বোমার আঘাতে বিছানাময় ভাঙা কাচ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
রণক্ষেত্রের তালিকায় রোজই জুড়ছে নতুন নাম!
শনিবার নিউটাউন-রাজারহাট ও বেলেঘাটায় হাঙ্গামা হয়। রবিবার রাতে বেলেঘাটায় ফের বোমা পড়ে। একই কাণ্ড হয় তিলজলা-বেনিয়াপুকুরেও। সব ঘটনার পিছনেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার গভীর রাতে তিলজলার বেকারিপাড়া কেঁপে ওঠে বোমার শব্দে! বেনিয়াপুকুরে রড-লাঠি-চপার হাতে ভাঙচুর চালাচ্ছে এক দল যুবক। বেলেঘাটার রাজেন্দ্রলাল রোডেও বোমার শব্দে আতঙ্কিত স্থানীয়েরা। তিলজলা ও বেনিয়াপুকুরের ঘটনায় মোট সাত জন গ্রেফতার হয়েছে। বেলেঘাটার ঘটনায় পুলিশ নিজে থেকে ‘সুয়ো মোটো’ দায়ের করেছে।
তিলজলায় বোমাবাজিতে আহত হন দু’জন পুলিশকর্মীও। পরিস্থিতি সামলাতে র্যাফ ও লালবাজার থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স যায়। বসানো হয় পুলিশ পিকেট। সোমবার দুপুরে স্থানীয় এক বৃদ্ধা ভগবতী দেবী বলেন, “দরজার সামনে বোমা পড়েছিল। আতঙ্কে সারারাত ঘুমোতে পারিনি।” বোমার আওয়াজে জানলার কাচ ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন রাজকুমারী সিংহ নামে আর এক বৃদ্ধাও। সোমবারও রাস্তায় পড়েছিল ফাটা বোমার খোল। অভিযোগ, জীবৎ রায় ও টিঙ্কু নামে স্থানীয় দুই যুবকের দলবলের মধ্যে ঝামেলার জেরেই বোমাবাজি।
ডিসি (এসইডি) দেবব্রত দাস বলেন, “তিলজলার ঘটনায় জীবৎ, শিবৎ রায় ও কৈলাস মাহাতো নামে তিন যুবক গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। ১৫টি বোমা মিলেছে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, জীবৎ ও টিঙ্কু দু’পক্ষই তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত। এলাকা দখল ও প্রোমোটিং নিয়ে দু’পক্ষের বিবাদ রয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, স্থানীয় একটি জমি থেকে খাটাল সরিয়ে বহুতল নির্মাণের উদ্দেশ্য রয়েছে। খাটালটির দখল কার থাকবে, তা নিয়েও গোলমাল বেধেছে। লোকসভা ভোটের দিনও বোমাবাজি হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, টিঙ্কুরা স্থানীয় বিধায়ক জাভেদ খানের ঘনিষ্ঠ। তাই এলাকা দখলে পিছিয়ে ছিল জীবতেরা। লোকসভা ভোটের আগে তাদের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতা কিছুটা বাড়ে। জীবতের ভাইপো পরিচয়ে সুরজ রায় নামে এক যুবক বলেন, “ভোটে এখান থেকে বিজেপি অনেক ভোটও পেয়েছে।”
স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান অবশ্য এ সবে তৃণমূলের জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করেননি। তিনি জানান, বেআইনি প্রোমোটিং, এলাকা দখল নিয়ে হাঙ্গামা হয়েছে। জীবৎদের প্রসঙ্গে জাভেদ বলেন, “ওরা সিপিএম ছিল, এখন বিজেপি।” টিঙ্কুদের রাজনৈতিক পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
এ দিকে, বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দারা পরিষ্কার জানান, ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর গুলজার জিয়ার ঘনিষ্ঠ মনজর আলম ও ওয়ার্ড সভাপতি কাইজার জামিলের ঘনিষ্ঠ শেখ বাবরের দলের মধ্যে মারামারি হয়। একে অন্যের উপরে দোষ চাপান গুলজার ও কাইজার। গুলজার বলেন, “কাইজার জামিল তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি হওয়ার পর থেকেই গোলমাল চলছে। ওরাই দলীয় অফিসে ভাঙচুর করেছে।” কাইজার জামিলের পাল্টা দাবি, “কাউন্সিলরের মদতেই মনজর আলম ও তার দল এলাকায় সন্ত্রাস করছে। এটা দলের উপর-মহলে জানাব।”
বেনিয়াপুকুরের ঘটনায় থানার বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে স্থানীয়েরা জানান, থানা থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে গোলমাল হলেও পুলিশ আসেনি। যদিও কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইএসডি) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, “দু’পক্ষই অভিযোগ জানিয়েছে। তার ভিত্তিতেই চার জন গ্রেফতার হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy