Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিরল রোগের চিকিৎসায় বাবা-মায়েরা খুলছেন ক্লিনিক

সন্তানের চিকিৎসার জন্য বছরে সাত কোটি টাকার ওষুধের সংস্থান তাঁরা করে উঠতে পারেননি। আদৌ কখনও তা সম্ভব হবে কি না সেটাও পুরোপুরি অনিশ্চিত। কিন্তু তাই বলে কি নিজের সন্তানকে একটু একটু করে শেষ হয়ে যেতে দেখবেন?

সপ্তাংশু, রীতেশ, ঋদ্ধিমা ও দেবস্মিতা। এমন আরও অনেকেই এই চিকিৎসার সুযোগের অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র

সপ্তাংশু, রীতেশ, ঋদ্ধিমা ও দেবস্মিতা। এমন আরও অনেকেই এই চিকিৎসার সুযোগের অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০২:০৬
Share: Save:

সন্তানের চিকিৎসার জন্য বছরে সাত কোটি টাকার ওষুধের সংস্থান তাঁরা করে উঠতে পারেননি। আদৌ কখনও তা সম্ভব হবে কি না সেটাও পুরোপুরি অনিশ্চিত। কিন্তু তাই বলে কি নিজের সন্তানকে একটু একটু করে শেষ হয়ে যেতে দেখবেন? এক বার এক ডাক্তারের কাছে, আবার তার পরের দিনই অন্য ডাক্তারের কাছে

রুগ্ন সন্তানকে নিয়ে ছোটাছুটি করে ক্লান্ত বাবা-মায়েরাই এ বার কলকাতায় তাঁদের সন্তানদের চিকিৎসার জন্য ক্লিনিক খুলতে উদ্যোগী হলেন। বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি বা চলতি কথায় এসএমএ-র এই ক্লিনিক এ বার থেকে বসবে প্রতি সপ্তাহে।

জিনঘটিত এই রোগের এত দিন কোনও ওষুধ ছিল না। গত ডিসেম্বরে আমেরিকায় একটা ওষুধ বেরোয় ঠিকই। কিন্তু তার খরচ বিপুল। বছরে সাত কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এখনও পর্যন্ত ওষুধটি এ দেশের বাজারে আসার কোনও সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। আর তাই এক জোট
হয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ওদের বাবা-মায়েরা, ‘‘যে করেই হোক আমাদের সন্তানকে বাঁচান।’’ সেই আবেদনের জবাব এখনও আসেনি। কিন্তু তার আগেই অসুস্থ সন্তানদের একটু স্বাচ্ছন্দ্য দিতে এই ক্লিনিক চালু করলেন তাঁরা। পূর্বাঞ্চলে এসএমএ রোগীদের জন্য এমন ক্লিনিক এই প্রথম হলেও ওঁদের দাবি।

এ রাজ্যে কিছু এসএমএ-তে আক্রান্ত শিশুর বাবা-মায়েরা একটি গোষ্ঠী তৈরি করেছেন। এখনও পর্যন্ত ১০০ জন শিশুর হদিস রয়েছে সেই গ্রুপে। কী ভাবে নতুন ওষুধটি এ দেশে আনার যায়, সেই চেষ্টা শুরু করেছেন ওঁরা। পাশাপাশি, পিয়ারলেস হাসপাতালে খুলছেন ক্লিনিকও।

পিয়ারলেস হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিভাগের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর চিকিৎসক মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই শিশুদের চিকিৎসার নানা ধরনের চাহিদা থাকে। সাধারণ শিশু বিভাগের পাশাপাশি ফুসফুসের অবস্থা নিয়মিত নজরে রাখার জন্য রেসপিরেটরি মেডিসিন, মেরুদণ্ড ও হাড়ের জন্য অর্থোপেডিক, পুষ্টির পরিমাণ ঠিকঠাক রাখার জন্য ডায়েটিশিয়ান ও শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য ফিজিওথেরাপি— সব কিছুরই নিয়মিত দরকার পড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে এই পরিষেবাগুলি পেতে বাবা-মায়েদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এখানে ওঁরা সামগ্রিকভাবে সবটাই পাবেন। ভুক্তভোগী বাবা-মায়েদের উদ্যোগেই এই ব্যবস্থাটা চালু করা সম্ভব হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের ডাক্তাররাই থাকবেন।’’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কোনও শিশুর যদি হাত-পা নাড়াচাড়া করতে বা বসতে অসুবিধা হয়, বার বার সর্দিকাশি লেগেই থাকে, খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা থাকে, তা হলে শিশুর অবশ্যই স্ক্রিনিং করানো জরুরি। মণিদীপাদেবীর কথায়, ‘‘রোগটা এতটাই জটিল যে বাবা-মায়েদের সচেতন হওয়ার উপরেই প্রাথমিক নির্ণয়টা নির্ভর করে। সেটা ওই শিশুদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার জন্য খুব জরুরি।’’

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ৃবাবা-মা দু’জনেই যদি এই জিনের বাহক হন, তা হলে শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে ২৫ শতাংশ। ভ্রূণের বয়স পাঁচ সপ্তাহ পেরোলে বিশেষ স্ক্যানের মাধ্যমে জানা যেতে পারে শিশুটির এসএমএ রয়েছে কি না। সাধারণ ভাবে, জন্মের ছ’মাসের মধ্যে রোগের উপসর্গ দেখা দিলে সেই শিশুরা দু’বছরের বেশি বাঁচে না। ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে ধরা পড়লে বড়জোর কৈশোর উত্তীর্ণ হতে পারে। ধীরে ধীরে হাত-পা, ঘাড়, মেরুদণ্ড,পাচনতন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র, হার্ট অচল হতে শুরু করে।

অন্য বিষয়গুলি:

Spinal Mascular Atrophy Clinic Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE