জোর যার..: সুনসান রাস্তার এমন ছবি তুলতে গিয়েই পড়তে হল এই সার্জেন্টের নানা প্রশ্নের মুখে। তিনি তুলে রাখলেন আলোকচিত্রী এবং তাঁর সরকারি পরিচয়পত্রের ছবিও। সোমবার, আলিপুরে। নিজস্ব চিত্র
নির্বাচন চলছে গ্রামে-গঞ্জে। শহর একেবারে সুনসান।
সোমবার দুপুরে সেই নিরিবিলি শহরের ছবি তুলতেই বেরিয়েছিলাম। এক যুগ ধরে চিত্র-সাংবাদিকতা করছি। শহর হোক বা শহরতলি— সর্বত্রই ছবি তোলার অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের ছবি সাঁটা সরকারি পরিচয়পত্রও রয়েছে। এ দিন আমার সেই সরকারি পরিচয়পত্র নিয়ে যে হেনস্থা করা হল, তার জন্য কিন্তু প্রস্তুত ছিলাম না।
দুপুর ১টা ৫০ মিনিট। ধর্মতলা, রেড রোড, চিড়িয়াখানা ছাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে কম্যান্ড হাসপাতাল টপকে বেহালার দিকে যাচ্ছিলাম। সামনেই তেরাস্তার মোড়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কলকাতা পুলিশের অনেক কর্মী-অফিসারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শহরের রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশি টহলদারি আছে কি না, তারই ছবি তুলতে বেরিয়েছিলাম। আলিপুরের ওই তেরাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখি, সেখানে কোনও ট্র্যাফিক পুলিশ নেই। হতে পারে, অন্যান্য রাস্তার মতোই সেখানে ট্র্যাফিক কিয়স্ক থেকে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছিলেন কোনও পুলিশকর্মী। তবে, তেরাস্তার ওই মোড় বেশ ফাঁকা। গাড়িও কম।
আমি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে শুরু করি। ফাঁকা রাস্তা— ছবি মূলত তা নিয়েই। ফুটপাতের যে দিকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম,
ট্র্যাফিক কিয়স্কটাও সে দিকে ছিল। দু’-তিনটে ছবি তোলার পরে কিয়স্ক থেকে এক সিভিক ভলান্টিয়ার মুখ বার করে জানতে চান, ‘‘কীসের ছবি তুলছেন?’’ আমি বলি— রাস্তাঘাট ফাঁকা। তা-ই তুলছি।
ছবি তোলা শেষ করে ফেরার সময়ে দেখি, পিছন থেকে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার ডাকছেন। আমি মুখ ঘোরাতেই দেখি, তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশের পোশাক পরা সার্জেন্ট। চোখে অ্যাভিয়েটর। কানে ইয়ারপ্লাগ। বুকে লেখা নাম ‘দেবজিৎ’। আমি তাঁর দিকে ফিরে যেতেই সার্জেন্ট শুধোন, ‘‘কীসের ছবি তুলছেন?’’ তাঁকেও একই উত্তর দেওয়ার পরে অফিসার বললেন, ‘‘কই, আপনার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড (সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র) দেখি।’’ পরিচয়পত্র দেখাতে তিনি সেটি নিজের হাতে নেন। আমি ভাবলাম, দেখে ফেরত দিয়ে দেবেন। কিন্তু, তিনি ফেরত দেননি। আমি বলি— আমার কার্ডটা ফেরত দিন।
সার্জেন্ট আমাকে বলেন, ‘‘দাঁড়ান, উপরতলার সঙ্গে কথা বলে নিই।’’ এ ভাবে কথার পিঠে কথা শুরু হয়। এর মধ্যে অফিসারের হাত থেকে আমি আমার কার্ড নিয়ে নিই। উনি
পাল্টা আমার হাত থেকে সেই কার্ডটি কেড়ে নিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ারকে নির্দেশ দেন, কার্ডের ছবি তুলে নিতে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করি— আমার অপরাধটাই তো বুঝতে
পারছি না! রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলা কি অপরাধ? এত দিন ধরে ছবি
তুলছি, কই এমন তো শুনিনি! আপনি আমায় কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে আমি তা-ও যেতে রাজি। তা ছাড়া, আপনি আমার কার্ডের ছবি তুলছেন কেন?
আমার সে কথায় অবশ্য কর্ণপাত করেননি অফিসার। তখন আমি পাল্টা ওই অফিসারের ছবি তুলতে শুরু করি। উনি আমার কার্ড দিয়েই প্রথমে নিজের মুখ ঢাকার চেষ্টা করেন। পরে অবশ্য বুক চিতিয়ে বলেন, ‘‘ভাল করে তুলুন। আমি চুল ঠিক করে নিচ্ছি।’’ এর পরেও সহজে
ফেরত পাইনি কার্ড। বারবার চাইলে শুধু বলা হয়, ‘‘উপরতলা থেকে নির্দেশ, কার্ডের ছবি তুলে রাখতে হবে।’’ আমি ছবি তোলার সময়ে এক ফাঁকে অফিসার আমার কার্ডটি আমার বুক পকেটে ফেলে দেন।
পুরো বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। ওই জায়গাটি ভবানীপুর ট্র্যাফিক গার্ডের অধীন। এ দিন সন্ধ্যায় ওই ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি সুমন মুখোপাধ্যায় আমাকে ফোন করে প্রথমে ঘটনার কথা জানতে চান। পুরো ঘটনার কথা শুনে তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন। তবু, যে ব্যবহার পুলিশ আজ আমার সঙ্গে করল, তা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy