Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ক্যাফের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই ওঁদের

মনের রোগ থেকে সেরে ওঠা এমনই ন’জন মহিলাকে নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে কেতাদুরস্ত, পেশাদার ক্যাফেটেরিয়া। এই প্রথম শহরে কোনও ক্যাফে সম্পূর্ণ ভাবে পরিচালনা করবেন তাঁরা। চা-কফি থেকে শুরু করে কেক-প্যাটি-রুটি-বিস্কুট— সব কিছু তৈরি করবেন তাঁরা।

প্রত্যয়ী: ক্যাফে চালাবেন সেরে ওঠা নয় মনোরোগী। নিজস্ব চিত্র

প্রত্যয়ী: ক্যাফে চালাবেন সেরে ওঠা নয় মনোরোগী। নিজস্ব চিত্র

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩১
Share: Save:

অনেকের কাছে তাঁরা ‘অস্বাভাবিক’! দয়া, কিংবা ব্যঙ্গের পাত্রী। তাঁরাই এ বার তথাকথিত সুস্থ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় সম্মানের সঙ্গে জায়গা করে নেওয়ার অন্য লড়াই শুরু করছেন। লড়াইয়ের অস্ত্র বলতে রয়েছে কেক-পেস্ট্রি-কুকির সম্ভার! রসনাতৃপ্তি এবং আতিথেয়তার মাধ্যমে তাঁদের বোঝাতে হবে, বেঁচে থাকার নাম ঘুরে দাঁড়ানো।

মনের রোগ থেকে সেরে ওঠা এমনই ন’জন মহিলাকে নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে কেতাদুরস্ত, পেশাদার ক্যাফেটেরিয়া। এই প্রথম শহরে কোনও ক্যাফে সম্পূর্ণ ভাবে পরিচালনা করবেন তাঁরা। চা-কফি থেকে শুরু করে কেক-প্যাটি-রুটি-বিস্কুট— সব কিছু তৈরি করবেন তাঁরা। পরিবেশনা ও আতিথেয়তার ভারও তাঁদেরই।

এত দিন কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন শহরের বেশ কিছু রেস্তোরাঁয় মূক-বধির বা এইচআইভি পজিটিভদের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। ক্রেতারা তাঁদের সাদরে গ্রহণও করেছেন। কিন্তু মানসিক রোগগ্রস্তদের বিষয়টা একটু আলাদা। অধিকাংশ মানুষের কাছে এঁদের পরিচয়, ‘পাগল’। এঁদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন অনেকেই। এর মধ্যেই, আজ বুধবার আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে চেতলার এই ক্যাফে। এখানেই নিজেদের নতুন করে খুঁজে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন হরিপ্রিয়া, শম্পা, ঝর্ণা, সুষমা, রিঙ্কু, মালতী, সোনামনি, মোনা আর শিবানী।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই পাভলভ মানসিক হাসপাতালে একটি ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে সেরে ওঠা মানসিক রোগীদের নিয়ে। চেতলার এই ক্যাফের পিছনেও এসে দাঁড়িয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের তরফে সর্বাণী দাসরায় বলছিলেন, ‘‘ওঁদের প্রমাণ করতে হবে যে, ওঁরাও পারেন। এটা ওঁদের আত্মবিশ্বাস আর অস্তিত্ব ফেরানোর লড়াই। এই ক্যাফেটেরিয়া থেকে যা আয় হবে, তার ৩০ শতাংশ যাবে ওই মেয়েদের অ্যাকাউন্টে।’’

তৈরি ‘যোদ্ধা’রাও। যেমন পুণের হরিপ্রিয়া। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মামা বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে কলকাতায় আনেন। তার পরে নিউ মার্কেটের সামনে দাঁড় করিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যান। সঙ্গে টাকা-পয়সা নেই, নতুন শহর। আতঙ্কে, দুঃখে মনের স্থিতি হারিয়েছিলেন হরিপ্রিয়া। নিউ মার্কেট থানার পুলিশ তাঁকে আলুথালু হয়ে ঘুরতে দেখে পৌঁছে দিয়েছিল হোমে। কিংবা মোনা, যাঁকে রোজ বেধড়ক মারত স্বামী। মাথায় এক দিন এমন লাগল, যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লেন। সেই মোনা, হরিপ্রিয়ারা বলছেন, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়াবই।’’ মানসিক রোগীদের অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রত্নাবলী রায় বলছিলেন, ‘‘পুনর্বাসন মানে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষটির জীবনের গুণগত মানের উন্নতি। এর জন্য জীবিকা দরকার, যা তাকে আত্মবিশ্বাস দেবে, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা দেবে। কিন্তু সমস্যা হল, আমাদের এখানে সরকারি স্তরেও এঁদের নিয়ে বহু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।’’

তবে সেই ধারণা যে কখনও বদলাবে না এমন মনে করছেন না হরিপ্রিয়ারা। রসনানিবৃত্তি দিয়ে চেষ্টার সূচনাটা করে ফেলেছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Mind Champions Cafeteria Mentally Disabled Chetla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE