Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বিষবৃত্ত/ ১
R G Kar Hospital Incident

জেএনএমেও ছড়িয়ে অভীক-চক্রের শিকড়

প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মীদের ‌একাংশের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছেন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অনেকে, যাঁদের নাম ইতিমধ্যে পরীক্ষা দুর্নীতি থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগে জড়িয়েছে।

স-বধূ অভীক দে-র (সবুজ পাঞ্জাবি-শাড়িতে) সঙ্গে ভোজের আসরে (বাঁ দিক থেকে) জেএনএমের তদানীন্তন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন ছাত্র শুভঙ্কর ঘোষ ও ফিরোজ ই আব্বাস, আর জি করের সিনিয়র রেসি়ডেন্ট (রেডিয়োথেরাপি) সৌরভ পাল এবং শেখ মহম্মদ অখিল। ছবিটি জেএনএম হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত।

স-বধূ অভীক দে-র (সবুজ পাঞ্জাবি-শাড়িতে) সঙ্গে ভোজের আসরে (বাঁ দিক থেকে) জেএনএমের তদানীন্তন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন ছাত্র শুভঙ্কর ঘোষ ও ফিরোজ ই আব্বাস, আর জি করের সিনিয়র রেসি়ডেন্ট (রেডিয়োথেরাপি) সৌরভ পাল এবং শেখ মহম্মদ অখিল। ছবিটি জেএনএম হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত।

সুস্মিত হালদার
কল্যাণী  শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১১
Share: Save:

শুধু আরজি কর নয়। দুর্নীতি, তোলাবাজি এবং ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’-এর ঘুঘুর বাসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কল্যাণী জেএনএমও। সদ্য সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা অভীক দে-র ছত্রচ্ছায়াতেই সেই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে আড়ে-বহরে বেড়েছিল বলে অভিযোগ।

ঘটনাচক্রে, আরজি করে নির্যাতিত ও নিহত স্নাতকোত্তরের ছাত্রীটি নদিয়ার এই মেডিক্যাল কলেজ থেকেই এমবিবিএস পাশ করেছিলেন। আগামী ডিসেম্বরে যাঁর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেই চিকিৎসক-পড়ুয়া এখানেই তাঁর সহপাঠী ছিলেন, বর্তমানে তিনি এই মেডিক্যাল কলেজেরই স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র। কিন্তু তাঁদের মতো সাধারণ পড়ুয়ারা কখনও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি।

প্রথমে আরজি করের অপসারিত অধ্যক্ষ সন্দীপ পালের গ্রেফতারি এবং বৃহস্পতিবার অভীক দে ও বিরূপাক্ষ বিশ্বাস সাসপেন্ড হওয়ার পর কিন্তু অনেকেই সরব হতে শুরু করেছেন। ফলে অনেক ‘অজানা তথ্য’ও সামনে আসছে। জানা যাচ্ছে, কল্যাণীর কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড জেএনএম হসপিটাল-এ অনেক গভীর পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে বর্ধমান মেডিক্যালের রেডিয়োলজি বিভাগের প্রাক্তন আরএমও, এসএসকেএম হাসপাতালে স্নাতকোত্তর পড়ুয়া (আপাতত সাসপেন্ড) অভীক দে-র শিকড়। প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মীদের ‌একাংশের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছেন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অনেকে, যাঁদের নাম ইতিমধ্যে পরীক্ষা দুর্নীতি থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগে জড়িয়েছে।

সম্প্রতি অভীকের বিয়ে সংক্রান্ত একটি ভোজের আসরে তাঁর সঙ্গে কল্যাণীর জেএনএমের তৎকালীন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও শেখ মহম্মদ অখিল-সহ একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রের ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। জেএনএম সূত্রের দাবি, অভীকের সঙ্গে এঁদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স’-এর প্রাক্তন উপাচার্য সুহৃতা পালের হাত ধরেই এঁদের উত্থান। ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র ঘনিষ্ঠ অভীকের ছত্রচ্ছায়ায় কয়েক জন জেএনএমে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। সেই তালিকায় যেমন শেখ অখিল, আলিম বিশ্বাসদের মতো বর্তমান ছাত্রেরা রয়েছেন, তেমনই শুভঙ্কর ঘোষের মতো প্রাক্তনীদের নামও সামনে আসছে। ২০২০ সালে কল্যাণী জেএনএম থেকে এমবিবিএস পাশ করেন শুভঙ্কর ঘোষ। বর্তমানে তিনি হুগলির তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত। জেএনএম সূত্রের দাবি, চার বছর আগে মেডিক্যাল কলেজ ছেড়ে চলে গেলেও শুভঙ্করের প্রভাব এখনও সেখানে অটুট। মূলত তাঁর মাধ্যমেই জেএনএমে কর্তৃত্ব কায়েম রেখেছিলেন অভীক। কলেজের কোনও কিছুই তাঁর পরামর্শ না নিয়ে করা হত না। শুভঙ্করের অনুগামী হিসাবেই প্রতিপত্তিশালী হয়ে ওঠেন বর্তমানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) শেখ অখিল বা ইন্টার্ন আলিম বিশ্বাসেরা। অধ্যক্ষ বা অন্য কর্তারা থাকলেও বকলমে এঁরাই সব কিছু পরিচালনা করতেন বলে জেএনএমের বহু চিকিৎসক-কর্মী-পড়ুয়ার অভিযোগ।

এই চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুললে তার পরিণতি হত মারাত্মক— সে হস্টেলে ঢুকে ছাত্রীকে মারধর হোক বা সুপারকে নানা ভাবে হেনস্থা করা। কয়েক মাস আগেই অখিল-আলিমদের ভয়ে দিনের পর দিন হাসপাতালে ঢুকতে পারেননি তৎকালীন সুপার সৌম্যজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের কাছে তিনি তদানীন্তন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছিলেন তাতেও অখিল, শুভঙ্কর, আলিমদের নাম ছিল বলে জেএনএম সূত্রের দাবি। যদিও সৌম্যজ্যোতি পরে এমন কোনও চিঠি পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন।

অভীক-বৃত্তে নাম জড়ানো সকলেই অবশ্য এখন যাবতীয় অভিযোগ এবং অভীকের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করছেন। শুক্রবার জেএনএমের সদ্য অপসারিত অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভীকের সঙ্গে আমার তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না। বিয়ের মতো ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে কেউ নিমন্ত্রণ করলে তো যেতেই হয়।” শেখ অখিল দাবি করেন, “মেডিক্যাল কাউন্সিলের পেনাল অ্যান্ড এথিক্যাল কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাদে ওঁর সঙ্গে আমার আলাপ। তার বেশি কিছু নয়।” আর শুভঙ্কর ঘোষের দাবি, “অভীক দে টিএমসিপি-র মেডিক্যাল সেলের মুখ্য আহ্বায়ক ছিলেন। আমি ছিলাম সাধারণ সম্পাদক। ফলে সাংগঠনিক যোগাযোগ ছিল ঠিকই, কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়নি।” (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Doctor Rape and Murder JNM Hospital Kalyani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE