নকল: উদ্ধার হয়েছে এই ভেজাল দুধ। শুক্রবার, বৈঠকখানা রোডে। নিজস্ব চিত্র
একটি বড় পাত্রে জল ঢেলে তাতে মেশানো হচ্ছিল ডিটারজেন্ট। তার সঙ্গে ছিল গুঁড়ো দুধ ও রাসায়নিক। পরে এই মিশ্রণের সঙ্গে গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছিল অ্যারারুট। তৈরি হয়ে যাচ্ছিল ভেজাল দুধ। শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে গরুর দুধ হিসেবে তা পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি বোতলে করে তা যাচ্ছিল কয়েকটি বাড়িতেও। লোকের চোখের আড়ালে দিব্যি চলছিল কারবার। শেষরক্ষা অবশ্য হল না। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি)-র গোয়েন্দারা শিয়ালদহের বৈঠকখানা রোডের একটি বাড়িতে হানা দিয়ে হাতেনাতে গ্রেফতার করলেন ভেজাল দুধ তৈরির চক্রের তিন সদস্যকে।
প্রসঙ্গত, মাস দু’য়েক আগে বড়বাজারে খোঁজ মিলেছিল জাল গুঁড়ো দুধ তৈরির কারখানার। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল নিম্ন মানের গুঁড়ো দুধ ভর্তি প্রচুর বস্তা। জানা গিয়েছিল, ওই গুঁড়ো দুধ আনা হয়েছে হরিয়ানা থেকে। গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছিলেন, তা দিয়ে শহরের একাধিক জায়গায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল দুধ। সেই দুধ শহরের বিভিন্ন দোকানে ক্যানে করে পৌঁছে যাচ্ছে গরুর দুধ হিসেবে। ওই ঘটনার সূত্র ধরেই বৈঠকখানা রোডের বাড়িটির খোঁজ পাওয়া যায়। মাসখানেক ধরে সেখানে নজরদারি চালানো হয়। ওই বাড়িটি এলাকায় গোয়ালা বাড়ি নামে পরিচিত। একতলা ওই বাড়ি জুড়ে চলে দুধের কারবার। বিভিন্ন জায়গা থেকে সেখানে দুধ আনতেন বিক্রেতারা। পরে তা নিয়ে যাওয়া হত শহরের বিভিন্ন দোকানে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা আরও জেনেছেন, ভেজাল দুধ তৈরির চক্রের এই সদস্যেরা কয়েক বছর ধরে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে আসছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দু’জনের নাম ধর্মেন্দ্র রায়। অপর জনের নাম বিন্ধেশ্বর রায়। বাড়ি বিহারে হলেও কলকাতায় কয়েক মাস ধরে ওই ব্যবসা ফেঁদেছিল তারা। শুক্রবার ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক দশ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। ওই বাড়িটি থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সদ্য তৈরি করা ৩২১ লিটার ভেজাল দুধ। এ ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে দুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক, অ্যারারুট এবং ডিটারজেন্ট।
আরও পড়ুন: ভোল বদলাতে নানা পরিকল্পনা শিয়ালদহে
কী ধরনের মিষ্টি তৈরি হয় ওই দুধ দিয়ে?
ধৃতের পুলিশকে জানিয়েছে, ওই ভেজাল দুধ দিয়ে ছানা তৈরি সম্ভব নয়। তাই তা দিয়ে ছানার মিষ্টি করা যায় না। বদলে দুধপুলি, রসমালাইয়ের মতো তরল মিষ্টি তৈরি করা হয়।
ভেজাল দুধের এই চক্রের সন্ধান পাওয়ার আগে ইবি-র গোয়েন্দারা শহরে গত কয়েক মাসে অভিযান চালিয়ে জাল বনস্পতি, ভেজাল ঘি, জাল জল-সহ একাধিক ভেজাল খাদ্য সামগ্রী তৈরির সন্ধান পেয়েছিলেন। গ্রেফতার করা হয়েছিল কয়েক জন অভিযুক্তকে। পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, এই ধরপাকড়ের পরেও শহরের বুকে ভেজাল কারবার যে থেমে নেই, বৃহস্পতিবারের ঘটনা থেকেই তা স্পষ্ট। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ভেজাল দুধের আরও কয়েকটি ডেরার সন্ধান মিলেছে। সেখানেও তল্লাশি
চালানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy