এ ভাবেই বিদ্যুতের খুঁটি থেকে চলছে হুকিং। নিজস্ব চিত্র
ঘিঞ্জি গলিতে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে টানা হয়েছে হুকিংয়ের তার। দলা পাকানো সেই তার বিপজ্জনক ভাবে বাড়ির ছাদের পাশ দিয়ে ঝুলে রয়েছে। গরম পড়তেই তিলজলা, তপসিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আবার পুরোদমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিদ্যুৎ-মাফিয়ারা। ফলে এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা।
তিলজলা, তপসিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি দীর্ঘ দিনের সমস্যা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তিলজলার শিবতলা লেন, তিলজলা মসজিদ বাড়ি লেন, তপসিয়া রোড, কুষ্টিয়া মসজিদ বাড়ি লেন, জি জে খান রোডে সিইএসসি-র বিদ্যুতের তার থেকে হুকিং করে বাড়িতে বাড়িতে আলো, ফ্যান, ফ্রিজ সবই চালানো হচ্ছে। তিলজলা, তপসিয়ায় বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে সিইএসসি
মাটির নীচে কেব্ল পাতার কাজ করছে। তবে তাতেও রক্ষে নেই। কিছু দিন আগে জি জে খান রোডে মাটির নীচের কেব্ল কেটে সেখান থেকেও হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও মূল মাথা পাপ্পুকে এখনও অধরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তিলজলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় এলাকা-ভিত্তিক চক্রেরা সক্রিয়। এই সমস্ত চক্রের মাথারা প্রত্যেকেই দাগি দুষ্কৃতী। যেমন, জি জে খান রোডে বিদ্যুৎ চুরির মূল মাথা পাপ্পু, রমজান ও সানির বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আবার তিলজলার ব্রিকফিল্ড লেনে বিদ্যুৎ চুরির পিছনে পাপ্পা, জয়নাল আবেদিন ওরফে লাল্টু, শেখ সঞ্জু, আকবরের মতো দুষ্কৃতীর নাম পুলিশ জানতে পেরেছে। জি জে খান রোডের মোল্লাপাড়ায় বিদ্যুৎ চুরি চক্রের মূল মাথা হায়দার, বাবুল ও রবি। তাদের পিছনে এলাকার রাজনৈতিক দাদাদের মদত আছে বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ।
ওই সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি রুখতে দীর্ঘ দিন ধরেই সচেষ্ট সিইএসসি-র ইঞ্জিনিয়ারেরা। তাঁরা নানা রকম ব্যবস্থাও নিয়েছেন।
কিন্তু চুরি ঠেকানো যায়নি। সিইএসসি-র কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, হুকিং কিছু কিছু জায়গায় চললেও আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। যাঁদের মিটার নেই, তাঁরা আবেদন করলে এক দিনের মধ্যেই মিটার দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সুরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘মডেল নেটওয়ার্ক’। চলছে সচেতনতা প্রসারের কাজ। বাসিন্দাদের একাংশই এখন সিইএসসি-র পাশে দাঁড়িয়েছে বলে কর্তাদের একাংশ দাবি করেছেন।
চুরির বিষয়টি অবশ্য জাভেদ খান পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তিলজলা, তপসিয়ায় কোথাও হুকিং নেই। এই
সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
তবে এলাকায় ঘুরলে অন্য চিত্রই চোখে পড়ে। শুধু বস্তি এলাকাই নয়, তিলজলার বেআইনি বহুতল বাড়িগুলিতেও হুকিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা পুরসভার ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১১বি, ১১সি তিলজলা শিবতলা লেন। এই ঠিকানায় কমপক্ষে তিরিশটি বেআইনি বহুতল রয়েছে। ওই বহুতলগুলির বেশির ভাগেই যে বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে, তা স্বীকার করেছেন স্থানীয় আরএসপি কাউন্সিলর নিবেদিতা শর্মা। বেআইনি সংযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? কাউন্সিলরের জবাব, ‘‘হুকিংয়ের লাইন কাটার কাজ সিইএসসি-র আর পুলিশের। তারা করবে।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি এখানকার কিছু বাড়িতে সিইএসসি-র কর্মীরা হুকিং কাটতে এসেছিলেন। সামনেই রমজান মাস। তাঁদের বলা হয়েছে, মিটার বসানোর ব্যবস্থা না করলে হুকিং কাটা যাবে না।
দীর্ঘ দিন ধরে বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? ডি সি (সাউথ-ইস্ট) গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে ইতিমধ্যেই তিলজলা, তপসিয়ার বিভিন্ন জায়গায় সিইএসসি-র সঙ্গে কলকাতা পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy