ফ্রেমবন্দি: ইফতারের সময়ে নাখোদা মসজিদের সামনে। রবিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
ইদের দিন তাঁরা মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। মসজিদে নমাজ পড়তে পারছেন জুম্মাবারেও। এ বার শহরের বুকে দু’টি বিখ্যাত গ্রেড-১ হেরিটেজভুক্ত মসজিদে পাকাপাকি ভাবে নমাজ পড়ার সুযোগ পেতে চলেছেন মেয়েরা।
মসজিদে মেয়েদের নমাজ পড়ার সুযোগ করে দিতে সম্প্রতি ‘অল বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে ওয়াকফ বোর্ড-সহ কলকাতার দু’টি মসজিদ কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেই চিঠি পেয়ে বিষয়টিতে সম্মতি জানিয়েছেন ধর্মতলার টিপু সুলতান ও নাখোদা মসজিদ কর্তৃপক্ষ। ‘অল বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া সম্প্রতি ওই দুই মসজিদ কমিটির কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে জানান, প্রতিদিন প্রচুর বাইরের লোক নমাজ আদায়ের জন্য আসেন। অনেক বিদেশি মহিলাও আসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজও এমন ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যমণ্ডিত দুই মসজিদে পর্দা বজায় রেখে মেয়েদের নমাজ আদায়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। চিঠিতে তিনি আক্ষেপ করে লিখেছেন, এই ধরনের মসজিদে মেয়েদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকাটা খুব জরুরি। না থাকলে তা লজ্জার ও বিস্ময়ের।
ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ওই চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসেন রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল গনি। চিঠি পাওয়ার পরেই তিনি দুই মসজিদ কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘মুসলিম সমাজে নারী-পুরুষের বিভেদ থাকা অনুচিত। মসজিদে মহিলাদের নমাজ পড়তে কোনও বাধা নেই। মেয়েদের নমাজ পড়ার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে টিপু সুলতান ও নাখোদা মসজিদ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ওঁরাও এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন।’’
এ বিষয়ে ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের মোতায়াল্লি আনোয়ার আলি শাহ বলেন, ‘‘রমজান মাসে টিপু সুলতান মসজিদের ভিতরে মেয়েদের ইফতারের পরে নমাজ পড়ার ব্যবস্থা বছর পাঁচেক আগে থেকে চালু হয়েছে।
এ বার যাতে বছরভর মেয়েরা নমাজ পড়তে পারেন, তার ব্যবস্থা আমরা দ্রুত চালু করতে চাই। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত জায়গাও রয়েছে। এ বিষয়ে মুসলিম মহিলারা আমাদের পরামর্শ দিতে পারেন।’’ টিপু সুলতান মসজিদের সহকারী মোতায়াল্লি শাহিদ আলম বলেন, ‘‘মহিলারা যাতে সারা বছরই এখানে নমাজ পড়তে পারেন, তার ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা আগে থেকেই ছিল। এ বার ওয়াকফ বোর্ড মারফত প্রস্তাব পেয়ে সেই উদ্যোগ দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত করতে চাই।’’ নাখোদা মসজিদের অছি পরিষদের সদস্য নাসের ইব্রাহিমের কথায়, ‘‘ইসলাম নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার দিয়েছে। নাখোদা মসজিদে বাড়তি জায়গা রয়েছে। সেখানে মেয়েদের জন্য আলাদা ভাবে নমাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বীরভূমের মুরারইয়ে ইদে মহিলাদের প্রকাশ্যে নমাজ পড়া শুরু হয় ২০০৫ সালে। মাস চারেক আগে প্রতি জুম্মাবারে (শুক্রবার) মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়া চালু করেছেন বর্ধমান শহরের গোদার মুসলিম মহিলারা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক এশারত আলি মোল্লা বলেন, ‘‘তেলঙ্গানা, কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও কেরলের বেশ কিছু জায়গায় মসজিদে মহিলারা নমাজ পড়ার সুযোগ পান। আমাদের রাজ্যে মুর্শিদাবাদে মসজিদে মেয়েদের নমাজ পড়ার সুযোগ থাকলেও অন্য কোথাও সে ভাবে তার রেওয়াজ নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ ও নাখোদা মসজিদ বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। এই দু’টি মসজিদে মেয়েরা নমাজ পড়ার সুযোগ পেলে নারী-পুরুষ বৈষম্য অনেকটাই ঘুচবে।’’ প্রাক্তন শিক্ষিকা মীরাতুন নাহারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সাধারণ জনমানসে ধারণা রয়েছে, মুসলিম সমাজে মেয়েদের ঘেরাটোপে রাখা হয়। মসজিদে মেয়েরা নমাজ পড়ার সুযোগ পেলে সেই ধারণাটা ভাঙবে। পাশাপাশি, মহিলারাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy