Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুর্ঘটনায় রাশ টানতে রাস্তায় নামল পুলিশ

সারা দেশে প্রতি চার মিনিটে পথ-দুর্ঘটনায় এক জন মারা যান। এক সমীক্ষায় অন্তত এমনটাই দাবি করা হয়েছে। এ রাজ্যেও পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পুরুলিয়া জেলাতেও পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা কম চিন্তার নয়।

পুলিশি তৎপরতা মানবাজারে। — নিজস্ব চিত্র

পুলিশি তৎপরতা মানবাজারে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

সারা দেশে প্রতি চার মিনিটে পথ-দুর্ঘটনায় এক জন মারা যান। এক সমীক্ষায় অন্তত এমনটাই দাবি করা হয়েছে। এ রাজ্যেও পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পুরুলিয়া জেলাতেও পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা কম চিন্তার নয়।

তথ্য ঘেঁটে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানাচ্ছে, এই জেলায় ২০১৪ সালে ১৩১ জন, ২০১৫ তে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত পুরুলিয়া জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৬২তে। অর্থাৎ বছরে এই জেলার পথ-দুর্ঘটনায় গড় মৃত্যুর দিকেই এগোচ্ছে পরিসংখ্যান। কেন এত মৃত্যু? কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে, পুলিশ জানাচ্ছে মৃতদের একটা বড় অংশই কমবয়েসি মোটরবাইক চালক ও আরোহী। তাঁদের অনেকের আবার মাথায় হেলমেটও ছিল না। ফলে দুর্ঘটনায় হেলমেটহীন মাথা আঘাত সামলাতে না পেরেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে চালক ও আরোহীদের।

সচেতনতা বাড়া়তে পুলিশের তরফে আগে ফি বছর ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ ঘটা করে পালন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদেরও তাতে সামিল করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। সম্প্রতি কলকাতায় ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ নামের এক কর্মসূচির সূচনা করে পথ নিরাপত্তা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোটরবাইক ‘রেসিং’ নিয়ন্ত্রণে জোর দেন। দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ওই অনুষ্ঠানেই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন, হেলমেট-হীন সওয়ারিরা যেন পেট্রোল পাম্প থেকে তেল না পান। সেই থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে পুরুলিয়াতেও পুলিশ পেট্রোল পাম্পে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ পোস্টার সাঁটিয়ে হেলমেট পরার ব্যাপারে কড়াকড়ি শুরু করেছে। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চেকিং হচ্ছে। প্রয়োজনে জরিমানাও করা হচ্ছে হেলমেট-হীন মোটরবাইক চালকদের।

ঘটনা হচ্ছে, হেলমেট নিয়ে সচেতনতার প্রচারের মধ্যেও হেলমেট পরার প্রবণতা যে অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে এমনটা নয়। কিছুদিন আগে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘জুলাই মাসে এ পর্যন্ত পথ নিরাপত্তা আইন ভাঙায় পুরুলিয়া জেলায় ২৩০০ জনের জরিমানা করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, প্রচারে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় চেকিং হচ্ছে।

তবে হেলমেট বিক্রি যে অল্প হলেও বেড়েছে তা মানছেন হেলমেট বিক্রেতারাও। মানবাজারের ইন্দকুড়ি এলাকার এক গ্যারাজ মালিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘হেলমেট কেনা অনেকে বাড়তি খরচ বলে মনে করেন। আমরা খানিকটা জোর করে হেলমেট গুঁজে দিই।’’ মানবাজারে আর এক গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতা অভিমন্যু দে বলেন, ‘‘আগে এক মাসে বা দু’মাসে একটা-দুটো করে হেলমেট বিক্রি হতো। এখন গত দু’সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে চারটি করে হেলমেট বিক্রি হচ্ছে।’’ তিনি জানান, অনেকে গাড়ি কেনার সময় হেলমেট কেনেন। কিন্তু পরে আর হেলমেট কিনতে চান না। তবে ইদানীং পুলিশের প্রচারের জন্য হেলমেট বিক্রি খানিকটা বেড়েছে। চাহিদার কথা ভেবে বেশি করে হেলমেট আনিয়ে নিয়েছেন তিনি।

তবে এ সব সত্ত্বেও অনেকে এখনও বেপরোয়া। এক পুলিশ কর্মীর অভিজ্ঞতা, সম্প্রতি মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তায় চেকিং চলছিল। হেলমেট এবং নথিপত্র রয়েছে কি না, দেখে মোটরবাইক আরোহীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল। একটি মোটরবাইকে হেলমেট-হীন যুবক-যুবতী রয়েছে দেখে, পুলিশ তাঁদের আটকায়। যুবকটি কোন রকম ভনিতা না করে সরাসরি পুলিশ কর্মীদের জানান, তাঁর কাছে নথিপত্র কিছুই নেই। তা দেখে এক পুলিশ কর্মী জরিমানা করতে যেতেই ওই যুবক সটান জেলার এক বিধায়ককে ফোন করেন। বিধায়ক পুলিশ কর্মীদের জানান, দু’জনেই তাঁর আত্মীয়। ওই পুলিশ কর্মীর প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে ফোন করে আসলে যে নিজের আত্মীয়দেরই বিপদে ফেলা হচ্ছে, তা কি জনপ্রতিনিধিরাও বোঝেন না?’’

পুলিশ অবশ্য পথ নিরাপত্তায় ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার সমস্ত থানা এলাকায় বিশেষত বাঁক, সেতুর মুখে, কালভার্টের আগে, বাজার এবং স্কুল-কলেজের সামনে নতুন ভাবে ‘রোড ব্যারিয়ার’ এবং রাতে দেখার সুবিধার জন্য ফ্লুরোসেন্ট রিফ্লেক্টর লাগানো হচ্ছে। এর ফলে গাড়ির সামান্য আলোতেও দূর থেকে বাঁক, সেতু ইত্যাদি বোঝ যাবে।’’ প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে মানবাজারের বিধায়ক বর্তমানে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর গাড়ি মানবাজার-পায়রাচালি রাস্তায় সন্ধ্যার মুখে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। গাড়ির ধাক্কায় কালভার্টের সিমেন্টের পিলার ভেঙে পাশের নিচু জায়গায় গড়িয়ে গিয়েছিল। গাড়ির চালক এবং বিধায়ক সে বার খুব জোর বেঁচে গিয়েছিলেন। অনেকের মতে, ওই এলাকায় ফ্লুরোসেন্ট রিফ্লেক্টর থাকলে ওই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। ফলে পুলিশ এ বার বাড়তি সতর্কতা নিয়েই কাজে নেমেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE