Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভিক্টোরিয়ার দুয়ারে বিলিতি বিশ্ববিদ্যালয়

ভিক্টোরিয়া বলতে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সংগ্রহশালা। অ্যালবার্ট, এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিক্টোরিয়ার স্বামীর নামাঙ্কিত রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজ়িয়াম। ‘কোম্পানি পেন্টিং’-বলে পরিচিত আঠারো শতকের শেষ দিকে এ দেশের জীবজন্তুর ২১০ খানা জলরঙের ছবির সুবাদেই এমন গাঁটছড়ার দরজা খুলছে।

জন ফ্লেমিংয়ের সংগ্রহের মেছো বেড়াল। নিজস্ব চিত্র

জন ফ্লেমিংয়ের সংগ্রহের মেছো বেড়াল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

‘তিনি’ যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য-প্রাণী, জানা ছিল না বিলেতের এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের। শুনে কী হাসি সকলের! ‘‘মেছো বেড়ালই মিলিয়ে দিচ্ছে রানি ভিক্টোরিয়া ও প্রিন্স অ্যালবার্টকে।’’

ভিক্টোরিয়া বলতে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সংগ্রহশালা। অ্যালবার্ট, এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিক্টোরিয়ার স্বামীর নামাঙ্কিত রয়্যাল অ্যালবার্ট মেমোরিয়াল মিউজ়িয়াম। ‘কোম্পানি পেন্টিং’-বলে পরিচিত আঠারো শতকের শেষ দিকে এ দেশের জীবজন্তুর ২১০ খানা জলরঙের ছবির সুবাদেই এমন গাঁটছড়ার দরজা খুলছে। ন্যাচারাল হিস্ট্রি বা প্রকৃতির পাঠশালায় গুরুত্বপূর্ণ স্মারক— ১৮-১৯ শতকে এ দেশের গাছপালা, জীবজন্তুর ছবির মহার্ঘ সম্ভার রয়েছে দু’টি সংগ্রহশালার ভাঁড়ারে। তাকে ঘিরেই যৌথ উদ্যোগে একটি প্রদর্শনীর জন্য বৃহস্পতিবার সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হল। সই করলেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সচিব-কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত এবং এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর স্টিভ স্মিথ।

সেই উপলক্ষেই মেছো বেড়াল নিয়ে চর্চা! এ দেশের শিল্পীদের আঁকা মেছো বেড়াল, কাক, টুনটুনি, শেয়াল, চিতা, শঙ্খচিলের মতো প্রাণীর ছবিগুলো ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শল্যচিকিৎসক তথা প্রকৃতিপিপাসু সংগ্রাহক জন ফ্লেমিংয়ের জিম্মায়। তা এখন কলকাতার ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের সংগ্রহশালায় রয়েছে। এক্সিটারে অ্যালবার্ট স্মৃতি সংগ্রহশালায় রয়েছে রিচার্ড ক্রেসওয়েলের জড়ো করা একই সময়ের নানা গাছপালার ছবি। ক্রেসওয়েলের স্ত্রী পারিবারিক সূত্রে ফোর্ট উইলিয়মের প্রথম প্রধান বিচারপতি এলিজা ইম্পের স্ত্রীর সংগ্রহ থেকে ছবিগুলি পেয়েছিলেন। ২০২০-র শীতে এই গোটা সংগ্রহ একটি প্রদর্শনীতে দেখার সুযোগ পাবেন শহরবাসী।

এক্সিটারের রয়্যাল অ্যালবার্ট মিউজ়িয়ামের কর্ত্রী হলি মর্গেনরথ, এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক নন্দিনী চট্টোপাধ্যায় এবং ইংরেজি শিক্ষক অ্যান্ড্রু রাডরা বলছিলেন, ব্রিটিশ ভারতে রাজপুরুষদের সংগ্রহে দেশি শিল্পীদের আঁকা ছবি আজকের দুনিয়াতেও প্রকৃতিপিপাসুদের দিশা দিচ্ছে। কিছু কিছু ছবিতে পশুপাখির নাম ফার্সি লিপিতে এবং বাংলায় লেখা। মেছো বেড়ালের বিষয়ে সংগ্রাহক স্মিথ, ছবির পাশে ইংরেজিতে লিখেছেন, ‘খ্যাঁকশেয়ালের আকারের ভয়ানক হিংস্র এই জন্তু ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল! কিন্তু জাহাজের ক্যাপ্টেন সাহস করলেন না!’ বছর দেড়েক আগে ফার্সি দলিল নিয়ে গবেষণার সূত্রে নন্দিনী বিলেত থেকে ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এই গাঁটছড়ার দরজা খোলে।

জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘প্রথম সারির বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আগে এমন কাজ আমরা করিনি।’’ এক্সিটারের ভাইস-চ্যান্সেলর স্টিভ বলছেন, ‘‘ব্রেক্সিট-উত্তর জমানায় ইউরোপের বাইরে নতুন যোগসূত্র খুঁজছে ব্রিটেন। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে নানা সম্ভাবনা দেখছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Painting British Era Victoria Memorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE