উদ্ধার: সেই শিশু। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
সকাল পৌনে ৮টা। হাওড়া থেকে সবে মাত্র ছেড়েছে আপ পাঁশকুড়া লোকাল। ট্রেনের ভেন্ডর কামরায় তখন বেশ ভিড়। যাত্রীদের কথাবার্তার আওয়াজ ছাপিয়ে হঠাৎই এক শিশুর কান্নার শব্দ। প্রথমে বাচ্চার কান্না শুনে তেমন কিছু বুঝতে পারেননি নিত্যদিন ভেন্ডর কামরায় যাতায়াত করা যাত্রীরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে এক নাগাড়ে শুরু হল শিশুর কান্না!
শনিবার সকালে চলন্ত ট্রেনের ভেন্ডর কামরায় এক নাগাড়ে কান্না শুনে যাত্রীরা খোঁজ শুরু করলেন। গোটা কামরায় চারিদিকে ডাঁই করা মালপত্র, আনাজের ঝুড়ি, বস্তা। সে সবেরই মধ্যে সিটের নিচে এক কোণে লাল রঙের বিছানার চাদরে মোড়া অবস্থায় দেখা গেল এক শিশুকে। কান্নার সঙ্গে ততক্ষণে সে শুরু করেছে হাত-পা ছোঁড়া।
রেল সূত্রের খবর, এরপরে ওই কামরার যাত্রীরাই মালপত্র সরিয়ে সিটের তলা থেকে ওই শিশুটিকে তুলে আনেন। সাদা-গোলাপি রঙের ফিতে বাধা গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা শিশুপুত্রটিকে নতুন গামছা দিয়ে মুড়ে দেন। ততক্ষণে ট্রেন টিকিয়াপাড়া স্টেশন ছেড়েছে। দাশনগর স্টেশনে পৌঁছতেই যাত্রীরা মোটরম্যানকে (চালক) বিষয়টি জানান। ভেন্ডর কামরায় শিশু উদ্ধার হয়েছে শুনে অবাক হয়ে যান মোটরম্যানও। তিনি ততক্ষণাৎ বিষয়টি গার্ডকে জানান। এর পরেই খবর যায় সাঁতরাগাছি স্টেশনের ম্যানেজার ও রেল পুলিশের কাছে।
খবর পেয়ে সাঁতরাগাছি স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকেন স্টেশন ম্যানেজার ও আরপিএফ জওয়ানেরা। ট্রেন পৌঁছতেই তাঁরা ওই কামরা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন। এক যাত্রী বলেন, ‘‘ট্রেনের মেঝে থেকে কোলে নেওয়ায় শিশুটি তখন বেশ চুপ করে গিয়েছিল। মহানন্দে হাত-পা ছুঁড়ে খেলছিল। কে যে ফেলে গেল?’’ এর পরে রেলের তরফে জিআরপি-হাতে শিশুটিকে হস্তান্তরিত করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘শিশুটির বয়স এক মাস মতো হবে। তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন শিশুটি সুস্থ রয়েছে।’’
এ দিন রাত পর্যন্ত অবশ্য হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি ওই শিশুটির কোনও পরিচয় জানা যায়নি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির হাতে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হবে। অন্য দিকে রেল পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘শিশুটিকে কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে ভেন্ডর কামরায় রেখে গিয়েছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে।’’ এক মাসের ওই শিশুকে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ফেলে গিয়েছে না কি কারও সন্তান চুরি করে নিয়ে কেউ পালানোর চেষ্টা করছিল, তা এখন তদন্ত করে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy