অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
অনুব্রত মণ্ডল গরু পাচারের সিন্ডিকেট থেকে টাকা নিতেন বলে ‘প্রত্যক্ষ প্রমাণ’ না থাকলেও সেই সিন্ডিকেটকে মদত দিতেন বলে বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। কিন্তু সেই তথ্যপ্রমাণও ‘খুবই দুর্বল’ বলে জানাল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট।
গরু পাচার মামলায় ইডি-র তদন্ত নিয়ে কার্যত প্রশ্ন তুলে দিয়ে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের রায়ে বলেছে, বীরভূমের ওই তৃণমূল নেতা গরু পাচারের সিন্ডিকেটকে সাহায্য করতেন বলে ইডি দাবি করেছে। মূলত অন্যান্য অভিযুক্তদের বিবৃতি, মোবাইলের কল ডিটেল রেকর্ডস ও ব্যাঙ্কের লেনদেনের উপরে ভিত্তিতে ইডি এই দাবি করেছে। কিন্তু ইডি কল ডিটেল রেকর্ড পেশ করলেও অনুব্রতের সঙ্গে কথাবার্তার প্রতিলিপি দিতে পারেনি। ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়ার সব হিসেব দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই নগদ টাকা যে গরু পাচারের সিন্ডিকেট থেকেই এসেছিল, তা সরাসরি দেখানো হয়নি। যে সময়ে গরু পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ, অনেক নগদ টাকা জমা পড়েছে তার আগে। বিচারের সময়ে তদন্তকারী সংস্থাকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের বিশেষ আদালতের বিচারক জ্যোতি ক্লেয়ার। শুক্রবারই দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট গরু পাচারের তদন্তে ইডি-র মামলায় জামিন মঞ্জুর করেছিল। আগেই সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই মামলায় অনুব্রত জামিন পেয়েছিলেন। শুক্রবার জামিন পেলেও শনিবার তিহাড় জেল থেকে অনুব্রত ছাড়া পাননি। কারণ অনুব্রতের জামিনের লিখিত রায় আসতে আসতে শনিবার সন্ধ্যা হয়ে যায়। ফলে সোমবার তিহাড় থেকে মুক্তি পেতে পারেন অনুব্রত।
আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন বা পিএমএলএ-র ৪৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ইডি-র মামলায় অভিযুক্তকে জামিন পেতে হলে দু’টি শর্ত পূরণ করতে হয়। এক, অভিযুক্ত অপরাধে যুক্ত বলে মনে করার কারণ নেই বলে তাঁকে আদালতকে বিশ্বাস করাতে হবে। দুই, জামিনে ছাড়া পেয়ে তিনি যে ফের একই অপরাধ করবেন না তাও আদালতকে বিশ্বাস করাতে হবে। বিচারক জ্যোতি ক্লেয়ার তাঁর রায়ে বলেছেন, গরু পাচার সিন্ডিকেটের তরফে যে ব্যক্তি সবাইকে টাকা দিত বলে অভিযোগ সেই মনোজ সানা এখনও ফেরার। অনুব্রত গরু পাচার সিন্ডিকেটের থেকে সরাসরি টাকা নিতেন বলে প্রত্যক্ষ প্রমাণ না থাকলেও তাঁর সঙ্গে সিন্ডিকেটের যোগাযোগ ছিল বলে বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে। তাই পিএমএলএ-র জামিনের শর্ত এ ক্ষেত্রে খাটে না। যদিও বিচারক এই যোগাযোগের প্রমাণকে ‘খুবই দুর্বল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অনুব্রতের আইনজীবী মনু শর্মা, শাম্ব নন্দীদের যুক্তি ছিল, অনুব্রতের রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য তাঁকে দোষী প্রমাণ করার আগেই জেলে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইডি অভিযোগ তুলেছে যে তিনি প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা হিসেবে এনামুল হক ও আবদুল লতিফের গরু পাচার সিন্ডিকেটকে সাহায্য করতেন। দেহরক্ষী সেহগল হোসেনের মাধ্যমে এই দু’জনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন অনুব্রত। গরু পাচারে মদতের বিনিময়ে ঘুষের টাকা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ত। কিন্তু অনুব্রতের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট জমা পড়েছে, তাতে এর পক্ষে কোনও প্রমাণ নেই। সবটাই অন্যান্য অভিযুক্তদের বয়ানের ভিত্তিতে অভিযোগ তুলেছে ইডি। ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিএসএফ অফিসার সতীশ কুমার যখন বীরভূম সীমান্তে কমান্ডান্ট ছিলেন, সেই সময়ে গরু পাচারের কারবার চলেছে বলে অভিযোগ। কিন্তু ইডি তার অনেক আগে ও অনেক পরে, যেমন ২০০৯ সালে, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে, এমনকি ২০২২ সালে অনুব্রতের অ্যাকাউন্টে গরু পাচারের ঘুষের টাকা জমা পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে। বিচারক ক্লেয়ার বলেছেন, এ নিয়ে ইডি-কে গরু পাচারের অপরাধের বিচারের সময়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
অনুব্রতকে জামিন দেওয়ার কারণ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আম আদমি পার্টির নেতা মণীশ সিসৌদিয়ার জামিনের রায়কে উদাহরণ হিসেবে রেখেছে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট। বিচারক ক্লেয়ারের বক্তব্য, অনুব্রত প্রায় দু’বছর জেলে রয়েছেন। গরু পাচারের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে এখনও অনেক দেরি রয়েছে। তা ছাড়া তিনি সিবিআইয়ের মূল মামলায় জামিন পেয়ে গিয়েছেন। তা ছাড়া তদন্তের জন্য এখন অনুব্রতকে প্রয়োজন নেই। অনুব্রতের জামিন আদায় করতে তাই আইনজীবীরা অনুব্রতের অসুস্থতার যুক্তি দিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, অনুব্রত নানা অসুখে ভুগছিলেন। তার পরে জেলে থাকার সময় তাঁর স্নায়ুর রোগ রেডিকুলোপ্যাথি হয়েছে। আদালত অবশ্য অনুব্রতের অসুস্থতাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy