আমের মরসুম। মালদহে আম চাষিদের তৎপরতা। —নিজস্ব চিত্র।
সপ্তাহ খানেক বাদেই জামাই ষষ্ঠী। তাই বাজারে হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ আনতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা। চাহিদা থাকায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বাজারে বিক্রি হয় মালদহ জেলার এই সুস্বাদু আমগুলি। তাই বাড়তি দামের লোভে কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে পেড়ে নিয়েই ক্ষতিকারক কার্বাইডের সাহায্যে জেলার বাগানে বাগানে চলছে আম পাকানোর কাজ। দেদার এই পদ্বতিতে আম পাকানো হলেই নজরদারি নেই জেলার উদ্যান পালন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের।
জেলার আম বিশেষজ্ঞ কমল কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘কার্বাইডের সাহায্যে জেলাতে আম পাকানোর প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। এই কার্বাইড ব্যবহার উন্নত দেশে বন্ধ। কারণ মানব দেহে কার্বাইড খুবই ক্ষতি করে। উদ্যান পালন ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের উচিৎ নিয়মিত জেলার বাগান গুলিতে নজরদারি চালানো। একই সঙ্গে যারা ব্যবহার করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’’
মালদহের আমের কদর রয়েছে দেশ জুড়েই। রাজ্যের বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি দিল্লি, বিহার, ঝাড়খন্ড সহ বহু রাজ্যের বাজারেই দেখা মেলে এই জেলার আমের। প্রতি বছর জেলা থেকে হাজার হাজার মেট্রিক টন আম রফতানি হয় প্রতিবেশি রাজ্যগুলিতে। কিন্তু অভিযোগ, কদর থাকলেও সুনাম হারাচ্ছে মালদহের আম। কারণ বাড়তি দাম পাওয়ার লোভে এই জেলার ব্যবসায়ীরা কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে পেড়ে নিচ্ছে আম। এমনকি আমগুলি পুষ্ট হওয়ার আগেই তা পেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আর কার্বাইডের সাহায্যে কৃত্তিম ভাবে পাকানো হচ্ছে আম।
উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কার্বাইডে অ্যাসিটিলিন গ্যাস থাকে। যার ফলে শরীরে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া কার্বাইডে আর্সেনিকও থাকে বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে বমি, ডায়েরিয়া হতে পারে। বুকে এবং পেটে যন্ত্রণা হতে পারে। একই সঙ্গে কার্বাইড নার্ভের সমস্যাও ডেকে আনে। মানুষের শরীরের যেমন ক্ষতি করে, তেমনই আমের গুণগত মান কমে যায় কার্বাইড ব্যবহারের ফলে। এই বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘কার্বাইডের সাহায্যে আম পাকানোর বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জামাই ষষ্ঠী। আর এই সময়ে আমের ব্যাপক চাহিদা থাকে। যার জন্য আমের বাজার বেশ চড়া। জানা গিয়েছে, গোপাল ভোগ আম ৫০ থেকে ৫৫টাকা, হিমসাগর ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ল্যাংড়া ৫০ খেকে ৫২ টাকা, এবং লক্ষ্মণ ভোগ আম ৩০ খেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে জেলারই খুচরো বাজার গুলিতে। আর পাইকারি বাজারে গোপাল ভোগ ৩৫ টাকা, হিমসাগর ৩০ টাকা, ল্যাংড়া ৩২ টাকা এবং লক্ষণ ভোগ ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখনই এই আমগুলি দেদার পাওয়া যাচ্ছে। যদিও উদ্যান পালন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, মে মাসের শেষ সপ্তাহে গোপাল ভোগ আম পেকে যায়। তবে এখনই বাজার থেকে শেষ হতে চলেছে গোপাল ভোগ আম। এছাড়া জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে হিমসাগার, ল্যাংড়া আম পাকে এবং লক্ষণ ভোগ আম পাকে মাঝামাঝি সময়ে। তবে এখনই বাজারে এই জেলারই আম দেদার বিক্রি হচ্ছে।
জেলার বাগান গুলিতে ঘুরলেই দেখা যাবে গাছ থেকে কাঁচা অবস্থাতেই এই প্রজাতির আম পাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। পুরাতন মালদহের সাহাপুর গিয়ে দেখায় গেল, কার্বাইডের সাহায্যে আম পাকানোর কাজ চলছে। এমনই চিত্র দেখা যাবে জেলার প্রায় সমস্ত বাগানেই।
ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪০ কেজি আম পাকাতে ১৫০ গ্রাম কার্বাইডের প্রয়োজন হয়। একটি বাঁশের ঝুড়িকে ভালো করে কাগজ দিয়ে মোড়ানো হয়। তারপরে কার্বাইড কাগজে মুড়িয়ে ঝুড়ির মাঝে দেওয়া হয়। তার উপরে আম সাজানো হয়। আর তিনদিনের মধ্যে আমের রঙ সবুজ থেকে হয়ে যাবে হলুদ। মিষ্টি কম থাকলেও রঙ হলুদ হয়ে যাওয়ায় চাহিদা থাকবে তুঙ্গে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইথিলিনের সাহায্যেও আম পাকানো যায়। এর জন্য বায়ু নিরোধক ঘর তৈরি করতে হবে। সেই ঘরেই ইথিলিন এমিটার যন্ত্র বসাতে হবে। এর জন্য খরচ হয় প্রায় এক লক্ষ টাকা। তবে এমন ঘর তৈরি করলে ৩৫ শতাংশ ভুর্তুকি দেবে সরকার। জেলা উদ্যান পালন দফতরের সহ অধিকর্তা রাহুল চক্রবতী বলেন, ‘‘কার্বাইড যাতে ব্যবহার না করা হয় তার জন্য আমরা নিয়মিত সচেতনতা মুলক প্রচার চালাই। কারন কার্বাইড শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। কৃত্তিম ভাবে আম পাকাতে হলে ব্যবসায়ীরা সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’’ আম ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘‘আমের ব্যবসায় কখনও লাভ হয়। আবার কখনও লোকসান। তাই বাধ্য হয়েই অধিকাংশ ব্যবসায়ী এই পদ্ধতিতেই আম পাকান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy