Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

লোকশিল্পীদের অভাব মোচনে ভাতা-অনুদান

খন ও হালুয়া-হালুয়ানি গান গেয়ে জীবনে সায়াহ্নে এসে চরম অভাবে গান চর্চা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছিলেন আকুলবালা সরকার। একই ভাবে কামেশ মাহাতো, বদ্রিনাথ বসাক, আবিল সরকারের মতো লোক শিল্পীরা গানের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য কোনও পেশায় ঝোঁকার কথা ভাবছিলেন।

আকুলবালা আর স্বামী রমণীকান্ত সরকার।

আকুলবালা আর স্বামী রমণীকান্ত সরকার।

অনুপরতন মোহান্ত
কুশমন্ডি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০১:২৮
Share: Save:

খন ও হালুয়া-হালুয়ানি গান গেয়ে জীবনে সায়াহ্নে এসে চরম অভাবে গান চর্চা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছিলেন আকুলবালা সরকার। একই ভাবে কামেশ মাহাতো, বদ্রিনাথ বসাক, আবিল সরকারের মতো লোক শিল্পীরা গানের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য কোনও পেশায় ঝোঁকার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু, রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ওই লোক শিল্পীদের এককালীন অনুদান ও নিয়মিত ভাতা দেওয়ার সূচনা করায় সকলে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন।

এঁরা সকলেই দক্ষিণ দিনাজপুরের লোক শিল্পী। গত শনিবার বালুরঘাটে কুশমন্ডির আকুলবালা আর আবিলের মতো দক্ষিণ দিনাজপুরের ৮টি ব্লকের ২৪৭ হতদরিদ্র লোক শিল্পীর মাসিক ৭৫০ টাকা ভাতা চালু হয়েছে। জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর হাত দিয়ে শিল্পীদের প্রথম মাসের টাকা দেয়। ৯৬ শিল্পীকে এককালীন হাজার টাকা ও ২৭ জনকে অক্ষম শিল্পীকে এককালীন ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মহিষবাথানের আকুলবালা এককালীন ৩ হাজার টাকার অনুদানও পেয়েছেন।

আকুলবালা আর স্বামী রমণীকান্ত সরকার, দু’জনেই লোকগান গাইয়ে। দু’জনেই ষাটোর্ধ্ব। অভাবের কারণে কার্যত অর্ধাহারে দিন কাটাছিল ওঁদের। সরকার দুঃস্থ লোকশিল্পীদের ভাতা দেবে বলে ঘোষণা করলেও এত দিন হাতে পাননি। শেষ পর্যন্ত তা হাতে পেয়ে আকুলবাল বললেন, “কিছুটা স্বস্তি পেলাম।” স্বামী রমণীকান্তবাবু জানান, ভাতা ছাড়াও সমস্ত সরকারি সাহায্য না মিললে লোকগান ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে। গ্রাম্য সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে লোকাচারের উপর ভিত্তি করে মুখে মুখে গান বেঁধে তা শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরা হয় খন গানের মাধ্যমে। প্রবীণ রমণীকান্ত সরকার বলেন, “মুখে মুখে কথা ও সুর তৈরি করে চলে মহড়া। শুনে শুনে মুখস্থ করতে হয় খন, হালুয়া হালুয়ানির গান।” যেমন, হাল বইতে যাচ্ছে হালুয়া (চাষি) হালুয়ানি (চাষি বউ) নিয়ে যাচ্ছে পান্তাভাত, হুকা-তামুক নিয়ে ছোটভাই খিটকালু যায় গান গাইতে...।’ এ দিকে আবার খন গানে ‘বেডিংপত্র লয়ে কেডা রাস্তা হেঁটে যায়, আহা বুঝি বিজয় দাদা হয়। গায়ে সুট কোট ও কি চিনলো না যায়....

লক্ষীতিথিতে কোজাগরী, মনসা, দুর্গাবলির গানেও খন এবং হালুয়া হালুয়ানির সঙ্গে মোখা নাচের প্রচলন কুশমন্ডিতে রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে ১৬ বছর বয়স থেকে আকুলবালাদেবী ওই ধারার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, “দিল্লিতে ইন্দিরা গাঁধী মোখা নাচ ও হালুয়াহালুয়ানি গান শুনে বাহবা দেন। রাজীব গাঁধীর সময় দিল্লিতে অনুষ্ঠান করেছি। ১২ জনের দল তৈরি করে কলকাতায় তো বটেই, বাইরের রাজ্যে অনুষ্ঠান করেছি। বাড়িতে জমেছে প্রচুর শংসাপত্র। কিন্তু কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি।” লোকশিল্পী কিরণ দেবশর্মা, সুকদেব শর্মা, ডাকু সরকার তাই গান ছেড়ে পেট চালাতে এখন দিনমজুরি করছেন।

কুশমন্ডির বাসিন্দা এক লোকশিল্পী সৌরভ রায়ের অভিযোগ, “সামনে লোকসভা নির্বাচন। তাই সরকার এখন জেলার দুঃস্থ লোকশিল্পীর একাংশকে সাহায্য করলেন। দেরিতে হলেও নতুন সরকার ভাল কাজে উদ্যোগী হওয়ায় আমরা খুশি।” জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক অনিন্দ্য গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, লোক শিল্পীদের মাসিক ভাতা ছাড়াও ১০টি দলকে বাদ্যযন্ত্র কেনার জন্য ছয় হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। ৭০ জন লোক শিল্পীকে পরিচয় পত্র বিলি করা হয়েছে। অনিন্দ্যবাবু বলেছেন, “তথ্য সংস্কৃতি দফতরের নথিভুক্ত নন, এমন অনেক লোকশিল্পীকে ওই সহায়তার আওতায় আনা যায়নি। আগামী দিনে তাঁদেরও আওতায় আনা হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE