদের মৃত্যুর রিপোর্ট আদালতে জমা পড়তে পড়তে পরের তারিখে হয়তো আবারও কোনও অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে। এই কারণেই মামলা শেষ হতে এত দেরি হল।” তবে অবশেষে এ দিন দোষী সাব্যস্ত করা হয় ১৩ জনকে। সোমবার তাদের সাজা ঘোষণা হবে৷ মামলার রায় শুনতে এ দিন জেলা আদালতের সামনে অভিযুক্তপক্ষ ও অভিযোগকারী পক্ষের প্রচুর মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।
মৃত যুবকদের এক আত্মীয় সৈয়দ মহম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, “দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে অভিযুক্তরা সাজা পাবে জেনে খুবই ভাল লাগছে। প্রমাণের অভাবে কয়েক জন হয়তো ছাড়া পেয়ে গেল, তবে মূল আসামীরা প্রায় সকলেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এতেই আমরা খুশি।”
তৎকালীন দুই নাবালক যাঁরা এই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন, তাঁদের বয়স এখন ষাটের কোঠায়৷ তাঁরা দু'জনেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এ দিন আদালত থেকে বেরিয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে তাঁরা দাবি করেন, ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগই ছিল না। তাঁরা ওই দিন ঘটনাস্থলেও ছিলেন না বলে দাবি তাঁদের। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘদিন মামলা চলায় কোনও একজন বিচারকের পক্ষে পুরো মামলা শোনা সম্ভব হয়নি। যার ফলে অভিযুক্তদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব। সেখানে নিশ্চয় আমরা সুবিচার পাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy