Advertisement
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হুঙ্কার চলছেই, বামেদের ফের ‘ইঁদুর’ বললেন অনুব্রত

কেষ্ট-ধরার দাবিতে পথে বিজেপি

তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমশ সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। কিন্তু, অনুব্রত আছেন অনুব্রততেই! সোমবার দুপুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হল বিজেপি। সিউড়িতে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভও দেখাল। অনুব্রত সেই বিজেপি-র সেই বিক্ষোভকে গুরুত্বই দিলেন না। উল্টে, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সুর চড়ালেন বামেদের দিকে।

তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে গ্রেফতারের দাবিতে সিউড়িতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিজেপি-র বিক্ষোভ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে গ্রেফতারের দাবিতে সিউড়িতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিজেপি-র বিক্ষোভ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি ও সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমশ সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। কিন্তু, অনুব্রত আছেন অনুব্রততেই!

সোমবার দুপুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হল বিজেপি। সিউড়িতে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভও দেখাল। অনুব্রত সেই বিজেপি-র সেই বিক্ষোভকে গুরুত্বই দিলেন না। উল্টে, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সুর চড়ালেন বামেদের দিকে। বিকেলে সংবাদমাধ্যমকে জেলায় পুরভোটে প্রধান প্রতিপক্ষের তকমা দিলেন বামফ্রন্টকে। তার কয়েক ঘণ্টার ভিতরেই আবার প্রকাশ্য সভায় বিতর্কিত মন্তব্য করে তাদের তুলনা টানলেন ইদুরের সঙ্গে। আর তার পরেই জেলার পুলিশের বিরুদ্ধে ফের পক্ষপাতের অভিযোগ তীব্র করলেন বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, শাসকদলের নেতা হওয়ার জন্যই পুলিশ অনুব্রতর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না। তার সুযোগ নিয়েই অনুব্রত বারবার উস্কানিমূলক ও বিতর্কিত মন্তব্য করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।

ঘটনা হল, সিউড়ি পুরসভায় বিজেপি প্রার্থী দীপক দাসকে হুমকি দেওয়ায় শনিবার অনুব্রতর বিরুদ্ধে প্রথমে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। দীপকবাবুর অভিযোগ, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল জেলা সভাপতির হুমকির পরেই খুন হয়েছিলেন পাড়ুইয়ের বাঁধ নবগ্রামের বাসিন্দা সাগর ঘোষ। এখানেও তেমনটা ঘটতে পারে। অত্যন্ত প্রভাবশালী ওই নেতার হুমকির জন্য আমি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি!’’ ঠিক কী বলেছিলেন অনুব্রত? বিজেপি-র দাবি ছিল, নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্য অনুব্রত বলেন, ‘‘আমি জানি, বাবন (দীপক) দাস আপনাদের ভয় দেখাচ্ছে। ভয় পাবেন না।’’ তার পরেই সুর চড়িয়ে ওই বিজেপি প্রার্থীর উদ্দেশ্যে তৃণমূলের জেলা সভাপতির হুঁশিয়ারি, ‘‘ভয় দেখাবেন না। চারগুণ ভয় দেখাতে পারি। চোখ রাঙাবেন না। আপনাকে তুলে নিয়ে আসার ক্ষমতা আমি রাখি।’’

কিন্তু, তার পরে ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। এ দিন তারই প্রতিবাদে মিছিল করে এসে জেলার পুলিশ সুপারের দফতরে বিক্ষোভের পাশাপাশি বিজেপি একটি স্মারকলিপিও দেয়। পুলিশ সুপারের অনুপস্থিতিতে ডিএসপি (ডিঅ্যান্ডটি) আব্দুল আজিম স্মারকলিপিটি জমা নেন। কিন্তু, সে দিনের লিখিত অভিযোগের পরে পুলিশ ওই অভিযোগকে আদৌ এফআইআর হিসাবে দেখেছে, না সাধারণ অভিযোগ, সেটাই স্পষ্ট নয়। জেলার পুলিশ সুপার ফোন না ধরলেও পুলিশের একাংশের দাবি, বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তিনি যা নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজেপি যদিও এ সব কথায় ভুলতে নারাজ। দলের জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা বলেন, ‘‘সিউড়িতে আমাদের দলের প্রার্থী দীপক দাসকে তুলে নিয়ে যায়ওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অনুব্রত। পুলিশ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আমরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এলাম। কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ সেটা দেখতে দল দু’দিন অপেক্ষা করবে। কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’ ঠিক কী পদক্ষেপ করা হবে, তা অবশ্য তিনি স্পষ্ট করেননি। তবে, অর্জুনবাবুর আরও দাবি, ‘‘শুধু সিউড়ি নয়, সাঁইথিয়াতেও দলের প্রার্থীদের উপর সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। শাসকদলের হয়ে একই ভাবে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হেনস্থা করছেন শাসক দলের অনুগত রামপুরহাট থানার আইসি। আমরা সেই বিষয়গুলিও ডেপুটি পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।’’ তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘‘সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ দেওয়ার জন্য পুলিশের যা করণীয়, তা করুক। প্রয়োজনে আমরা শুক্রবার রাতে তৃণমূল জেলা সভাপতির বক্তব্যের তথ্য প্রমাণ দেব।’’

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও সিউড়ি জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘পুলিশ এমন কোনও আবেদন করে থাকলে বৃস্পতিবার আদালত খুললে, তা স্পষ্ট জানা যাবে। তবে, আমি যেটুকু জানি, বিজেপি-র ওই প্রার্থী যে অভিযোগ করেছেন, তাতে এফআইআর করার মতো অভিযোগ ছিল না।’’ আর যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অনুব্রত সোমবার বিকেলে বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়টিকে গুরুত্বই দিচ্ছি না। কারণ, অমি কী বলেছি সেটা আমি ভাল করেই জানি। ভাল করে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন অমি বলেছি যদি ভয় দেখানো হয়। একটা যদি ছিল।’’

অন্য দিকে, এ দিনই আবার বেঁফাস মন্তব্য করেছেন অনুব্রত। এ বার অবশ্য বিজেপি নয়, নিশানায় বাম। বামেদের ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। এ দিন সন্ধ্যায় সিউড়ি ২ নম্বর ওয়ার্ডে নিজেদের দলের প্রার্থী সঙ্গীতা সিংহের হয়ে প্রচারে জনসভা করেছেন অনুব্রত। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘ইঁদুর যেমন গর্তে গর্তে লুকিয়ে বেড়ায়, বামফ্রন্টও লুকিয়ে আছে। ইঁদুর তবু জলগর্তে জল ঢাললে বের হয়। বামেরা বের হয় না।’’ প্রসঙ্গত, সঙ্গীতা সিংহ নামে যে প্রার্থী এ বার তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন, তিনি-ই ছিলেন গত ভোটে সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী। অনুব্রতর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায়, বামেদের পক্ষে সিউড়ি পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএম নেতা তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তপন রায় বলেন, ‘‘উনি আমাদের কোন প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করবেন, সেটা ওঁর রুচি। তবে, এটুকু বলব, বামেরা লড়াইয়ে ছিল, আছে, থাকবে।’’ পার্টি কংগ্রেসে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সিপিএমের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এর আগেও উনি আমাদের ওই প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। ইঁদুর তো ছোট্ট প্রাণি। তাকে ওঁর কেন এত ভয়! ইঁদুর মনে হয়, তলায় তলায় ওঁদের শিকড় কেটে দিচ্ছে।’’

রবিবার রাতে সাঁইথিয়ায় পেশায় স্কুলশিক্ষক এক িবজেপি প্রার্থীকে বদলি করে দেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছিলেন অনুব্রত। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ দিনই রাত ন’টার দিকে ৮ নম্বর ওযার্ডের ওই বিজেপি প্রার্থী সুশান্ত রায়ের বাবা উমাপতি রায় সাঁইথিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। রবিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের জেলা সবাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ওই অভিযোগে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার পুত্র ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী। সমস্যা হচ্ছে, প্রার্থী হওয়ার পর থেকে নানা রকমভাবে হুমকি দিয়ে গোটা পরিবারকে বিব্রত করা হচ্ছে। গতকাল তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি, খোলা মঞ্চে আমার ছেলেকে হুমকি দেওয়ার থেকে সামাজিক ভাবে আক্রমণ করে সামাজিক সম্মানহানি করেছেন।... এই হুমকির দরুণ যে কোনও সময় আমার প্রাণ সংশয় হবে।’’ তিনি নিরাপত্তা চেয়ে এই অভিযোগ জমা দেওয়ার পর বলেন, ‘‘নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। চাই পুলিশ ব্যবস্থা নিক দ্রুত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE